মহানগরীর খুলনার শের এ বাংলা রোড। ময়লাপোতার মোড় থেকে উত্তর দিকে যেতে কয়েক বাড়ি পেরিয়েই ছিল আলোচিত একটি বাড়ি। বাড়িটিকে কেউ বলতেন ‘শেখবাড়ি’। আবার কেউ বলতেন ‘রাজবাড়ি’। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছর এই বাড়ি থেকেই নিয়ন্ত্রিত হতো খুলনার রাজনীতি, অর্থনীতি। কেউ কেউ মজা করে বলতেন, এটি ‘চায়না দুয়ারী’ (নেটজাল বিশেষ)। যে জাল থেকে মাছের রেনুপোনাও ছাড়া পায় না।
বাড়িটির মালিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলাল ও তাঁর চার ভাইয়ের। ভাই-ভাইপো মিলিয়েই এই বাড়িটিতেই ছিলেন তিন সংসদ সদস্য। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের ৫ মাসে হদিস মেলেনি প্রতাবশালী এই পরিবারের সদস্যদের। পোড়াবাড়ি হয়ে ধ্বংসস্তুপে দাড়িয়ে আছে পদ্মা এপারের ‘কথিত’ রাজবাড়ি!
অনুসন্ধান বলছে, কেউ দলের কোন বড় পদে না থাকলেও খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এই বাড়ি থেকেই মন্ত্রী-এমপি থেকে ইউপি সদস্য, কোন কোন ক্ষেত্রে বাজার কমিটি, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ন্ত্রিত হতো। নেতৃত্ব নিয়ন্ত্রিত হতো ঠিকদারি কাজ, চাকরিতে নিয়োগ ও বদলি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্রীড়াঙ্গনসহ সবকিছু। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর কমিটিগুলো গঠন করে দিতেন তারাই।
বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জনসহ সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যারাই খুলনায় বদলি হয়ে আসতেন তারাই নিয়িমিত হাজিরা দিতেন রাজবাড়ি বা শেখ বাড়িতে। হাজিরা দিতেন পেশাজীবী সংগঠনের কর্তা-ব্যক্তিরা। সেলফি তুলে বা ফটোস্যুট করে ফেসবুক সোশ্যাল মাধ্যমে তুলতেন ঝড়। প্রভাব খাটাতেন প্রশাসনের স্তরে স্তরে। পট পরিবর্তনের পর এই সুবিধাভোগীরাও ভোল পাল্টেছেন। রাতারাতি স্যোশাল মাধ্যম থেকে সরিয়ে দিয়েছেন ‘ক্ষমতাবান’ ছবি। আর এভাবেই রয়েছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
অভিযোগ উঠেছে, দাপট আর ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে কয়েকটি জেলায় নামে-বেনামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড় গড়েছেন শেখ পরিবারের সদস্যরা। হয়েছেন বিপুল সম্পদের মালিক। অবশ্য এসব সম্পদের বিবরণী কখনো প্রকাশ্য হয়নি। আর এসব বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি।
বাগেরহাট-১ আসন থেকে শেখ হেলাল ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৯, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার ভাই সেখ জুয়েল খুলনা-২ আসন থেকে ২০১৮ ও ২০২৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
ভাইয়েদের মধ্যে শেখ সোহেল ছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, বিসিবি’র পরিচালক ও খুলনা ক্লাবের সভাপতি, ভাই শেখ জালাল উদ্দিন রুবেল ছিলেন খুলনা বিভাগীয় আভ্যন্তরিণ নৌপরিবহন মালিক গ্রুপের সহ-সভাপতি। ছোটভাই শেখ বেলাল উদ্দিন বাবুর কোন পদ-পদবী পাওয়া যায়নি। অপরদিকে শেখ হেলাল উদ্দিনের ছেলে শেখ সারহান নাসের তন্ময়। তিনি ২০১৮ সালে একাদশ ও ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, শেখ পরিবারের সদস্যদের দাপটে অনেকটাই ছিলেন খুলনাসহ দক্ষিণের রাজনীতিক, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। পদ্মার এপারে ঠিকাদারী কাজে একছত্র আধিপত্য ছিল শেখ বাড়ির। আওয়ামী লীগের শীর্ষ কোন পদে না থাকলেও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সকল সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করতো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা শেখ আবু নাসেরের ছেলেরা। আর সবকিছুই নির্ভর করতো বড় ভাই শেখ হেলাল উদ্দিনের সিদ্ধান্তে।
