ইসলামে খাবার গ্রহণের সুন্নাত পদ্ধতি


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ২৬, ২০২২, ৭:৪৪ পূর্বাহ্ণ /
ইসলামে খাবার গ্রহণের সুন্নাত পদ্ধতি

জীবনের প্রতিটি বিষয়ের মতো খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রেও রাসূল সা:-এর সুন্নত রয়েছে। রাসূল সা: কিভাবে খাবার খেতেন ও খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে তার সুন্নত কী- এসবই আমাদের জন্য আদর্শ। আল্লাহর রাসূল সা: মানবতার জন্য সর্বোত্তম আদর্শ রেখে গেছেন। তাঁর আদর্শ অবলম্বন ও বাস্তবায়নের মধ্যে আমাদের জন্য দুনিয়া-আখিরাতের কল্যাণ ও সাফল্য নিহিত। এখানে খাওয়ার সুন্নাত পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো-

ডান হাত দিয়ে খাওয়া
আল্লাহর রাসূল সা: সারাজীবন ডান হাত দিয়ে খাবার খেয়েছেন। ডান দিয়ে খেতে আদেশ দিয়েছেন এবং বাম হাতে খেতে নিষেধ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘তোমরা বাম হাত দ্বারা খাবার খেয়ো না ও পান করো না। কেননা, শয়তান বাম হাতে খায় ও পান করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩৭৬, মুসলিম, হাদিস : ২০২২)

বিসমিল্লাহ পড়তে ভুলে গেলে
খাবার খাওয়া শুরু করার আগে বিসমিল্লাহ পড়া সুন্নত। কিন্তু কেউ যদি ভুলক্রমে বিসমিল্লাহ পড়া ছাড়া খাবার খেতে শুরু করেন, তাহলে তার করণীয় কী? আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘যখন তোমরা খানা খেতে শুরু করো তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করো। আর যদি আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যাও, তাহলে বলো, “বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওআখিরাহ”।’(আবু দাউদ, হাদিস : ৩৭৬৭, তিরমিজি, হাদিস : ১৮৫৮)

পড়ে যাওয়া খাবার তুলে খাওয়া
খাবার খাওয়ার সময় কদাচিৎ খাবার পড়ে যেতে পারে। আবার কখনো থালা-বাসন থেকেও এক-দুইটি ভাত অথবা রুটির টুকরো কিংবা অন্য কোনো খাবার পড়ে যায়। তখন সম্ভব হলে, সেগুলো তুলে পরিচ্ছন্ন করে খেয়ে নেয়া চাই। হাদিসের কিতাবগুলোতে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল সা:-এর খাবারকালে যদি কোনো খাবার পড়ে যেত, তাহলে তিনি তা তুলে খেতেন। জাবের রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘খাবার খাওয়ার সময় যদি তোমাদের লুকমা পড়ে যায়, তাহলে ময়লা পরিষ্কার করে তা খেয়ে নাও। শয়তানের জন্য ফেলে রেখো না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯১৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৪০৩)

হাত চেটে খাওয়া
খাবার শেষে স্বাভাবিকতই হাতে খাবার লেগে থাকে। তাই রাসূল সা: খাওয়ার সময় সর্বদা হাত চেটে খেতেন। না চাটা পর্যন্ত কখনো হাত মুছতেন না। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘তোমরা যখন খাবার গ্রহণ করবে, তখন হাত চাটা নাগাদ তোমরা হাতকে মুছবে (ধোয়া) না।’ (বুখারি, হাদিস : ৫২৪৫)

আঙুল চেটে খাওয়া
খাবারের সময় কিংবা খাওয়া শেষে আঙুল চেটে খাওয়া হয়। আঙ্গুল চেটে খাওয়ার ফলে বরকত লাভের সম্ভাবনা বেশি থাকে। কারণ, খাবারের বরকত কোথায় রয়েছে— মানুষ তা জানে না। রাসূল সা: বলেন, ‘তোমরা যখন খাবার গ্রহণ করো তখন আঙুল চেটে খাও। কেননা বরকত কোথায় রয়েছে তা তোমরা জানো না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৯১৪)

খাবার খাওয়া শেষে দোয়া পড়া
খাবার আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নেয়ামত। খাবারের মাধ্যমে তিনি আমাদের ওপর বড় দয়া ও অনুগ্রহ করেন। এ দয়ার কৃতজ্ঞতা আদায় করা হলো- সভ্যতা ও শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত। তাই খাবার গ্রহণ শেষে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করা অপরিহার্য। রাসূল সা: খাবার শেষে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করতেন। কৃতজ্ঞতা স্বরূপ দোয়া পড়তেন।

আবু উমামা রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, রাসূল সা: খাবার শেষ করে বলতেন- ‘আলহামদুলিল্লাহি হামদান কাসিরান ত্বয়্যিবান মুবারাকান ফিহি, গায়রা মাকফিইন, ওলা মুয়াদ্দায়িন ওলা মুসতাগনান আনহু রাব্বানা।’ এছাড়াও তিনি কখনো এই দোয়া পড়তেন- ‘আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আতআমানা ওয়াছাকানা ওয়াজাআলানা মিনাল মুসলিমিন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৪৫৮)

আমাদের জীবনে রাসূল সা:-এর সুন্নতগুলো বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট হওয়া চাই। তাহলে আমাদের জীবন সুন্দর ও সার্থক হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।