

খুলনায় একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। ২০১৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকারপ্রধান এতে সম্মতি দেন। নাম দেওয়া হয় ‘শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা’। এর পর সংসদে আইন পাস, উপাচার্য নিয়োগ ও স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য এক হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়।
এরই মধ্যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে স্থবির হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। এক পর্যায়ে খুলনায় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা ও যৌক্তিকতা জানতে চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নামের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ই অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে।
ওই সময় খুলনার বিভিন্ন সংগঠন ও নাগরিক নেতাদের তৎপরতায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পক্ষে মত দেয় স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। গত ১৩ এপ্রিল অধ্যাদেশ জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন ও নতুন নামকরণ হয় ‘খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’।
গত ২৭ অক্টোবর প্রকল্পের সরকারি অনুমোদনপত্র জারি করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে একনেকে অনুমোদনের ১৭ মাস পর বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পে আলো ফুটেছে। চলতি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৫০ একর জমি অধিগ্রহণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করতে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ভূমি উন্নয়নের দরপত্র তৈরির জন্য গণপূর্ত বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের জন্য প্রস্তাবনাও পাঠানো হয়েছে। সব মিলিয়ে জটিলতা কাটিয়ে নবযাত্রা শুরু হয়েছে খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আপাতত আটটি অনুষদ থাকবে।
এগুলো হচ্ছেু মেডিসিন, সার্জারি, বেসিক সায়েন্স ও প্যারাক্লিনিক্যাল সায়েন্স, ডেন্টাল, নার্সিং, বায়োটেকনোলজি ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল টেকনোলজি ও প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন অনুষদ। সঙ্গে থাকবে বিশ্বমানের একটি হাসপাতাল। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকের সঙ্গে স্নাতকোত্তর এমডি, এমএস, এমফিল থাকবে। বর্তমানে সরকারি খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা ও মাগুরা মেডিকেল কলেজ, চারটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং পাঁচটি নার্সিং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়েছে। ২০২১ সালের ১ নভেম্বর নগরীর নিরালা আবাসিক এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এস এম আবু নাসের ফারুক বলেন, ‘শুরু থেকেই বটিয়াঘাটা উপজেলার লবণচর থানার পাশে ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য ৫০ একর জমি চূড়ান্ত করা হয়। সেখানেই স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ হবে। এ জন্য ২০২৪ সালের ৯ মে একনেকে এক হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন পায়। গত ২৭ অক্টোবর জিও (সরকারি অনুমোদনপত্র) হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করেছি।’ মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী, প্রকল্পে ৫০ একর জমির মধ্যে সাড়ে ১৪ একরে স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। প্রায় ৯ একর সড়ক, ৪ দশমিক ৯১ একর জায়গায় পায়ে চলার পথ, ১ দশমিক ৩৬ একর জলাশয় এবং ২০ একরজুড়ে সবুজায়ন করা হবে। প্রকল্প বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মোট ব্যয়ের ২৭ ভাগ জমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়নে। ৫০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য ৪৮২ কোটি টাকা এবং ভূমি উন্নয়নের জন্য ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
প্রথম পর্যায়ে ১১ তলা ডে সার্জারি ভবন (দিনের মধ্যে অস্ত্রোপচার শেষ হবে) কাম একাডেমিক ভবন, সাত তলা ইউটিলিটি কমপ্লেক্স এবং ১৪ তলা ডরমিটরি ভবন, ১২ তলা প্রশাসসিক ভবন, ১১ তলা একাডেমিক ভবনসহ অন্যান্য স্থাপনা এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে বিশ্বমানের হাসপাতালসহ অন্যান্য ভবন হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘সবার প্রচেষ্টায় পর প্রকল্পের জটিলতা দূর হয়েছে। আমরা দ্রুত কাজ শুরুর পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
আপনার মতামত লিখুন :