উচ্চাভিলাসী বাইকার রিমির মৃত্যু, যৌথ আইডি বন্ধ, ধর্ষণচেষ্টায় বাইকার বাধন জেলে


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ২৬, ২০২২, ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ /
উচ্চাভিলাসী বাইকার রিমির মৃত্যু, যৌথ আইডি বন্ধ, ধর্ষণচেষ্টায় বাইকার বাধন জেলে

আর লার্ভাস যৌথ আইডিটি বন্ধ ধর্ষণচেষ্টায় জেলে বাইকার বাধনউচ্চাভিলাসী লেডি বাইকার শিল্পী রুমানা আক্তার রিমি ওরফে রিজভীর রহস্যজনক মৃত্যুর পর আর লাভার্স নামের যৌথ আইডিটি বন্ধ করে দিয়েছে পার্টনার বাইকার বয় ফ্রেন্ড জিহাদ। কয়েক বাইকারের মতে রিমির গোপন বিয়ের স্বামী এই বাইকার জিহাদ। জিহাদ ও রিমি আর ওয়ান ৫ ভার্সন ৩ মোটরসাইকেল চালকদের নিয়ে ফেসবুকে এই যৌথ আইডিটি চালাতেন।

পুলিশি ঝামেলা এড়াতে এটি বন্ধ করা হয়েছে বলে দাবি অনেকের। আবার এই ‘আর লাভার্সের’ সদস্য রিমির অপর বাইকার বন্ধু বাধন সম্প্রতি একটি ধর্ষণ চেষ্টা ঘটনায় জড়িয়ে জেল হাজতে রয়েছে। যে কারণে নৃত্য শিল্পী রিমির করুন পরিণতির পেছনে তার সম্পৃক্ততাও থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন কয়েক বাইকার।

যশোরের কয়েকটি বাইকার সংগঠন সূত্র ও থানা সূত্র জানিয়েছে, রুমানা আক্তার রিমি ওরফে রিজভী পেশায় ছিলেন নৃত্য শিল্পী, আর নেশায় ছিলেন বাইকার। যশোরের কোনো স্বীকৃত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে তার সম্পৃক্ততা না থাকলেও কমার্সিয়ালভাবে তিনি নৃত্য পরিবেশন করতেন। আর ওয়ান ৫ ভার্সন ৩ মোটর সাইকেল চালাতেন তিনি।

জিহাদ ও বাধন নামে দুই পুরুষ বাইকারের সাথে বেশ ঘনিষ্টতা ও বন্ধুত্ব ছিল এই লেডি বাইকার রিমির। দু’জনের মধ্যে জিহাদ নামের বাইকারের সাথে তার গোপন বিয়ে সম্পাদিত হয় বলে প্রচার ছিল ওই সময়। যশোর শহরের কাঁঠালতলার একটি ৬ তলা বিশিষ্ট ভবনের ৪র্থ তলার ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে রাখা হয় রিমিকে।

আর জিহাদ সেখানে আসা যাওয়া করতেন। মাঝে মধ্যে বন্ধু বাইকার বাধন যেতেন সেখনে। এরই এক পর্যায়ে গত ২২ জানুয়ারি শুক্রবার বিকেলে ওই ফ্ল্যাট থেকে রিমির (১৮) গলায় ফাঁস দেয়া লাশ উদ্ধার করে যশোর কোতোয়ালি পুলিশ।

লাশটি হাটুগাড়া অবস্থায় উদ্ধার হওয়ায় প্রথম থেকেই এই মৃত্যুটি রহস্যজনক বলে তদন্ত শুরু হয়। তুমুল হৈচৈ শুরু হয় গোটা যশোরে এবং যশোরের বাইকার সংগঠনগুলোতে। প্রাথমিক খোঁজখবরে পুলিশ রিমির মায়ের সন্ধান পান জামালপুরে। নাম রুমিছা বেগম। তাকে খবর দেয়া হলে তিনি যশোরে আসেন।