অভিযোগ রয়েছে, বাতিল হওয়া সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে শেখ হেলাল কোটি কোটি টাকার মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন। খুলনার কমপক্ষে দুটি, বাগেরহাটের একটি আসনে নির্বাচনী ফলাফল পাল্টে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শুধু তাই নয়, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনেও ছিল একক আধিপত্য।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসনকে ব্যবহার করে জনপ্রিয় প্রার্থীদের ধরাশায়ী করেছেন। দল ও অঙ্গ সংগঠনগুলোতে নিজ অনুসারীদের বসাতে নাজেহাল করেছেন দলের তৃনমূলের ত্যাগী কর্মীদের। ২০১৮ সালে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর ৮ কাউন্সিলরকে দলে ভেড়াতে ভূমিকা নেন শেখ হেলাল। আর ২০২৩ সালের সিটি নির্বাচনে নগরীর ৩১টির মধ্যে কমপক্ষে ১২টি ওয়ার্ডে শেখ পরিবারের আনুকল্য পায় এক সময়ের আওয়ামী লীগ বিরোধীরা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে । নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, দুই বা তিন কোটি নয়, তারা কোটি কোটি টাকায় দলের মনোনয়ন বেঁচেছেন। আর এসব লেনদেন হয়েছে দুবাইয়ে। এক ব্যবসায়ী খুলনার একটি আসনে হারলেও প্রশাসনের মাধ্যমে তাঁকে বিজয়ী করা হয়েছে। যার মূল ভূমিকায় ছিলেন শেখ হেলাল উদ্দিন।
তারা বলেন, গত উপজেলা নির্বাচনে শেখ পরিবারের অনেক সহযোগী হেরেছেন। বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরায় এসব চেয়ারম্যানরা এক সময় জনপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু তাদের ক্ষমতার দাপট, চাঁদাবাজিতে মানুষ অতিষ্ট ছিল। দীর্ঘদিন খুলনা অঞ্চলের পেশাজীবী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান; এমন কী বণিক সমিতিতেও নির্বাচন হয়নি। সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতেন শেখ পরিবার।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, খুলনার অনুমোদিত বালুমহলের দখলও ছিল শেখ পরিবারের। তাদের এই বলয়ে যুক্ত হন দল ও দলের বাইবে বেশকিছু সুবিধাবাদী। শেখ পরিবারের ছোঁয়ায় খুলনায় এমন প্রায় ১০/১২টি পরিবার শুণ্য থেকে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। হয়েছেন গাড়ি-বাড়ির মালিক। এসব ব্যক্তিরা শেখ পরিবারের নাম ব্যবহার করে গোটা খুলনা অঞ্চল জুড়ে আধিপত্য চালিয়েছেন। কেউ নিয়েছেন ঘাট, কেউ নিয়েছেন ঠিকাদারী, কেউ নিয়েছেন হাসপাতাল, জলমহল, গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর।
অপরদিকে সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সোহেল উদ্দিন, শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের সিন্ডিকেটে প্রায় ১৩ বছর বন্দী ছিল খুলনা বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ মালিক গ্রুপ। ২০০৯ সালের পর মালিক গ্রুপে আর নির্বাচন হয়নি। পছন্দের লোকদের মনোনীত করে কমিটি গঠনের মাধ্যমে চলত সব কার্যক্রম। মোংলা বন্দর থেকে নওয়াপাড়া রুটের কার্গো ও বার্জ চলাচলের সিরিয়াল এবং রেট চার্টসহ সবই নিয়ন্ত্রণ করত শেখ পরিবার।
