ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে পালানো শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী শেখ হাসিনা ভারতে বৈধভাবে ৪৫ দিন আশ্রয়ে থাকতে পারবেন। তবে সেই ৪৫ দিন শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার। এরপর তিনি সেখানে কী হিসেবে অবস্থান করবেন, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
দিল্লির নাচের পুতুলখ্যাত শেখ হাসিনা কূটনৈতিক পাসপোর্টের আওতায় ভারতে ৪৫ দিন অবস্থান করতে পারবেন। অবশ্য তার সেই পাসপোর্ট ইতোমধ্যেই বাতিল করেছে বাংলাদেশ সরকার। শুধু তাই নয় যুক্তরাজ্যের যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। যুক্তরাজ্য জানিয়ে দিয়েছে তারা শেখ হাসিনাকে যায়গা দেবেন না। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনার ভিসা বাতিল করেছে। বাংলাদেশে গণহত্যা করে পলাতক শেখ হাসিনার সামনে তিনটি পথ খোলা রয়েছে। তবে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দিল্লিকে সবকিছু উজার করে দেয়ার পুরস্কার হিসেবে তিনি ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন বলে ভারতের গণমাধ্যমগুলোতে খবর বের হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় ১৫ বছর শেখ হাসিনা ভারতের স্বার্থকে প্রাধাণ্য দিয়েছেন। তিনি ভারতের সেবাদাস হিসেবে দেশবিদেশে পরিচিতি পেয়েছেন। শেখ হাসিনা নিজেও বলেছিলেন, ‘আমি ভারতকে যা দিয়েছি ভারত সারাজীবন তা মনে রাখবে’। ফলে শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধির সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যেই ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। সে কারণে ভারত শেখ হাসিনাকে বিশেষ বিবেচনায় রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে পারে। আর সেটা হবে তিব্বতের ধর্মগুরু দালাই লামার মতোই।
তিব্বতে বৌদ্ধদের আধ্যাত্মিক ধর্মগুরু ১৯৫৯ সাল থেকে ভারতে আশ্রয়ে রয়েছেন। ভারতের ইতিহাসে কোনো বিদেশি ধর্মীয় নেতাকে বিশেষ রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার ঘটনা ছিল সেটিই প্রথম। তারপর থেকে ৬৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারতেই আশ্রয়ে রয়েছেন দালাই লামা। এবার প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের শাসনক্ষমতায় থেকে দিল্লির এজেন্ডা বাস্তবায়নের পুরস্কার হিসেবে শেখ হাসিনাও ভারতে দালাই লামার মতোই আশ্রয় পেতে যাচ্ছেন।
এর আগে শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে হত্যাকান্ডের পর শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালের পর ভারতেই আশ্রয়ে ছিলেন। সে সময় দীর্ঘ ছয় বছর তিনি সেখানে থেকেছেন। বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী ভারতে আশ্রয় নিয়ে ‘র’ এর সহায়তায় বাংলাদেশ পুনর্দখলের চেস্টা করেছিলেন। বাংলাদেশ দখলে ব্যর্থ হয়ে দীর্ঘদিন তিনি ভারতে নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর নিজ ইচ্ছায় দেশে ফিরে আসেন। ১৯৯২ সালে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহর পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছিল ভারত। তবে সে সময় নাজিবুল্লাহ দিল্লিতে আসতে ব্যর্থ হন। পরে তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। ২০১৩ সালে মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহামেদ নাশিদকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয় ভারত। এছাড়াও ১৯৫০ সালে নেপালের মহারাজা ত্রিভুবন বীর বিক্রম শাহকেও আশ্রয় দিয়েছিল দেশটি।
ঢাকায় গণহত্যাকরে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা ভারতে কী স্ট্যাটাসে অবস্থান করছেন, সেটা এখনো অজানা। এ বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে এখনো কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। অবশ্য এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য চাওয়া হয়নি। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাকে চুপ থাকতে বলা হয়েছে। একাধিক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালে মামলার কার্যক্রম শুরু হলে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে। উল্লেখ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্দী বিনিময় চুক্তি রয়েছে।
শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে কিনা সে বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মানুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগও রয়েছে। আমরা কূটনৈতিক চ্যানেলেই সম্পর্কটা রাখতে চাই। শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানের ৪৫ দিন পূর্ণ হতে চলেছে। তাকে ফেরত আনার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, সব কিছুই আইন দিয়ে চলে না। ভারত সরকার তাকে আশ্রয় দিয়েছে, তিনি সেখানেই আছেন। আমাদের সেভাবেই দেখতে হবে। ভারতে শেখ হাসিনার স্ট্যাটাসও জানা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার বিষয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। এটি অনুযায়ী ভারতে যদি আমাদের কোনো দোষী মানুষ থাকেন, উনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোন আর যাই হোন না কেন ওনার প্রত্যর্পণ আমরা চাইতে পারি। শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে তাকে ফেরত চাওয়া হবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। তারপর থেকে তিনি দিল্লিতেই অবস্থান করছেন।
আপনার মতামত লিখুন :