সাক্ষাতকারঃ অতীত অভিজ্ঞতায় সংলাপে যাইনি, পরিবেশ না হলে নির্বাচনে যাবো না’-রেজাউল করীম


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ২৫, ২০২২, ৮:০৫ পূর্বাহ্ণ /
সাক্ষাতকারঃ  অতীত অভিজ্ঞতায় সংলাপে যাইনি, পরিবেশ না হলে নির্বাচনে যাবো না’-রেজাউল করীম

চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। একজন ইসলামী পণ্ডিত, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও ধর্মীয় আলোচক। পিতা সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করীমের মৃত্যুর পর ২০০৬ সাল থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীরের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি ও বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ডের সভাপতি এবং বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ-সভাপতি তিনি।

দুই মেয়াদে ছিলেন চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। শিক্ষাজীবন শেষে চরমোনাই জামিয়া রশিদিয়া ইসলামিয়ার আলিয়া শাখার শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে দীর্ঘদিন আলিয়া ও কওমি উভয় শাখার সহকারী অধ্যক্ষ ছিলেন। ২০০৩ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ২ মেয়াদে চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রেজাউল করীম। ছাত্রজীবন থেকে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় কমিটির ছাত্র কল্যাণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, আগামীর আন্দোলন সংগ্রাম, নিজ দল ইসলামী আন্দোলনের সাংগঠনিক অবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে মিডিয়ার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।

প্রশ্নঃ নির্বাচন কমিশনের চলমান সংলাপে অংশ নিচ্ছে না কেন ইসলামী আন্দোলন?

রেজাউল করীম: নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রেসিডেন্ট যে সংলাপে ডেকেছিলেন তখন আমরা আন্তরিকভাবেই মনে করেছিলাম দেশ, জাতি এবং জনগণের জন্য কল্যাণকর হবে। তাই সেই সংলাপে উপস্থিত হয়ে দেশ এবং জনগণের জন্য কল্যাণমূলক যে আলোচনাগুলো সেগুলো আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবেই করেছিলাম। কিন্তু বিগত দিনে আমরা হতাশ হয়েছি, কারণ প্রেসিডেন্টসহ ইসি আমাদের আলোচনার মূল্য না দিয়ে তারা তাদের মতোই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাদের কাছে যাওয়ার পরে আমরা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর কিছু আশা করছি না। তাই আমরা বলেছি, আমাদের পেশ করা পরামর্শ এবং সংবিধান অনুযায়ী যদি আপনারা ইসি গঠন না করেন তাহলে সেই ইসির ব্যাপারে আমরা সমর্থন জানাতে পারি না। আর ইসির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়া দলগুলোর কথায় আমরা যেটা লক্ষ্য করেছি, এই ইসির মাধ্যমে একটা সুন্দর এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হবে সেটা আশা করা যায় না। আর এটা দেশ জাতি এবং জনগণের জন্য কল্যাণকর হবে মনে করেই ইসির সংলাপে যাচ্ছি না।

প্রশ্নঃ আপনারা বিভিন্ন সময়ে বর্তমান সরকারের পতন দাবি করছেন। আপনারা সরকারের পতন চান কেন?

রেজাউল করীম: আমরা আগেই বলেছি, সরকারের নির্বাচনের যে পদ্ধতি সেটা তারা মাঠে ময়দানে বাস্তবায়ন করে আমাদের দেখিয়েছে যে, জনগণের ভোটে তারা নির্বাচিত হয়নি। অনেকটাই ক্ষমতার বলেই নির্বাচিত হয়েছে। যদি স্বচ্ছ, সুষ্ঠুভাবে জনগণ তাদের ভোটাধিকার গণতান্ত্রিকভাবে প্রয়োগ করতে না পারে তাহলে আমরা তাকে বৈধ সরকার বলতে পারি না। তাই আমরা এই সরকারকে বলছি, দেশে যদি ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ না তৈরি করতে পারেন তাহলে তাদের ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করার অধিকার নেই।

প্রশ্নঃ সরকার যদি ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনের আয়োজন করে আপনারা সেই নির্বাচনে অংশ নিবেন কি-না?

রেজাউল করীম: দেশে যদি ভোটের পরিবেশ তৈরি না হয় তাহলে তো আমাদের সেই নির্বাচনে যাওয়ার মতো পরিবেশ থাকবে না। আর সেই নির্বাচনে অংশ নেবো না বলেই আমরা একটা আলোচনা করে আসছি। যদি পরিবেশ তৈরি হয় তাহলে দলের পরামর্শক্রমে আমরা সেই নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।

প্রশ্নঃ বিএনপি ইতিমধ্যে নির্বাচন পরবর্তী জাতীয় সরকারের একটি ফর্মূলা দিয়েছে। বিষয়টি কীভাবে দেখেন?

রেজাউল করীম: বিএনপি তাদের চিন্তা ধারায় দলের কার্যক্রম পরিচালনা করে। এখন তারা আসলে কীভাবে কী করতে পারবে, না পারবে সেটা আমরা দেখার পরে বলতে পারবো। তবে এখনো আমাদের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার নয় যে তারা কীভাবে কী করতে চায়। তাই আমরা তাদের গতিবিধি এবং তাদের কার্যক্রম লক্ষ্য করছি।

প্রশ্নঃ আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছে বিএনপি। আপনাদের আমন্ত্রণ জানানো হলে তাতে সাড়া দিবেন কি?

