

জীবনরক্ষাকারী ওষুধের মূল্য নির্ধারণে সরকারই চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ—এ কথা স্পষ্ট করে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, ওষুধ কোম্পানিগুলোর হাতে নয়, দেশের নাগরিকদের জীবনরক্ষাকারী ওষুধের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারের থাকবে হাতে।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) প্রকাশিত এ রায়ে আদালত বলেন, এসব গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা কোনোভাবেই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকতে পারে না।
গত ২৫ আগস্ট বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে। ২৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
২০১৮ সালে সরকার জীবনরক্ষাকারী ১১৭টি ওষুধ বাদে অন্যান্য সব ওষুধের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ন্যস্ত করে একটি সার্কুলার জারি করে। ওই সার্কুলারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থে রিট দায়ের করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)। রিটের পর হাইকোর্ট রুল জারি করেছিলেন।
রিটকারী আইনজীবীরা আদালতে যুক্তি দেন, ওষুধ মানুষের বেঁচে থাকা এবং রোগ প্রতিরোধের অন্যতম প্রধান উপাদান। তাই মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা সীমিত করে সরকারের দায়িত্ব কমিয়ে দেওয়া নাগরিকদের মৌলিক অধিকার—বিশেষ করে বেঁচে থাকার অধিকারের ওপর প্রভাব ফেলে।
শুনানি শেষে চলতি বছরের ২৫ আগস্ট বিচারপতি রেজাউল হাসান ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সার্কুলারটি অবৈধ ঘোষণা করেন। রায়ে বলা হয়, জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম সরকারকেই নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে মূল্য নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ওষুধ প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সৈয়দ ইজাজ কবির।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, আদালত রুলটি নিষ্পত্তি করে কতিপয় নির্দেশনা দিয়েছেন। যার মধ্যে অন্যতম হলো, বাংলাদেশের নাগরিকদের জীবনরক্ষাকারী ওষুধের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকবে এবং ওষুধ কোম্পানিগুলো কর্তৃক জীবনরক্ষাকারী ওষুধের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা থাকবে না। আদালত রায়ে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশের বিধান, যা বর্তমানে ২০২৩ সালের ওষুধ ও কসমেটিকস আইনের সুনির্দিষ্ট বিধান অনুসারে সরকার কর্তৃক গঠিত কমিটির মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণের বিষয়ও উল্লেখ করেছেন।
মনজিল মোরসেদ আরও বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে মানুষের জীবনরক্ষাকারী ওষুধের মূল্য যখন-তখন ইচ্ছেমাফিক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারণের সুযোগ থাকছে না।
আপনার মতামত লিখুন :