যশোর জেলা যুবদলের সহসভাপতি বদিউজ্জামান ধনী হত্যাকাণ্ডে বুধবার পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ অভিযুক্ত কাউকে আটক করতে পারেনি। এলাকার কোন্দলে তিনি খুন হয়েছেন বলে ধারণা পুলিশ ও স্বজনদের।
বুধবার সকালে জানাজা শেষে জেলা যুবদলের জ্যেষ্ঠ এ নেতাকে সমাহিত করা হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।
মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে যশোর শহরের নাজিরশংকরপুর চোপদারপাড়ায় নিজ বাড়ির সামনে সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মক জখম হন যুবদল নেতা বদিউজ্জামান ধনী। হাসপাতালে নেয়ার কিছুক্ষণ পর মৃত্যু হয় তারা।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসেন জানান, নিজ এলাকার নিজ দলের কর্মী শামীম আহমেদ মানুয়া নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে এলাকাগত দ্বন্দ্ব ছিল বদিউজ্জামান ধনীর। দলীয় রাজনীতিতে ধনী এগিয়ে গেলেও পিছিয়ে পড়েন মানুয়া। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মানুয়ার মেয়ে জামাই যুবলীগ কর্মী ইয়াসিন খুন হন।
ইয়াসিন হত্যা মামলায় বদিউজ্জামান ধনীকে আসামি করা হয়। অপরদিকে ধনী হত্যাকাণ্ডে রায়হান নামে এক যুবককে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। রায়হান মানুয়ার ভাগনে। ধনী হত্যার পর থেকে তারা পলাতক। মানুয়া ও রায়হানকে আটক করতে পারলে এ হত্যার জট খুলবে।
পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও জানান, ধনী হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি। তবে প্রকৃত অপরাধীদের আটকের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নিহতের বদিউজ্জামান ধনীর শ্যালক তপু রহমান জানান, স্থানীয় সন্ত্রাসী রায়হান, রহিম, আকাশসহ ৪/৫ জন সন্ত্রাসী ধনীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। দুর্বৃত্তরা তাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান।
তার দাবি, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শামীম আহমেদ মানুয়া নামে এক ব্যক্তি তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। মানুয়াকে ধরতে পারলেই এই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন হবে বলে তিনি মনে করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এলাকায় সজ্জন হিসেবে পরিচিত থাকলেও যুবদল নেতা বদিউজ্জামান ধনীর বিরুদ্ধে হত্যাসহ সন্ত্রাসী বিরোধী ও বিস্ফোরক আইনে ১২টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে যুবলীগ কর্মী ইয়াসিন আরাফাত হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন ধনী। এই মামলায় মাসখানেক আগে ধনী জেল থেকে বের হয়েছেন।
কেন্দ্রীয় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, বদিউজ্জামান ধনী একজন নির্ভেজাল রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। তার সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ ছিল না। এভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে তাকে হত্যার বিষয়টি আমরা মেনে নিতে পারছি না।
এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক প্রকৃত অপরাধীদের পুলিশ শনাক্ত করে বিচারের মুখোমুখি করবে এটাই প্রত্যাশা করি। আর ধনীর বিরুদ্ধে যে মামলার কথা বলা হচ্ছে তা রাজনৈতিক মামলা। বর্তমান সরকার সব পর্যায়ের বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন র্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের সদস্যরা।
এ বিষয়ে র্যাব-৬ যশোরের কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার নাজিউর রহমান জানান, তিনি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। র্যাবের পক্ষ থেকে ছায়া তদন্ত চলছে।
এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার বিকেলে যুবদল নেতা ধনীর মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে স্বজনেরা আসার পর বুধবার বেলা ১১টার দিকে শংকরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বেজপাড়া কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।
জানাজায় অংশগ্রহণ করেন যুবদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন হাসান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার, বিএনপি’র খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
আপনার মতামত লিখুন :