রেজাউল করীম: আমাদেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, সমমনা যে ইসলামী দলগুলো রয়েছে যারা দেশ, জাতি এবং ইসলামের জন্য কাজ করে তাদের সঙ্গে আমরা সংলাপ করবো। তাদের সঙ্গে এক হয়ে জোটবদ্ধভাবে কাজ করবো।

প্রশ্নঃ বিএনপি তাদের নির্বাচনী জোটে ডাকলে যাবেন কি-না?

রেজাউল করীম: আমরা আগেও বলেছি বিএনপিসহ অন্যান্য যারা আছে বিশেষ করে, স্বাধীনতার পরে যারা দেশ পরিচালনা করেছিল তাদের মাধ্যমে ইসলাম এবং জনগণের কোনো কল্যাণ আমরা লক্ষ্য করিনি। আর তারা যদি আমাদের ডাকে তাহলে আমরা পরামর্শ করবো কোন উদ্দেশ্যে তারা আমাদের ডেকেছে। এবং তাদের সঙ্গে আলোচনার বিষয় কী হবে সেটা আমরা আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবো।

প্রশ্নঃ সরকার বা প্রেসিডেন্ট যদি কোনো রাজনৈতিক সংলাপের আয়োজন করে সেখানে অংশ নেবেন কি?

রেজাউল করীম: প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে কিছুদিন আগে আমাদের সংলাপে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু কেন আমরা সেই সংলাপে অংশ নেইনি সেটা জাতির সামনে তুলে ধরেছি। আর পরিবেশ যদি একই রকম থাকে তাহলে আমাদের ডাকলে তেমনই উত্তর দিবো।

প্রশ্নঃ মাঠের বিরোধী দলগুলো সব সময় গণআন্দোলনের কথা বলে। এটা আপনাদের ভাবনায় আছে কি-না?

রেজাউল করীম: গণআন্দোলন বলতে তারা যেটা বলতে চায়, এই সরকারের পতন ঘটাবে এবং জনগণের চাহিদা অনুযায়ী একটা সরকার গঠন করবে। তাদের ওই গণআন্দোলনের বিষয়টি আমাদের কাছে এখনো আস্থা অর্জন করতে পারেনি এবং এটাকে আমরা ওইভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি না। বিগত দিনে আমরা দেখেছি, বিভিন্ন আন্দোলনের সময় যেভাবে জনগণের সামনে প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পরে তাদের কার্যক্রম অনেকটাই উল্টা হয়।

প্রশ্নঃ তাহলে আপনাদের চাওয়াটা কি?

রেজাউল করীম: আমরা রাজনীতি করি জনগণের কল্যাণের জন্যে। আর বিগত দিনে যারা ক্ষমতায় গিয়েছে তারা জনগণের জন্য কিছু করেছে, সেটা আমরা দেখিনি। আমরা মনে করি, ইসলাম ছাড়া বিকল্প ধারায় জনগণের কল্যাণ কখনো বয়ে আসেনি। আমরা চাইছি এই নীতি আদর্শের মাধ্যমে জনগণের কল্যাণকর কাজ করা। আমরা মাঠে যে আদর্শ নিয়ে কাজ করছি এবং মানুষকে সেটা বুঝাতে চেষ্টা করছি। আর দিন দিন লক্ষ্য করেছি আমাদের যে চিন্তা-ভাবনা এর অনেকটাই জনগণ গ্রহণ করেছে।

প্রশ্নঃ আপনি বলেছেন, জোটবদ্ধভাবে কাজ করতে ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবেন। সেক্ষেত্রে জামায়াতের সঙ্গে কোনো সংলাপ করবেন কি-না?

রেজাউল করীম: আমরা বলেছি সমমনা ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ বা বৈঠক করবো এবং তাদের সঙ্গে ঐক্য তৈরি করার চেষ্টা করবো। একসঙ্গে আমরা কাজ করবো।

প্রশ্নঃ অনেকেই বলেন দেশে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। আসলেই দেশ অর্থনৈতিক সংকটে আছে?

রেজাউল করীম: হ্যাঁ, এমন সংকট আমরা লক্ষ্য করেছি। বর্তমানে সরকারের সঙ্গে যারাই ক্ষমতায় আছে বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য যে সকল আমলা রয়েছে তারা কিন্তু দেশের টাকা পাচার করে বিভিন্ন দেশে বেগমপাড়া তৈরি করেছে। এগুলো দেশের অর্থনীতির জন্য অনেকটাই ঝুঁকি। যেভাবে বিভিন্ন কায়দায় লুটপাট হচ্ছে এতে করে আমাদের ভয় হয়, ভবিষ্যতে দেশে অশান্তি হতে পারে। তবে আমরা দেশ এবং দেশের জনগণের কল্যাণই চাই। আমরা চাই বাংলাদেশ যেনো ওই অবস্থায় না পড়ে।

প্রশ্নঃ এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের প্রতি আপনার পরামর্শ কি?

রেজাউল করীম: আমরা বলেছি, সরকারকে আন্তরিক হতে হবে এবং তারা ক্ষমতালোভী না হয়ে যদি দেশপ্রেমিক হয় তাহলে এই সংকট উত্তরণ সম্ভব।