খুলনায় বৈষম্যবিরোধী দুই নেতার চাঁদাবাজির তথ্য ফাঁস, মহানগর সদস্য সচিবের বহিষ্কারে মানববন্ধন


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : মার্চ ৮, ২০২৫, ১০:৩৫ অপরাহ্ণ /
খুলনায় বৈষম্যবিরোধী দুই নেতার চাঁদাবাজির তথ্য ফাঁস, মহানগর সদস্য সচিবের বহিষ্কারে মানববন্ধন

খুলনায় চাঁদাবাজির ভাগ নিয়ে বিবাদের জের ধরে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা মহানগর কমিটির দুই নেতা। এর মধ্যে মহানগর সদস্য সচিবের জহুরুল তানভীরের বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে নেতাকর্মীদের একটি অংশ। এর জের ধরে ওই গ্রুপের ৪ জনকে বহিষ্কার করেছে তানভীর অনুসারীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস, আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হানা দিয়ে মব তৈরি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলো কিছু যুবক। বিষয়টি সবাই জানলেও প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাননি কেউ। সেই টাকা নিয়ে দুই গ্রুপের বিবাদে একের পর এক ঘটনা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে।

গত ৬ মার্চ দুপুরে জহুরুল তানভীরের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মানববন্ধন শেষে মহানগর কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব রাকিব হাসান সুজন ওরফে রাব্বি বলেন, সংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করে তানভীর সুজুকি শোরুম থেকে ৫ লাখ টাকা, বাণিজ্য মেলা থেকে ৩ লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছে। গত ২ দিন আগে বাগমারা আওয়ামী লীগ নেতা আলী আকবরকে ছাত্র আটক করে পুলিশে দিতে গেলে তানভীর তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। এরপর তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছে। দিঘলিয়ায় ইটভাটা দখল করে তানভীরের বাবা ১৭ লাখ টাকা নিয়েছে। এই সব কিছুর কল রেকর্ড রয়েছে। আমরা সংগঠনের ব্যানারকে চাঁদাবাজিতে ব্যবহার হতে দিতে পারি না।

মানববন্ধন করার প্রতিবাদে ৬ মার্চ রাতে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করে তানভীরের অনুসারীরা। পরে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আশিকুর রহমান, যুগ্ম সদস্য সচিব সৈয়েদ আবদুল্লাহ, যুগ্ম সদস্য সচিব রাকিব হাসান সুজন ওরফে রাব্বি ও সংগঠক সাফওয়ান ইফাজকে রাতে বহিষ্কার করা হয়।

এ ব্যাপারে জহুরুল তানভীর বলেন, রাব্বীসহ অন্যরা সিটি কলেজের সাবেক ভিপি বি এম মহিলের শ্বশুর বাড়ি গিয়ে চাঁদা চায়। তারা খুলনার স্থানীয় হওয়ায় বিষয়টি সবাইকে জানায়, তখন আমি পরিবারটির কাছ থেকে চাঁদা নিতে নিষেধ করি। এতেই তারা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয় অপপ্রচার চালাতে শুরু করেছে। মূলত এরাই সংগঠনের নাম ব্যবহার করে জমি দখল, অফিসে গিয়ে মব তৈরি করে চাঁদাবাজি করছে। ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

তানভীরের বক্তব্য সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আশিক, আবদুল্লাহ ও রাব্বী মোংলা বন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট এস এম এন্টারপ্রাইজের কার্যালয়ে গিয়ে ভবনে গিয়ে বিশৃংখলা তৈরি করে। তারা ব্যবসায়ীর বাড়ি ও অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরে ৩ মার্চ বিকালে আবার গিয়ে কেয়ারটেকারকে পুলিশে তুলে দেওয়ার জন্য টানাহেচড়া করে।
কেয়ারটেকার মনির হোসেন বলেন, ওদের হাত পা ধরে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছি। আশিক, আবদুল্লাহ ও রাব্বী টাকা নেয়ার সময় উপস্থিত ছিল।

সম্প্রতি খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের পেছনে হল রোডে এক বাড়িতে নির্মাণাধীন কাজ বন্ধ করে দেয় রাব্বির নেতৃত্বে একদল যুবক। পরে এলাকাবাসী ও বিশ^বিদ্যালয়ের ছেলেরা এসে হস্তক্ষেপ করলে রাব্বী চলে যায়।

এ ব্যাপারে রাকিব হাসান সুজন ওরফে রাব্বি বলেন, সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী সুলতান খানের ছাত্রদের ওপর হামলাকারীদের অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। শাহরিয়ার-তানভীর আমরা মিলে ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তানভীর ভবনে দ্বিতীয় তলা তার নামে লিখে নিতে চেষ্টা করে। আমরা গিয়ে সেটা বন্ধ করেছি। কারও কাছে টাকা দাবি করা হয়নি। উল্টো নৌপরিবহন ব্যবসায়ীদের অফিসে অফিসে লোক পাঠিয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়েছে তানভীর ও আজাদ।

তাদের কথার সূত্র ধরে নৌপরিবহন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫/৭ দিন ধরে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের অফিসে গিয়ে মব তৈরি করে সবাইকে নাজেহাল করছে একদল ছাত্র। তারা তানভীর ও আজাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে ব্যবসায়ীদের চাপ দিচ্ছেন। কয়েকজন ব্যবসায়ী তাদের সঙ্গে কথা বলে রক্ষা পেয়েছেন। অবশ্য তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি সূত্র জানায়, এক সময় নগর সদস্য সচিব জহুরুল তানভীরের শিষ্য ছিল আশিক, সৈয়দ আবদুল্লাহ ও রাব্বি। বাণিজ্য মেলাসহ বিভিন্ন জায়গায় তাদের পাঠিয়েই টাকা আদায় করেছে তানভীর, আজাদসহ অন্যরা। এই ভাগ নিয়েই নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এরপর একে অন্যের সংগঠিত অপরাধগুলো প্রকাশ করতে শুরু করে।

সার্বিক বিষয় নিয়ে সংগঠনের খুলনা মহানগর আহ্বায়ক আল শাহরিয়ার বলেন, সংগঠনের শৃংখলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়ায় ৪ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে অন্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।