সকাল, বিকেল কিংবা সন্ধ্যাবেলা কোনো সময়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপদ্রব থামছে না পাগল, নেশাগ্রস্ত ও ভবঘুরেদের। বিশেষ করে এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন নারী শিক্ষার্থীরা। একটু সন্ধ্যা হলেই এই জাতীয় লোকদের দ্বারা অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও উত্যক্তের শিকার হন তারা। এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমালোচনা করছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য শুধু একাডেমিক বিল্ডিংগুলো ছাড়া আর কোথাও সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। পদে পদে তাদের হেনস্তার শিকার হতে হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, রোকেয়া হল গেট সংলগ্ন যাত্রী ছাউনি, আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের গেট সংলগ্ন যাত্রী ছাউনি, শামসুন্নাহার হল সংলগ্ন এলাকা, শেখ রাসেল টাওয়ারের সামনে থেকে শহীদ মিনার, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ ও আশেপাশের এলাকা, চানখারপুল থেকে কার্জন হলের ফুটপাত ও সুফিয়া কামাল হলের সামনে এবং পার্শ্ববর্তী ফুটওভার ব্রিজে সব সময়ই এসব পাগল, ভবঘুরে ও নেশাগ্রস্তদের দেখা যায়। প্রকাশ্যেই ইনজেকশন পুশ করে মাদক সেবন করতেও দেখা যায় তাদের। সন্ধ্যা হলেই এদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
শুধু পাগল দ্বারা নারী শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত করাই নয় বরং অভিযোগ আছে ক্যাম্পাসে রিকশাওয়ালাদের দ্বারাও হেনস্তার শিকার হন তারা। বিভিন্ন সময়ে তারাও ছাত্রীদের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেন বলে অভিযোগ আছে।
ভুক্তভোগী ফারজানা ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, রোকেয়া হল থেকে রেজিস্টার বিল্ডিং যাওয়ার জন্য দুপুরে বের হয়েছি। হাতে সময় কম থাকায় লাইব্রেরির সামনে দিয়ে না গিয়ে সোজা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। দুপুরবেলা পুরো ফুটপাত ফাঁকা। আমার পেছনে দুটো মেয়ে ছিল। গুরুদোয়ারার সামনে যাওয়ার সময় একটা পাগল লোক (শুধু গেঞ্জি পড়া, কোনো প্যান্ট নাই) ওপাশ থেকে আসতেছে। আমাকে দেখেই বিভৎস একটা হাসি দিলো। আমাকে ক্রস করার সময় আমার দিকে হাত বাড়াচ্ছে দেখে ফুটপাথ থেকে রাস্তায় নেমে যাই। এরপর আমার পেছনের মেয়ে দুটির সাথেও একই কাজ করে। আমরা তিনজনই দ্রুত হাটছি ও জোরে কথা বলে তাকে সরানোর চেষ্টা করতেছি। কিন্তু তবুও লোকটা পিছনে আসে।
ফারজানা বলেন, দিন-দুপুরে ক্যাম্পাসে এভাবে হ্যারাস হওয়ার কোনো মানে হয়? কোনো ব্যবস্থা কী নেয়া যায় না? লেখাপড়া প্রায় শেষ, ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার আগে একটু নিরাপদ পরিবেশ দেখতে চাই। আগেও আইবিএর সামনে এক রিকশাওয়ালা আজেবাজে কথা বলেছিল।
ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার প্রভা বলেন, আজকে (গত রবিবার) আমার ক্যাম্পাসে এক নেশাখোর আমাকে হ্যারাস করেছে। বুয়েটের ছয় নাম্বার গেটের সামনে দিয়ে টিউশনে যাচ্ছিলাম। সেখানে একটা ছেলে কাছে এসে খুব খারাপ অঙ্গভঙ্গি করল। রাস্তার পাশে বিআরটিসির ডাবল ডেকারের অনেক বাস থাকায় ফুটপাত পুরা আড়াল ছিল। ছেলেটা আমার কাছে সোজা হেঁটে আসছিল। খুব ভয় পেয়েছিলাম, আরেকটু হলেই আমার গায়ে হাত দিত। অল্পের জন্য বেঁচে গেছি।
ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, এটা কতটা কাম্য আমার জন্য। আমি আমার ক্যাম্পাসে নিরাপদ না, এর চেয়ে খারাপ কী হতে পারে। আমি এর সমাধান চাই। আশা করি সবাই চান ক্যাম্পাস পাগল আর নেশাখোর মুক্ত থাকুক। কিছুদিন আগে শামসুন্নাহার হলের সামনে আমার বান্ধবীর সাথে এক রিকশাওয়ালা বাজে ভাষায় কথা বলে ও ইঙ্গিত দেয়। সে এতটাই ভয় পেয়েছিল যে, তারপর থেকে হলেই থাকে না। এমনকি ওই কাহিনীর পর অনেক অসুস্থ ছিল, পুরো ট্রমাটাইজ হয়ে গিয়েছিল।
সার্বিক বিষয় অবহিত করে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরা সিটি কর্পোরেশনের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি, আবারো চাইবো। প্রক্টরিয়াল বডিকেও বলে দিয়েছি। আমাদের ছেলেমেয়েরা যদি এরকম লোকজন কোথাও দেখে তাহলে যেন আমাদের জানায়, আমরা তখন তাদের সরিয়ে দেব। আসলে চারিদিকে ফাঁকা রাস্তা তো এইজন্য এরা ঢুকে পড়ে।
আপনার মতামত লিখুন :