বাবা মায়ের বিয়ে বিচ্ছেদের কারণে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েন রিমি। এরপর নিজের ভাগ্য গড়ার প্রত্যয় নিয়ে জীবন সংগ্রামে লিপ্ত হয় রিমি। চলে আসেন যশোরে। পুরাতন কসবা কাঁঠালতলায় বাসা নিয়ে নিজের মতো চলতে থাকেন।

সূত্রের দাবি, নিজ পায়ে দাঁড়িয়ে পথ চলছিলেন রিমি। খুলনা থেকে নানা ঘাত-প্রতিঘাত সামলেই লড়াই করে যশোরে এসেছিলেন। প্রতিবাদী স্বাধীনচেতা উচ্চাভিলাসী ছিলেন। নাচ করতেন প্রফেশনালভাবে। শখের বসে বাইকিং করতেন। আর লাভার্স নামে একটি বাইকার সংঠনের যৌথ আইডি চালাতেন।

ওই আইডির পার্টনার ছিলেন জিহাদ নামে সেই বাইকার বন্ধু, যা অনেক বাইকারের মতে গোপন বিয়ের স্বামী। বাধন, জিহাদ ও রিমিসহ আরো ৫/৭ জন চলতেন একই সাথে। আর লাভার্স বাইকার সংগঠনের সদস্য ছিল সব চেয়ে কম। আর লাভার্সের সদস্যদের চলা ফেরা ছিল বিতর্কিত। রিমির রহস্যজনক মৃত্যুর পর স্থানীয় দৈনিকে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এরপর রিমি জিহাদের যৌথ আইডিটি বন্ধ করে দিয়ে আত্মগোপনে যায় বাইকার জিহাদ। আবার তাদের বাইকার বন্ধু বাধন একটি চক্রে নাম লিখিয়ে গা বাঁচিয়ে চলতে থাকেন পুলিশি তোড়জোড়ের কারণে।

রিমির রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ও জিহাদ-রিমির সম্পর্কের ব্যাপারে অনেক কিছুই জানতেন বাধন। সম্প্রতি যশোরের পুরাতন কসবায় একটি ডেরায় এক কলেজছাত্রী ধর্ষণ চেষ্টা ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন এই বাধন। পুলিশ তাকে আটক করে। তবে সে ডাক নাম বাধন গোপন করে।

এদিকে ধর্ষণ চেষ্টা ঘটনায় বাইকার বাধন আটক খবর ছড়িয়ে পড়লে বাইকারদের অনেকের মন্তব্য এই বাধন এত খারাপ তারা জানতেন না। সেকি তাহলে রিমির সাথেও কোনো ঘটনা ঘটিয়েছিল? জিহাদের সাথে এই বাধন, এমনকি একটি উঠতি রাজনৈতিক নেতার সাথে বাধনের সখ্যতা ছিল। রিমির মৃত্যুর ব্যাপারে বাধনের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে।

এ ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি থানার অস্বাভাবিক মৃত্যু ও ভিসেরা, ময়না তদন্ত প্রতিবেদন ফাইল দেখাশুনা করার দায়িত্বে থাকা এসআই তপন কুমার নন্দী জানিয়েছেন, ভুক্তভোগী পরিবার যদি কোনো অভিযোগ আনেন সে ব্যাপারে তদন্ত হতে পারে।

ভিসেরা প্রতিবেদনে আরো পরিস্কার হবে সব বিষয়। পরিবারের অভিযোগ করার অবশ্যই সুযোগ রয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন। যে বাইকার ধর্ষণ চেষ্টা ঘটনায় আটক রয়েছে তার বিরুদ্ধেও রিমির ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে হলে কাউকে লিখিতভাবেই জানাতে হবে। এ ব্যাপারে পুলিশ আন্তরিক। পরিনতির জন্য কেউ প্ররোচিত করেছে কিনা এ নিয়ে মামলা হতে পারে।