ওদিকে ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের কেন্দ্রীয় য্বুলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেল,এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম মুহম্মদ আনিছুজ্জামাসহ ৬জনের বিরুদ্ধে ৬০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস আর ট্রেডার্স মালিক শেখ শহিদুল ইসলাম।
তিনি ৩ সেপ্টেম্বর মুখ্য মহানগর হাকিম সোনাডাঙ্গা থানার আমলী আদালত-১ এ বলেন, চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল বেলা আড়াইটার দিকে কিছু লোক যুবলীগ পরিচয়ে বাদী শহীদুল ইসলামের শিববাড়ি মোড়স্থ অফিসে যান। তারা তাঁকে শেখ সোহেলের কাছে যেতে বলেন। শহীদুল ইসলাম তাৎক্ষণিকভাবে শেখ বাড়িতে যান। সেখানে শেখ সোহেল ছাড়াও প্রকৌশলী আনিছুজ্জামান পাশাপাশি বসা ছিলেন।
শেখ সোহেল বাদী শহীদুলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তুই আনিস সাহেবের বিরুদ্ধে দুদুকে অভিযোগ দিয়েছিলি। সেই ঝামেলা মেটাতে কোটি টাকা লাগবে। শেখ সোহেল এক পর্যায়ে পিস্তল ঠেকিয়ে এক ঘন্টার মধ্যে ৬০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও অশ্লীল গালিগালাজ করেন। শহীদুল ব্যাংক থেকে নগদ ৪০ লাখ ও অফিস থেকে আরো ২০ লাখসাহ ৬০ লাখ টাকা সোহেলের হাতে তুলে দেন।
বেশী বাড়াবাড়ি করলে শহীদুল চিতলমারী বিলে পড়ে থাকবে বলে হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেন। ওই ঘটনায় থানায় অভিযোগ করতে গেলেও থানা তা গ্রহণ করেনি। তিনি এ ঘটনার বিচার চান। অবশ্য এই অভিযোগের পর ফেসবুক লাইভে বিষয়টি অস্বীকার করেন শেখ সোহেল। তিনি ঘটনার সময়কালে খুলনা শহরেই ছিলেন না বলে দাবি করেন।
শেখ হেলাল উদ্দিন ও তাঁর ছেলে শেখ তন্ময়সহ তাদের পরিবারে সংসদ সদস্য তিনজন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় তাদের সম্পদের বিবরণী মিললেও অন্যদের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, হলফনামায় দেওয়া তথ্যের চেয়ে কয়েকগুণ সম্পদের মালিক শেখ পরিবার।
রাজধানীর ঢাকার বনানী বাণিজ্যিক এলাকার শেখ হেলাল উদ্দিনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খানজাহান আলী পরিবহন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তাঁর দেওয়া তথ্য বলছে, শেখ হেলাল ব্যবসা থেকে বছরে আয় করেন ৫০ লাখ টাকা, সংসদ সদস্য হিসেবে ভাতা ২৪ লাখ টাকা। ব্যবসা থেকে বছরে তাঁর স্ত্রী শেখ রূপার আয় সাড়ে ২৯ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নিজের নামে তিনটি গাড়ি, নগদ টাকা, ব্যাংকে জমা, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, আসবাবসহ সব মিলিয়ে প্রায় ৮ কোটি ৮২ লাখ টাকার ও স্ত্রীর নামে ৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে পূর্বাচল নতুন শহরে ১০ কাঠা জমি, নরসিংদীর পলাশ উপজেলার কাজৈর মৌজায় ১ একর ৬৭ শতক জমির মূল্য ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, পিলজং মৌজায় ১০৯ শতক জমির মূল্য ৫৫ লাখ টাকা, কাজৈর মৌজায় ১৮২ শতক জমির মূল্য ৭১ লাখ টাকা, গুলশান বারিধারা আবাসিক এলাকায় ৫ কাঠা জমির ওপর সাততলা আবাসিক ভবনের মূল্য ১০ কোটি ১৭ লাখ টাকা, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সাড়ে ১৪ শতক জমি। স্ত্রীর নামে নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার কাজৈর মৌজায় ১ হাজার ৩২২ শতক জমির মূল্য দেখিয়েছেন ১ কোটি ৯ লাখ টাকা।
