দেশে জুন মাসে ৭৬ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও ধর্ষণচেষ্টার ২১টি, যৌন হয়রানির ২৪টি ও শারীরিক নির্যাতনের ৪৯টি ঘটনাসহ এ মাসে মোট নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৩৩৭টি।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জুন মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের এই চিত্র তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী জুন মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি জরিপটি তৈরি করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জুন মাসে দেশে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা (ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, হত্যা, আত্মহত্যা ও পারিবারিক সহিংসতা) বিগত মাসগুলোর মতোই অব্যাহত ছিল, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ মাসে সংগঠিত ৭৬টি ধর্ষণের মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৬টি, ধর্ষণ ও হত্যা চারটি। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার ছয় জন ও গণধর্ষণের শিকার দু’জন প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরী। এছাড়াও ধর্ষণের শিকার ৭৬ জনের মধ্যে ১৪টি শিশু, ৪৩টি কিশোরী। অন্যদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ১৬ জনের মধ্যে ৯ জন কিশোরী। ধর্ষণ ও হত্যার শিকার চার জনের মধ্যে একটি শিশু, একটি কিশোরী ও দুই জন নারী।
এমএফএস বলছে, এই সময়ে ২৪টি কিশোরী ও ৫২ জন নারীসহ মোট ৭৬ জন আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে দুই নারী প্রতিবন্ধী। এই মাসে অ্যাসিড নিক্ষেপে আক্রান্ত হয়েছেন দু’জন নারী। নিখোঁজ হয়েছে দুইটি শিশু ও ছয়টি কিশোরী। এছাড়াও জুন মাসে ৯ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ শিশু-কিশোরী-নারী হত্যার সংখ্যা ৫৬। এর মধ্যে শিশু-কিশোরীর সংখ্যা ১৬। গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে এমএফএস বলছে, প্রতিশোধ, পারিবারিক বিরোধ, যৌতুক, প্রেমঘটিত কারণে এ হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এ মাসে একটি ধর্ষণের ঘটনা সালিশে মীমাংসা করা হয়েছে। পৃথক দুইটি ঘটনায় সালিশে দু’টি পরিবারকে সমাজপতিরা একঘরে করে রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, যে সিদ্ধান্তকে এমএসএফ বেআইনি হিসেবে অভিহিত করেছে।
জুন মাসের জরিপে আরও উঠে এসেছে, এই মাসে চারটি মৃত ও একটি জীবিত নবজাতককে বিভিন্ন স্থানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এমএসএফ একে অমানবিক ও নিন্দনীয় হিসেবে উল্লেখ করেছে। কী কারণে এ শিশুদেরকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা নিরূপণের চেষ্টা করছে না বলেও অভিযোগ করছে সংস্থাটি।
জুন মাসের নারী ও শিশু নির্যাতন পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণে এমএসএফ বলছে, দেশে ধর্ষণ, শিশু ও নারীদের প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন, শ্লীলতাহানি, যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের ঘটনা যে হারে ঘটে চলেছে তাতে সামাজিক সুরক্ষার পাশাপাশি রাষ্ট্রের দায়দায়িত্ব, বিশেষ করে সমাজে অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে সরকারের নজরদারি আরও জোরদার করতে হবে। নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা রোধে দেশে যথেষ্ট কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা লক্ষ্যণীয় নয়। এ কারণে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে।
আপনার মতামত লিখুন :