আ.লীগ নেতা সভাপতি হয়েই তিনজনকে পেটালেন


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুন ২৪, ২০২২, ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ /
আ.লীগ নেতা সভাপতি হয়েই তিনজনকে পেটালেন

রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির বিরুদ্ধে দলের এক নেতা ও তাঁর বাবাকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বুধবার রাতে পারিলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। বাবা-ছেলেকে রক্ষায় এগিয়ে এসে ছাত্রলীগের এক নেতাও হামলার শিকার হন। ওই হামলায় আহত তিনজন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

আহত ব্যক্তিরা হলেন রাজশাহী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতাবিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ গালিব, তাঁর বাবা হেলাল উদ্দিন এবং পবা উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি জহুরুল ইসলাম।

হেলাল উদ্দিন আওয়ামী লীগের একজন প্রবীণ নেতা। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে তিনি পারিলা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বপালন করেন।

টানা ১৩ বছর সভাপতি ছিলেন তিনি। আর আসাদুল্লাহ গালিব রাজশাহী থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকার অনলাইন সংস্করণের সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন।

হামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরিদ হোসেন বলেন, তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। আইনি ব্যবস্থা নেবেন।

ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, ঘটনার মাত্র তিন দিন আগেই সোহরাব আলী মণ্ডল পারিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। আগের মেয়াদেও তিনি সভাপতি ছিলেন।

গত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থনকারী এ নেতা যাতে পুনরায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি না হতে পারেন, সে জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন।

পত্রপত্রিকায় তাঁর বিরুদ্ধে সংবাদও প্রকাশিত হয়। এই ক্ষোভে বুধবার রাতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতাবিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ গালিব ও তাঁর বাবা হেলাল উদ্দিনের ওপর দলবল নিয়ে হামলা চালান তিনি।

সম্মেলনের আগে ৯৫ নেতা-কর্মী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগে সোহরাব আলীসহ ২৪ জন নেতার নাম উল্লেখ করে বলা হয়, নির্বাচনে তাঁরা নৌকার বিরোধিতা করেছেন।

হামলার শিকার আসাদুল্লাহ গালিব বলেন, সোহরাবের বিপক্ষে সংবাদ প্রকাশ করায় তিনি ক্ষুব্ধ হন। বুধবার রাতে তিনি পারিলা বাজারে ছিলেন। তখন সোহরাবের ভাই আসাদুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম ও ছেলে মাহাতি মাহাফুজ তাঁকে জোর করে বাজারে অবস্থিত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে নিয়ে যান।

তাঁরা সবাই তাঁকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। সোহরাব আলী এ সময় চিৎকার করে গালিবকে বলেন, ‘তোর লিটন (রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র) বাপের কাছে অভিযোগ করিস, এখন তোর বাপকে বল, তোকে বাঁচাতে।’ খবর পেয়ে তাঁকে রক্ষায় আসেন তাঁর বাবা হেলাল উদ্দিন।

এ সময় তাঁকেও মারধর করা হয়। পবা উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি জহুরুল ইসলাম তাঁদের রক্ষার চেষ্টা করলে তাঁকেও মারধর করা হয়। পরে তাঁরা তিনজন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান ভুক্তভোগী আসাদুল্লাহ গালিব।

১৯ জুন পারিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। ওই ইউপির নির্বাচনে পরপর দুবার নৌকা নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হওয়া প্রার্থী ও ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফাহিমা বেগম ওই সম্মেলনের আগে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, পরপর দুবার নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে কাজ করেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহরাব আলী।

বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে তাঁর কাজ করা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া আগের কমিটির সহসভাপতি মো. আলাউদ্দিনসহ ৯৫ নেতা-কর্মী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগও দেন।

ওই অভিযোগে সোহরাব আলীসহ ২৪ জন নেতার নাম উল্লেখ করে বলা হয়, নির্বাচনে তাঁরা নৌকার বিরোধিতা করেছেন। এর অনুলিপি দেওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘গালিব আমার গ্রামের ছোট ভাই, দলের ছেলে। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে সব উদ্ভট নিউজ করে। এ নিয়ে হাতাহাতি ও মারামারি হয়েছে। মিথ্যা বলব না। আমি যাওয়ার পর থামিয়ে দিয়েছি।’

তিনি গত নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিরোধিতা করার কথা অস্বীকার করেন। গত ২৭ ডিসেম্বর তাঁর বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে একটি প্রতিবেদনের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলে তিনি আর কোনো কথা বলেননি।

জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলী বলেন, হামলার ঘটনা সম্পর্কে তিনি জানেন না। আর সোহরাব আলীর বিরুদ্ধে নৌকার বিরোধিতা করার অভিযোগ হলে তদন্ত করা হয়েছিল। এতে তিনি নৌকার বিপক্ষে কাউকে ভোট দিতে বলেছেন, তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।