আল্ট্রাভিশন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দেয়া হয় নকল প্যাথলজি টেস্টের রিপোর্ট!


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুন ২৯, ২০২২, ৮:৩৭ পূর্বাহ্ণ /
আল্ট্রাভিশন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দেয়া হয় নকল প্যাথলজি টেস্টের রিপোর্ট!

জেলা অফিসঃ ডাক্তার ছাড়াই দেয়া হয় প্যাথলজি টেস্টের রিপোর্ট !সনোলজিস্ট ছাড়াই আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ডাক্তার ছাড়াই দেয়া হয় প্যাথলজি পরীক্ষার রিপোর্ট। কম্পিউটারে সাজানো থাকে রিপোর্টের পাতা। রোগীর তথ্য টাইপ করে প্রিন্ট দিলেই বেরিয়ে আসে নানা ধরনের পরীক্ষার রিপোর্ট। নকল করা হয় ডাক্তারের স্বাক্ষর। এমন ভুয়া রিপোর্টের ভিত্তিতেই চিকিৎসা চলে রোগীর। আর চিকিৎসকরাও চালিয়ে যান তাদের চিকিৎসা কার্যক্রম।

এভাবে অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন অনেক রোগী। দীর্ঘদিন এমন প্রতারণা করে আসছে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সামনে অবস্থিত আল্ট্রাভিশন ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

মনিরা বেগম নামে এক নারী জানান, তার মেয়ে মরিয়ম (১০)। গত পহেলা জুন আল্ট্রাভিশন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তার সাজ্জাদ হোসেনকে দেখান। ওইসময় ডাক্তার তার মেয়েকে আল্ট্রাসনোগ্রাফিসহ রক্তের চার-পাঁচটি পরীক্ষা নিরীক্ষা দেন। ২৭ জুন আবারও আসেন ডাক্তার দেখাতে। এদিনও ডাক্তার রোগী দেখে দু’টি টেস্ট করাতে বলেন।

মরিয়মের পূর্বের আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও টেস্টে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হিসেবে আশাদুল ইসলাম সুজন নামে এক যুবকের স্বাক্ষরে রিপোর্ট দেয়া হয়। অথচ আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে অবশ্যই একজন সনোলজিস্ট ডাক্তার ও পরীক্ষা নিরীক্ষার কাগজপত্রে প্যাথলজি ডাক্তারের স্বাক্ষর থাকতে হবে।

যদি কোনো কারণে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে এ বিভাগের ডাক্তার অনুপস্থিত থাকেন তাহলে কমপক্ষে একজন মেডিকেল অফিসারের স্বাক্ষর থাকতে হবে।

এ প্রতিষ্ঠানের প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ ডাক্তার আব্দুল আওয়াল। যাকে নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্ক। কারণ তিনি একাই একই সময়ে ১০ প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে, অসীম ডায়াগনস্টিক সেন্টার, স্ক্যান, কমটেক, দেশ, ইবনে সিনা, জনতা, সিটি ও ন্যাশনাল প্যাথলজি এন্ড হরমোন কেয়ার সেন্টার।

তবে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নাম থাকলেও সবগুলোতে বসেন না বলে দাবি করেছেন আব্দুল আওয়াল।
ডাক্তার ছাড়াই দেয়া হয় প্যাথলজি টেস্টের রিপোর্ট !সূত্র জানায়, আল্ট্রাভিশন ডায়াগনস্টিক সেন্টার দালাল নির্ভর প্রতিষ্ঠান।

প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল চত্বর থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে আসছে মোটা সুমন, ঘেনা, তছির উদ্দিন, হিটু, হাসুসহ ১২-১৫ জন। এখানে প্রতারণার ফাঁদ পেতে পরীক্ষা নিরীক্ষাসহ নানা অজুহাতে রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে হাজার হাজার টাকা।

হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারের সামনে থেকে শুরু করে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের গেট পর্যন্ত পোষ্য দালালের বিচরণ। দালাল একজন আরেকজনের হাতে রোগী তুলে দেয়। দালালরা রোগী ও স্বজনদের বলে থাকে আল্ট্রাভিশন হাসপাতালের বহির্বিভাগের একটি অংশ। সেখানে ডাক্তার রোগী দেখছেন। রোগীরা দালালদের কথা বিশ্বাস করে সেখানে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক জানান, জেলায় প্যাথলজি বিভাগের ডাক্তারের সংকট রয়েছে। তবে, পরীক্ষা নিরীক্ষা পত্রে কমপক্ষে একজন মেডিকেল অফিসারের সিল ও স্বাক্ষর থাকতে হবে। আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট ছাড়তে হলে অবশ্যই একজন সনোলজিস্ট ডাক্তারের স্বাক্ষর থাকতে হবে।

শুধুমাত্র কোনো ল্যাব টেকনিশিয়ান বা টেকনিশিয়ানের স্বাক্ষরে কোনো রিপোর্ট ছাড়ার সুযোগ নেই। রোগীর সাথে যারা এমন প্রতারণা করছে তাদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযান অব্যাহত আছে।