আপনাদের এখন যাওয়ার সময় হয়েছে আর ঘুরাঘুরি করে লাভ নাই-মির্জা ফখরুল


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : মে ২৮, ২০২৪, ৪:১০ অপরাহ্ণ /
আপনাদের এখন যাওয়ার সময় হয়েছে আর ঘুরাঘুরি করে লাভ নাই-মির্জা ফখরুল

সরকারের সময় শেষ হয়ে গেছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকারের চতুর্দিকে শুধু দুর্নীতি আর দুর্নীতি। এ সময় তিনি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ এবং পুলিশের আইজি বেনজির আহমেদের দুর্নীতি প্রসঙ্গ টেনে বলেন, উনার তো পদত্যাগ করা উচিত। আমি বলব- আপনারা অনেক ঘুরাঘুরি করেছেন। আপনাদের এখন যাওয়ার সময় হয়েছে। আর ঘুরাঘুরি করে লাভ নাই। মানুষ যেন মনে রাখে নিজেদের দাফন কাফন যেন সুন্দর হয় সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেন। মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

“মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ভূমিকা ও তালাবিহীন ঝুড়ি থেকে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তার অনন্য অবদান” শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল। মুক্তিযোদ্ধা দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রকৌশলী নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো. আব্দুস সালাম, এডভোকেট ফজলুর রহমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মুজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৪৩ তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা হয়।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে আমরা ঘরে থাকতে পারিনি। সকলে রাস্তায় নেমে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। তিনি ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর আবারো দেশের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। খুব অল্প মধ্যে সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি অভূতপূর্ব উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছিলেন। তিনি আমাদেরকে নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। মৃতপ্রায় জাতিকে তিনি স্বপ্ন দেখিয়ে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তিনি সততার পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন। তিনি সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশকে তলাবিহিন ঝুরি থেকে সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত করেছিলেন।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান সাহেব আমাদেরকে একটি নতুন ভূখণ্ড এবং নতুন একটি জাতিসত্তা দিয়েছেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্থপতি। এ সময় ঘূর্ণিঝড় রেমালে নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানন। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনের রাফা সীমান্তে ইসরাইলের বর্বর হামলায় নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর এ দেশের সাধারণ মানুষের ওপর নিপীড়ন নেমে এসেছিল। রক্ষী বাহিনী দিয়ে হত্যা ও ঘুম নির্যাতন চালানো হয়েছিল। দেশের সকল গণমাধ্যমকে বন্ধ করে দিয়ে কেবল চারটি বাদে ১১ মিনিটের মধ্যে দেশে বাকশাল কায়েম করা হয়েছিল। যারা বিরোধিতা করেছিল সেদিন প্রায় ৩০ হাজার যুবক তরুণকে হত্যা করা হয়েছিল। অথচ আজকে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। অথচ মানুষ কিন্তু সব জানে এবং বোঝে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের লড়াই সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হলে শহীদ জিয়াকে অনুসরণ করতে হবে। তার ১৯ দফাকে অনুধাবন করতে হবে। আমরা চলমান লড়াইয়ে পরাজিত হলে দেশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। বাংলাদেশের সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম একটি বইয়ের মুখবন্ধে লিখেছেন কারণ বাইরে আছে জিয়াউর রহমান যদি ১৯৮১ সালের নিহত না হয়ে ৭৫ সালে নিহত হতেন তাহলে বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতো। হয়তো আফগানিস্তান না হলে অন্য কোনো রাষ্ট্র। এ সময় স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অবৈতনিক শিক্ষাসহ দেশের অনেক উন্নয়নে জিয়াউর রহমানের অবদানের কথা তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, এখন এই সরকারের একটাই লক্ষ্য সেটা হলো লুট করা। তাদের চামড়া মোটা হয়ে গেছে। কোনো কথা তাদের কানে যাচ্ছে না। আজকে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য এই সরকার ক্ষমতায় এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, আজকের জেনারেল আজিজ এবং বেনাজীর আহমেদ কাদের সৃষ্টি? উনার তো পদত্যাগ করা উচিত। চতুর্দিকে তাদের দুর্নীতির খবর বেরিয়ে আসছে। শুধু ঢাকা শহরে না মফস্বল শহরে ও তাদের দুর্নীতির খবর বেড়িয়েছে। দুর্নীতির টাকার ভারে তাদের মারা পড়ার অবস্থা হয়েছে। সাবেক একজন ভুমি প্রতিমন্ত্রীর লন্ডনে নাকি তার তিন শতাধিক বাড়ি রয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, যারা দেশকে ভালোবাসেন আজকে তাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের আন্দোলন বহাল থাকবে এবং এটা তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমান। আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কিন্তু কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেন নাই। আমাদের হারানোর কিছু নাই।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন,আওয়ামী লীগ যখনই এদেশের ক্ষমতায় গেছে তখনই দেশে গণতন্ত্র হত্যা ও লুটপাট হয়েছে। তখনই দেশের মানুষ আতঙ্কিত হয়েছে। শুধু তাই না দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়েছে। আসুন আমরা এই দানব সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলি। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক মো. আব্দুস সালাম বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। কিন্তু বর্তমান অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণকে একটি ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আসলে মাথায় পচন ধরেছে। এই সরকার হলো চোর এজন্য চোরের মায়ের বড় বড় গলা। এখন তাদের চুরি যেন প্রকাশ না হয় সেজন্য খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অব্যাহত রেখেছে।

সরকার টাকা লোপাট করে দেশ চালাতে পারতেছে না সেদিকে নজর নেই আর এখন আছে তারা তারেক রহমানকে দেশে শাস্তি কার্যকর করা নিয়ে। আমি বলব- যদি নিজেকে রক্ষা করতে চান তাহলে অবিলম্বে পদত্যাগ করে জনগণের হাতে ক্ষমতা দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনা করুন।