কক্সবাজার সাদৃশ্য রামভদ্রপুর খলিল সরদারের বটতলা


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১০, ২০২৫, ৯:৫১ পূর্বাহ্ণ /
কক্সবাজার সাদৃশ্য রামভদ্রপুর খলিল সরদারের বটতলা

সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলাধীন ৭নং চন্দনপুর ইউনিয়নস্থ রামভদ্রপুর খলিল সরদারের বটতলা ওরফে বুড়োর বটতলা এক সময়ে স্থানটি ছিল ভীতি ও সন্ত্রাসের রাজত্ত¡!

কথায় আছে দিন যতই যাবে পৃথিবীর বয়সও ততই বাড়তে থাকবে। প্রবাদ আছে সময় এর ব্যবধানে নিয়ম ও অনিয়মের মাঝে ঘাট আঘাট হবে; আঘাট ঘাট হবে- প্রাকৃতিক নিয়মের আপন লিলাখেলায়।

রামভদ্রপুর খলিল সরদারের বটতলা ওরফে বুড়োর বটতলা তার এক প্রকৃষ্ট উদাহরন। খুববেশি দিনের কথা নয় এমন কি বাংলাদেশ আমলের প্রথম দিকেও মদনপুর থেকে রামভদ্রপুর দীর্ঘ ন-কাঠির বিলের মধ্য ভাগ দিয়ে দীর্ঘ  সময়ের কাঁচা রাস্তাটি ছিল জনাকীর্ণ। রাত্রী তো দূরের কথা দিনের বেলায়ও দীর্ঘ জনাকীর্ণ এই রাস্তায় মানুষ চলাচল ছিল খুবই সীমিত সন্ত্রাসীদের উৎপাতের কারনে। বর্ষাকালে রাস্তাটি থাকতো কর্দমাক্ত। যা বর্তমানে পাকা সড়কে পরিণত হয়েছে এলাকার সাবেক এমপি মোঃ হাবিবুল ইসলাম হাবিব মহোদয়ের বদৌলতে।

সন্ত্রাসী উৎপাতের নূন্যতম ১/২টি উদাহরনঃ একবার শোনা গেলো বে-ওয়ারিশ একজন যুবক কে কেবা কারা গলায় দড়ি দিয়ে খলিলের বটগাছের (অশবথ) ডালে ঝুলিয়ে রেখে গেছে। সত্যই সে এক লোমহর্ষ ঘটনা বৈকি।

আরএকবার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ আবদুল করিম সাহেব মদনপুর গ্রামে ভোটারদের সঙ্গে মত বিনিময় শেষে দুপুর বেলা বাড়ি ফেরার পথে (হিজলদী) সন্ত্রাসিদের কবলে পড়লে তাকে বিলের মাঝে পিট মোড়া দিয়ে বেঁধে রাখে। রাস্তায় পড়ে থাকা মটরসাইকেল দেখে পথিকরা বিষয়টি জানতে পেরে জনাব মোঃ আবদুল করিম স্যারকে উদ্ধার করেন। এছাড়াও এই রাস্তায় বহু ছিনতাই সহ সন্ত্রাসীদের নানা শ্রেণির উৎপাতের কথা আজও জনশ্রুতিতে তো রয়েছেই।

অথচ আজ? আজ আঘাট ঘাট হয়েছে। এক সময়ে খলিল সরদারের লাগানো বটতলা আজ যেন- কক্সবাজার সাদৃশ্য রামভদ্রপুর খলিল সরদারের বটতলা জনসমুদ্রে জম-জমাট হয়ে উঠেছে।

রামভদ্রপুর গ্রাম থেকে বর্তমানে পাকা রাস্তার দু’ধারে গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক বেশকিছু পাকা আবাসিক বিল্ডিং। সৃজনশীল জেসমিন বেগমের অর্থায়নে তার মায়ের নামে সৃষ্টি করা হয়েছে “মরহুমা শাহানারা বৃদ্ধআশ্রম”। বটতলা সংলগ্ন চৌরাস্তার মোড়ে পূর্বের ওয়াক্তিয় নামাজের স্থানটি সংস্কার করে করা হয়েছে ছোট মসজিদ। খাবার পানির জন্য পোতা হয়েছে টিউবওয়েল। অর্থায়ন করেছে আশরাফুল ফরহাদের কন্যা জেসমিন সুলতানা। মদনপুর গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিমে পাকা রাস্তার মোড়ে অধ্যাপক নাসীর উদ্দীন দাখিল মাদ্্রাসা ছাড়া এলাকায় আর তেমন কোন আকর্ষণীয় নিদর্শ না থাকলেও প্রতিদিন সাতক্ষীরা, শ্যামনগর, বাগআঁচড়া, নাভারন, ঝিকরগাছা, যশোর ছাড়াও আশপাশ ও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত মানুষের লোক সমাগম স্থানটিকে এক বিশেষ চিত্ত আকর্ষনিয় স্পট হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে গণমাধ্যমের খবরা খবরের বদৌলতে।

