পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরকারের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপি যাবে না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, যারা মানুষ হত্যা করে, যারা এদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পদ্মায় ডুবিয়ে মারতে চায়, যারা এদেশের সবচেয়ে প্রথিতযশা এবং এদেশের জন্য সবচেয়ে বড় সম্মান অর্জন করে আনা ব্যক্তি ও গোটা পৃথিবীতে যিনি নন্দিত মানুষ- সেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পানিতে চুবিয়ে চুবিয়ে মারতে চায়- তাদের আমন্ত্রণে বিএনপির কোনো নেতা বা কোনো কর্মী কখনোই যেতে পারেন না।
আগামী ২৫ জুন অনুষ্ঠেয় পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাওয়ার আমন্ত্রণপত্র পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গতকাল বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানিয়ে দেন। সোমবার অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপির পরিকল্পনা জানাতে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন দলের ত্রাণ কমিটির আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকেও প্রধানমন্ত্রী তার স্বভাবসুলভ বক্তব্য রেখেছেন। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল, এই বলে মিথ্যাচার করা হয়েছে। বরং বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০০৪ সালে যে সমীক্ষা হয়েছে, সেটির ধারাবাহিকতাই আজকের পদ্মা সেতু। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে, বিএনপি-জোট সরকার তখন জাপানের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রাথমিক সমীক্ষা করে।
‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে কাকে সরকারপ্রধান করবে?’- বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রী হবেন- দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, যিনি সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। তার অবর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন। তিনি বলেন, বিএনপিতে নেতৃত্বের কোনো সংকট বা শূন্যতা নেই। বরং আওয়ামী লীগে নেতৃত্বের সংকট রয়েছে। আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ নেই। শেখ হাসিনা চলে গেলে কী যুদ্ধ হবে, তা কেবল তারাই (আওয়ামী লীগই) বলতে পারবে।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, বিএনপির কোনো নেতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশে নির্বাচনই তো হবে না, যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে। আগে তাদের সরে যেতে হবে। তারা ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পরই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। তখনই না কেবল প্রশ্ন আসবে- বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন।
সকালে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের উপসচিব দুলাল চন্দ্র সূত্রধর পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মহাসচিবসহ দলের সাতজন নেতার নামে আমন্ত্রণ কার্ড হস্তান্তর করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের কাছে। আমন্ত্রণ পাওয়া অন্য নেতারা হলেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
পদ্মা সেতু নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সত্যের অপলাপ : মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী আজকে (বুধবার) এক প্রেস কনফারেন্সে পূর্বের মতোই স্বভাবসুলভ বক্তব্যের মাধ্যমে মিথ্যাচার করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার মাওয়া প্রান্তে সেতুর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এবং জাপান সরকারকে পুনরায় মানিকগঞ্জের আরিচা প্রান্তে সেতুর জন্য সমীক্ষা করতে বলে।’ কিন্তু আমাদের কাছে প্রমাণ হচ্ছে, জাপান ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন এজেন্সির পূর্ণাঙ্গ ফিজিবিলিটি রিপোর্ট যেটা হচ্ছে, মাওয়া এবং জাজিরা প্রান্তের যেটা বর্তমানে আছে। এই রিপোর্টের কপিও আছে আমাদের কাছে, আপনারা চাইলে দেখতে পারেন। এই রিপোর্টটি ২০০৪ সালে মার্চের ৩ তারিখ সাবমিট করা হয়েছিল। এটা হচ্ছে ইন্টারিয়ম রিপোর্ট অন দ্যা ফিজিবিলিটি স্টাডি অব পদ্মা ব্রিজ। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের পদ্মা সেতু।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, এত বড় একটা ফিজিবিলিটি রিপোর্ট অফিশিয়ালি দেওয়ার পরও কী করে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলতে পারেন যে, বিএনপি গভর্নমেন্ট আসার পর এটাকে বন্ধ করে দেয় এবং এটা কোনো কাজ করেনি। এই ফিজিবিলিটি রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই তো তারা পরবর্তীকালে কাজ করেছেন। তখনই এডিবি, বিশ্বব্যাংক ও জাপান যোগাযোগ করে, এর ফান্ডের জন্য তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের অভাবে সেটা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। অথচ তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সমানে বলে যাচ্ছেন বিএনপি সরকার এটা বন্ধ করে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, সমস্যাটা হচ্ছে অন্য জায়গায়। কাজ শুরু করার পর বিশ্বব্যাংক যখন ফান্ড বন্ধ করে দিল দুর্নীতির কথা বলে, তখন থেকেই সমস্যাটা শুরু হয়েছে। সেটার জন্য তিনি বিএনপিকে দায়ী করেন, ড. ইউনূসকে দায়ী করেন। এসব কোথায় পেলেন তিনি? কীভাবে দেখলেন যে, দুর্নীতির কথা বিএনপি বা ড. ইউনূস তুলেছেন। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির কথা তোলার পর দেশবাসী জানল, আমরা জানলাম সেখানে দুর্নীতি হচ্ছে। আর আজকে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট এখন ৩০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সত্যের অপলাপ এবং বিএনপিকে জনগণের সামনে হেয়-প্রতিপন্ন করার চেষ্টা। এগুলোর কোনোটায়ই কাজ হবে না। কারণ দেয়ার আর টুলস অ্যান্ড ডকুমেন্টস।
আপনার মতামত লিখুন :