একনেকে ১৪ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে রোহিঙ্গাদের উন্নয়নসহ ১১টি প্রকল্প অনুমোদন ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি দ্রুত নিরূপণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : মে ২৯, ২০২৪, ৬:৪১ পূর্বাহ্ণ /
একনেকে ১৪ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে রোহিঙ্গাদের উন্নয়নসহ ১১টি প্রকল্প অনুমোদন ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি দ্রুত নিরূপণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

ঘুর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি দ্রুত নিরুপনের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী রোববারের মধ্যে পত্রপত্রিকায় ক্ষতির যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে সেগুলো সঠিক কিনা সেটি নিশ্চিত করতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এছাড়া ঘুর্ণিঝড় রিমালের ক্ষয়ক্ষতি পর্যবেক্ষণে রাত ২টা পর্যন্ত জেগে থেকে মনিটিরিং করেছেন বলে জানান। একই সঙ্গে আমি প্রত্যেক জেলার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছি।

এছাড়া দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো এবং ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো সংস্কারেরও নির্দেশ দিয়েছেন। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এসব নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বৈঠকে রোহিঙ্গাদের এবং ওই এলাকার স্থানাীয় জনগনের উন্নয়নসহ ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার।

ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার, আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) ড. কাউছার আহমদ, আব্দুল বাকী, ড. এমদাদ উল্লাহ মিয়ানসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুর্ণিঝড়ে আক্রান্ত দুর্গতদের পাশে থাকতে বলেছেন প্রধানমত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের গতানুগতিক অবস্থার বাইরে এসে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহেরও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে বলেছেন নোংরা পানি পান করলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে সাধারণ মানুষ। সেই সঙ্গে ঝড়ের কারণে শুধু মোবাইল ফোনের উপর নির্ভর না করে ল্যান্ডফোনে উপর গুরুত্ব দেওয়া নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কেননা ঘুর্ণিঝড় রেমালের কারনে ল্যান্ডফোনের গুরুত্ব সামনে এসেছে।

ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ডিজিটালভাবে দুটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়েছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে সভায় দুটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়েছে। এর কারণে ডিপিপি করতে যে বেশি কাগজপত্র দরকার হতো তা লাগবে না। এটি রোহিঙ্গা ও স্থানীয় লোকদের জন্য নেওয়া প্রকল্প দিয়ে উদ্বোধন করা হয়। এখানে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন যাতে, আগামীতে সব প্রকল্পে এই পদ্ধতিতে কাজ করা হয়। এতে করে অনেক কাজ সহজ হয়ে পড়বে। পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার বলেন, রোহিঙ্গাদের এবং স্থানীয় জনগনের জন্য নেওয়া দুটি প্রকল্পের মধ্যে ১২টি প্রকল্প রয়েছে। গতানুগতিকের বাইরে গিয়ে বাস্তবায়ন করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি জানান, মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের ও স্থানীয়দের জন্য নেওয়া এই দুই প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংক এক বছরের জন্য অনুদান দিবে। এছাড়া কিছু ঋণও দেওয়া হবে। শুরুতে বিশ্বব্যাংক শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য অনুদান দিতে চেয়েছিল, পরে আলাপ করে সেখানকার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যও সহায়তা চাওয়া হলে তা স্বল্প সুদে ঋণ হিসেবে দিতে রাজি হয়েছে সংস্থাটি। এ অর্থে যাগাযোগ, রাস্তা, রেলপথ নির্মাণ করা হবে। যে বন ও পাহাড় নষ্ট হয়েছে সেখানে বৃক্ষ রোপন করা হবে। এ দুটি প্রকল্প ৭টি মন্ত্রণালয় কাজ করবে। তবে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব তদারকি করবেন বলেও প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব দিয়েছেন। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, ঐতিহাসিক একনেক সভা। প্রথমবারের মতো সফটওয়ারের মাধ্যমে দুটি প্রকল্প উপস্থাপন ও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের উন্নয়নসহ ১১ প্রকল্প অনুমোদন: রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের উন্নয়নসহ ১১ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৩৩৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৬ হাজার ৫৪১ কোটি ৫২ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ৭ হাজার ৮৭৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৮৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। একনেকে অনুমোদিত প্রকল্প গুলো হচ্ছে, চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলাধীন কর্ণফুলী নদী এবং সংযুক্ত খালসমূহের বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন রোধকল্পে তীর সংরক্ষণ প্রকল্প। এছাড়া দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা।

নওগাঁ জেলার মহদেবপুর উপজেলায় ৪৮ হাজার মেট্রিকটন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন চালের আধুনিক স্টিল সাইলো নির্মাণ। রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন। টেকনিক্যাল এ্যাসিসটেন্স ফর এগ্রিকালচারাল পাবলিক সাপোর্ট টুওয়ার্ডস এ সাসটেনেইএবল ফুড সিস্টেম ট্রান্সফরমেশন ইন বাংলাদেশ। বিআইডব্লিউটিসির জন্য ৩৫টি বাণিজ্যিক ও ৮টি সহায়ক জলযান সংগ্রহ এবং ২টি সিøপওয়ে নির্মাণ।

কুমিল্লা-লালমাই-চাঁদপুর-লক্ষীপুর-বেগমগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড হতে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা এবং বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী-রামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক চারলেন সড়ক উন্নয়ন। হোস্ট এন্ড ফোরসিবিলি ডিসপ্লেসড মায়ানমার ন্যাশনালস ডিসপ্লেলেসড রোহিঙ্গা পপুলেশন ইনহ্যান্সমেন্ট অব লিভস থ্রো এ মাল্টি-সেক্টোরাল এপ্রোচ প্রজেক্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার রিলেটেড প্রজেক্ট। ইনক্লুসিভ সার্ভিসেস এন্ড অপরটুনিটিস ফর হোস্ট কমুনিটিজ এন্ড এফডিএমএন পপুলেশন প্রজক্ট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর এ পানি শোধনাগার ও গভীর নলকূপ স্থাপন প্রকল্প।