স্থানটির মূল আকর্ষণ বিলের চতুরদিকে বর্ষার প্রবাল জলরাশি পাকাপুলের মধ্য দিয়ে তর্জন-গর্জন শব্দে প্রবল জল স্রোত যুব কিশোর ছেলেদের জল স্রোতে গোসল, সাঁতার দিয়ে পুলের এপার-ওপার গাঁ ভাসিয়ে আনন্দ উচ্ছাস অজান্তে পথিকেরও মন কেড়ে নেয় বটে। লোকে বলে কলারোয়া উপজেলার বর্তমান (২০২৫) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বশরীরে স্থানটি পরিদর্শনে দেখতে এসে (স্বস্ত্রীক) তিনিও আনন্দে আপ্লুত হন এবং তিনি নাকি বলেন পানিতে আমারোতো ঝাঁপ দিতে মন চাচ্ছে। আছে নৌকা বাইছ এর ব্যবস্থা। আছে স্পিড বোর্টও, পাকা রাস্তার দুধারে আছে অসংখ্য অস্থায়ী দোকানপাট, বেচাকেনার অপূর্ব হিড়িক। বন্ধু, বান্ধবীদের ফুচকা খাওয়ার রকমারি দৃশ্য, চা-নাস্তার ব্যবস্থা, পাপড় ভাজা, বাদাম, ছোলা ভাজা কী নেই সেখানে? আছে শিশুদের মন ভুলানো বিচিত্র খেলনা সামগ্রীও। স্পটটির পবিত্রতা বজায় রাখতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্থানীয় সকলকেই অনুরোধ রেখেছেন। দিনে দিনে গ্রাম গঞ্জে, খেলা-ধুলা, গান বাজনার অভাব হেতু চিত্তবিনোদনের কোনা উৎস আজকাল আর তেমন না থাকায় চতুরদিকে বিলে অপূর্ব দৃশ্য সুশীতল হাওয়া ও বিলের পানি থৈ-থৈ জলরাশীর মন মুগ্ধকর সুদৃশ্য দেখতেই বোধ হয় প্রতিদিন শত শত মানুষের আনাগোনা এই কক্সবাজার সাদৃশ্য সম রামভদ্রপুর খলিল সরদারের বটতলা। স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ও/সি) সাহেবও স্থানটি পরিদর্শন করেছেন অতি ছদ্মবেশে বলে জানাগেছে।

পাঠক কী ভাবছেন এ মুহূর্তে?

খলিল সরদার এক সময় বিলের মাঝে ভেড়া চরাতেন। প্রচন্ড ফাকা বিলের রৌদ্রতাপ এড়াতে ক্লান্তি বিনারনের জন্য চৌরাস্তার মোড়ে পুঁতে ছিলেন একটি বটগাছ (অশর্^থ) আজতা মহিরূপে পরিণত হয়েছে। প্রতি ঈদের দিন বিকেলে এলাকার শত শত যুব কিশোর ছেলেরা বটতলা ঘিরে চার দিকে হাওয়া খেতে আসতে দেখা যেতো। আজতা বার মাসের জন্য আনন্দ স্পট হিসেবে বিবেচিত হতে চলেছে।

বলাবাহুল্য হঠাৎ বেড়ে উঠা এই আনন্দ স্পটটির স্থায়িত্ব ধরে রাখার কোন অভিভাবক না থাকায় এর ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন, অধ্যাপক জনাব মোঃ নাসির উদ্দীন। তিনি কাগজে এক ছবি এঁকেছেন চৌরাস্তার দু’ধারে অর্ধমাইলব্যাপী ঝাউগাছ রোপন করে চিত্ত আকর্ষনীয় পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে চলমান জন স্রোতটি স্থায়ীভাবে ধরে রাখা যায় কিনা। সহযোগীতা চাইবেন কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মহোদয়ের বলে এই প্রতিবেদককে জানান। এলাকাবাসীর অনেকেরও চিন্তা তাই- চিত্ত বিনোদনের এই স্থানটি যেভাবেই হোক দীর্ঘজীবি হোক। প্রশাসন সহ সরকারের ও সদয় সহযোগীতায় এর বিকাশ সাধনে যা করণীয় সেটিই করা হোক। সমালোচকদের সমালোচনায় এহেনো চিত্তবিনোদনের স্পটটি যেন ক্ষতির সম্মুখীন না হয় এখন অনেকেরই এই প্রত্যাশা। আল্লাহ সহায় হউন।

আলহাজ¦ মোঃ রবিউল হোসেন

অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক

সাংবাদিক ও কলামিস্ট