অপরদিকে খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলের বার্ষিক আয় ৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা। বাড়ি ভাড়া, কার্গো জাহাজের ব্যবসা, শেয়ার, ব্যাংকের মুনাফাসহ বিভিন্ন খাত থেকে তিনি এসব আয় করেন। তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের বছরে আয় ৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। সেখ জুয়েলের ব্যাংকে জমা ১৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, ১ কোটি টাকার এফডিআর, তিনটি কোম্পানির শেয়ার আছে ২১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৮৫ লাখ টাকা মূল্যের জিপ গাড়ি, ৭৯ লাখ টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাব এবং কার্গো ব্যবসায় তাঁর বিনিয়োগ ১৪ কোটি ২১ লাখ টাকা।
স্ত্রী শম্পা ইয়াসমিনের নামে ব্যাংকে ১৪ কোটি টাকা, ২৩ কোটি ২৬ লাখ টাকার শেয়ার, ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ১ কোটি টাকা মূল্যের জিপ গাড়ি, ১৩ লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার। তাঁর স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে– রাজধানীর পূর্বাচল নিউ টাউনে ১০ কাঠা জমি। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও খুলনার দিঘলিয়ায় তাঁর ৪ দশমিক ৪১ একর জমি রয়েছে। রাজধানীর গুলশান নিটল মডেল টাউন, মোহাম্মদপুর ও তেজগাঁওয়ে রয়েছে তিনটি ফ্ল্যাট। স্ত্রীর নামে কক্সবাজারের ইনানীর দুটি স্থানে রয়েছে ১ দশমিক ৪৮ একর জমি, যার মূল্য দেখিয়েছেন ৩ কোটি টাকা। ঢাকায় ড. কুদরত ই খুদা রোডে রয়েছে ছয়তলা বাড়ি। গুলশানে আছে ফ্ল্যাট।
ওদিকে শেখ হেলাল উদ্দিনের ছেলে শেখ তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তিনি হলফনামায় বলেছেন, তাঁর কাছে ২ কোটি টাকা মূল্যের তিনটি গাড়ি ও ব্যবসায় পুঁজি আছে ৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা জমি রয়েছে তাঁর। যার মূল্য দেখিয়েছেন ৩০ লাখ টাকা। তাঁর ব্যাংক থেকে ঋণ রয়েছে প্রায় কোটি টাকা। আর বার্ষিক আয় ৫৭ লাখ টাকা। তাঁর বাবার অফিস যে ভবনে, সেই ভবনে ‘শেখ লজিস্টিকস’ নামে তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
অবশ্য ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে শেখ হেলাল উদ্দিন, তাঁর স্ত্রী রূপা চৌধুরী ও ছেলে শেখ তন্ময়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, খুলনার শেখ পরিবার উত্তরাধিকারী সূত্রে দলকে ব্যবহার করেছেন। গত ১৬ বছরে শত শত ত্যাগী ও যোগ্য নেতা হারিয়ে গেছেন। অথচ সুবিধাবাদী হাইব্রিডরা ফুলেফেঁপে উঠেছে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগসহ কোন সংগঠনের আর ঘুরে দাঁড়ানোর অবস্থায় নেই। তারা দলের নয়, দল বিক্রি করে নিজেরা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। কোন কাজের লভ্যাংশ দেওয়া না হলে কেউ রেহাই পাননি।
তবে আলোচিত সেই বাড়িটি এখন শুধুই পোড়া কঙ্কালসার। গত ৪ ও ৫ আগস্ট বিক্ষুদ্ধ জনতা দফায় দফায় বাড়িটিকে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও বাড়ির মালামাল লুট করে। শেখ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা না যাওয়ায় এ প্রতিবেদনে তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :