দুর্নীতির বাড়িঘরে এখন বিমানের বসত


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ৩, ২০২২, ৯:১৪ পূর্বাহ্ণ /
দুর্নীতির বাড়িঘরে এখন বিমানের বসত

অনিয়ম-দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার ভারে কাবু হয়ে পড়েছে ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স’। আকাশপথের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির প্রতিটি ধাপেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো নানা প্রতিকূলতার মধ্যে লাভজনকভাবে টিকে থাকলেও সরকারি নানা সুবিধা নিয়ে লোকসানের বৃত্ত থেকে বেরোতে পারছে না বাংলাদেশ বিমান। পাশাপাশি শিডিউল বিপর্যয় আর একের পর এক দুর্ঘটনায় কোটি কোটি টাকার ক্ষতি ও গ্রাউন্ডেড হওয়ার ঘটনা ঘটছে বিমানে।

বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও দুর্নীতি-অনিয়মের ভারে দৃশ্যত রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটি ডুবতে বসেছে। বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থা বিমানের সার্বিক অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিষয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধান চালায়। এর পর বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তারা একটি প্রতিবেদন দাখিল করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।

১৬ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহির্গমন ও আগমনী এলাকার অনিয়ম ছাড়াও বিমানের ২৮ খাতে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। বিমানকে সুশৃঙ্খল এবং যাত্রীসেবা বিশ্বমানের করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে গুরুত্বপূর্ণ ১১টি বিষয় পর্যবেক্ষণের পর প্রতিষ্ঠানটির মান উন্নয়নে ১০টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে তুলে ধরা অনিয়ম-দুর্নীতির মধ্যে রয়েছে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের বহির্গমন টিকিট বুকিং ও বিক্রয় কাউন্টারে যাত্রী হয়রানি, চেকইন কাউন্টারে অব্যবস্থাপনা, ব্যাগেজ বিলম্বিত হওয়া, যাত্রী ওঠানামা সংক্রান্ত বিড়ম্বনা, বিমানে লোডকৃত মালামালের ওজনে অসঙ্গতি, ট্রাফিক হেলপার কর্তৃক যাত্রীদের মালামাল বেল্টে এলোপাতাড়ি নিক্ষেপ, হুইল চেয়ার কর্মীদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড, টিকিট দুর্নীতি ও বিদেশি এয়ারলাইন্সের সঙ্গে বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ,

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের স্টাফদের স্বর্ণ ও চোরাচালানে সম্পৃক্ততা, বিমান কার্গো হেলপারদের মেয়াদোত্তীর্ণ পাস ব্যবহার, ব্যাগেজ হ্যান্ডলিংয়ে অব্যবস্থাপনা ও আগমনী যাত্রীদের ভোগান্তি; র‌্যাম্প এলাকা বা বে-এলাকায় অনিয়ম, বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টারের (বিএফসিসি) নিম্নমানের খাবার সরবরাহ, হ্যাঙ্গারের অব্যবস্থাপনা ও যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাব,

আমদানি ও রপ্তানি কার্গো কমপ্লেক্সে বিমান কার্গোর হেলপারদের ডিউটি রোস্টারে অনিয়ম, পাইলট নিয়োগ কেন্দ্র করে অসন্তোষ, নতুন সফটওয়্যারের কারণে যাত্রী ভোগান্তি, লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড শাখায় যাত্রী হয়রানি, অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অনিয়ম ও যাত্রী হয়রানিসহ ২৮টি অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার চিত্র প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

এসব বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ালাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল আমাদের সময়কে বলেন, প্রতিবেদন দাখিল করা বিভিন্ন সংস্থার রুটিন ওয়ার্কের মধ্যে পড়ে। প্রতিবেদনে যেসব ব্যত্যয় উঠে এসেছে সেগুলোকে প্রাধান্য দিতে আমরা সব সময়ই সচেষ্ট রয়েছি।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত বিশেষ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমান বহরে মোট ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে। এসব বিমান ১৭টি আন্তর্জাতিক রুটে ১১টি এবং ৭টি অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যস্থাপনার কারণে সম্প্রতি চরম যাত্রী সংকটে পড়েছে।

বিমানের বিভিন্ন ফ্লাইট বাতিল, পুনরায় ফ্লাইট টাইম নির্ধারণ, প্রায়শই কারিগরি সমস্যাজনিত ফ্লাইট বাতিল, কর্মকর্তা কর্মচারীদের দায়িত্বে মন্থরগতি ও কর্মে অবহেলা, বাতিলকৃত ফ্লাইটের যাত্রীদের খাবার ও পানীয় সরবরাহ এবং হোটেলে থাকার ব্যবস্থা প্রভৃতি কারণে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

এ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ী ও বেতন-ভাতা নির্ধারিত হওয়ায় কাজের প্রতি তাদের উদাসীনতা, রাজনৈতিক নেতা ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রভাব খাটিয়ে অদক্ষ জনবল নিয়োগ, অদক্ষ কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও পরিচালনায় নিয়োজিত করা, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত মনিটরিং ও তদারকির অভাব, নির্ধারিত ডিউটি সময় শেষ না করে অথবা কাজ অসম্পূর্ণ রেখে দ্রুত অফিস ত্যাগ করা ছাড়াও নানা অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়- শাহজালাল বিমানবন্দরের বহির্গমন কনকোর্স হলে আন্তর্জাতিক রুটের টিকিট বুকিং ও বিক্রয়কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রায়শই যাত্রী হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। সেলস কাউন্টারের কর্মচারীরা প্রায় সময় নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতা ও মোবাইলে কথোপকথনে ব্যস্ত থাকে। ফলে অনেক সময় আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীরা সময়মতো চেকইন করতে পারেন না এবং ফ্লাইট মিস করছেন।

চেকইন কাউন্টারে অব্যবস্থাপনা ও নতুন সংশোধিত সফটওয়্যার পরিচালনায় বিমানের সংশ্লিষ্ট কর্মীরা দক্ষ না হওয়ায় একজন যাত্রীর চেকইন করতে প্রচুর সময় লাগছে। এ ছাড়া একই সঙ্গে অনেক ফ্লাইটের চেক-ইন চলমান থাকাকালে বিমানের চেক-ইন কাউন্টারগুলোতে লোকবলের সংকট দেখা দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ফ্লাইট শিডিউল পরিবর্তন হলেও বিমান কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে যাত্রীদের অবহিত করা ও যাত্রীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থায় গড়িমসি করে।

এ ছাড়া গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের স্টাফরা যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে থকেন। এসব কারণে দূরদূরান্ত থেকে আগত যাত্রীরা অনেক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। যেমনÑ প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক যাত্রীদের জন্য হুইল চেয়ার বুকিং দেওয়া থাকলেও হেল্পাররা সেটি যথাসময়ে আনেন না। ফলে বয়স্ক যাত্রীদের চেক-ইন কার্যক্রম থেকে শুরু করে অন-বোর্ড হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

ইমিগ্রেশন শেষ করার পর বহির্গমন এলাকার বিভিন্ন স্থানে বসে থাকা যাত্রীদের যথাসময়ে না ডাকায় কিছু কিছু যাত্রীদের খুঁজে পেতে গিয়ে ফ্লাইট বিলম্ব হচ্ছে। বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের স্টাফদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, অসহযোগিতা এবং যাত্রীসেবার প্রতি উদাসীনতা চরমে পৌঁছেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্টেশন অ্যাসোসিয়েশনের (ইয়াত) গাইডলাইন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ল্যান্ড করার পর ৪০ মিনিটের মধ্যে ব্যাগেজ নির্ধারিত বেল্টে পাঠানোর কথা। কিন্তু র‌্যাম্প এলাকার অব্যবস্থাপনার কারণে বেল্টে ব্যাগেজ আসতে প্রায় সময়ই ২-৩ ঘণ্টা লাগছে। অগ্রাধিকার ব্যাগেজ (বিজনেস ক্লাস অ্যান্ড কেবিন ক্রু) বেল্টে আগে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও বিমানের স্টাফরা ব্যাগেজ এলাকা থেকে নিজেদের ইচ্ছামতো তা বেল্টে ছাড়েন।

এতে বিজনেস ক্লাস অ্যান্ড কেবিন ক্রুদের লাগেজ খুঁজে পেতে বিলম্ব হয়। বেল্ট এলাকায় বিমানের স্টাফরা যাত্রীদের লাগেজ পেতে সহায়তা করার কথা। কিন্তু তা না করে নিয়মবহির্ভূত তারা প্রটোকলে ব্যস্ত থাকেন। ফলে সাধারণ যাত্রীরা লাগেজ খুঁজে পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিমান কর্মীদের অদক্ষতা ও অমনোযোগিতার কারণে প্রায়শই আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের যাত্রীদের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে এবং অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের যাত্রীদের আন্তর্জাতিক টার্মিনালে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে।

বিমানের পাইলটদের নির্ধারিতের চেয়ে লোডকৃত মালামাল অনেক বেশি থাকে। এতে সরকার একদিকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অন্যদিকে উড়োজাহাজ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে বহির্গমন করছে। বাংলাদেশ বিমানের ট্রাফিক হেলপাররা যাত্রীদের লাগেজ বেল্ট থেকে বিমানে এবং বিমান থেকে বেল্টে দেওয়ার সময় এলোপাতাড়িভাবে নিক্ষেপ করে। এতে যাত্রীদের লাগেজ ও মালামাল নষ্ট হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।

হুইল চেয়ারের কর্মীরা বয়স্ক ও শারীরিক অক্ষম যাত্রীদের এয়ারপোর্টের ভেতরে প্রবেশ করানোর পর চেক ইন এলাকায় দীর্ঘ সময় হুইল চেয়ারে বসিয়ে রাখেন। অনেক সময় যাত্রীদের একা বসিয়ে রেখে তারা নিজেদের মধ্যে খোশ গল্প, যাত্রীদের কাছ থেকে বকশিশ/অতিরিক্ত টাকা দাবিসহ তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ও অশোভনীয় আচরণ করে থাকেন। বিমানের নিজস্ব কয়েকটি সেলস কাউন্টার ছাড়াও ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে ৪৬০টি ট্রাভেল এজেন্সিসহ দেশে-বিদেশে বেশ কিছু ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট বিক্রি করে থাকে।

বিদেশি এয়ারলাইন্সের যোগসাজশে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি ভুয়া বুকিংয়ের মাধ্যমে আসন ব্লক করে রাখে। ফলে যাত্রীরা বাংলাদেশ বিমানের টিকিট না পেয়ে বিদেশি এয়ারলাইন্সের টিকিট কাটতে বাধ্য হন। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে নির্দিষ্ট কিছু আসন রেখে বাকি আসন বিমানের কর্মকর্তারা উন্মুক্ত করে দেন।

যেমন মধ্যপ্রাচ্যগামী বোয়িং ৭৩৭ বিমানে ১৬২টি আসন থাকলেও পে-লোড-এর অজুহাত দেখিয়ে ১২৫-১৩০টি আসন অনলাইনে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বিমান কর্মকর্তারা নির্দিষ্ট কিছু সময়ে ধাপে ধাপে টিকিট উন্মুক্ত করে, ফলে বিমানের সব টিকিট বিক্রয় হয় না। নির্ধারিত তারিখের আগেই ট্রাভেল এজেন্সিগুলো টিকিট বাতিল ও টিকিট রিসিডিউল করে থাকে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের স্টাফরা স্বর্ণ ও চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে কার্গো হেলপার, ক্লিনার, বিমান সিকিউরিটি, ক্যাটারিং স্টাফ স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ মিলছে উল্লেখ্যযোগ্য হারে।

শাহজালাল বিমানবন্দরের আমদানি ও রপ্তানি কার্গো এলাকায় অনেক কার্গো হেলপাররা দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদ উত্তীর্ণ পাস ব্যবহার করে আসছে। মেয়াদোত্তীর্ণ পাস ব্যবহারকারী কার্গো হেলপাররা অন্যান্য দিন আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সের ভেতরে প্রবেশ করতে পারলেও সরকারি ছুটির দিন এবং রাত্রিকালীন সময়ে কার্গো এলাকার ভেতরে প্রবেশ করতে না পারায় কার্গো হেলপারের সংকট তৈরি হয়।

হুইল চেয়ার হেলপাররা বিভিন্ন দেশে শ্রমিক ভিসায় বহির্গামী স্বল্প শিক্ষিত যাত্রীদের ইডি কার্ডের তথ্য ইংরেজিতে পূরণের মাধ্যমে অনৈতিক আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে যাত্রীদের বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে থাকে। ইডি কার্ড পূরণ করে টাকা গ্রহণকালে বিভিন্ন সময় বিমানের স্টাফদের আটক করা হয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অব্যবস্থাপনার ফলে বিমান অবতরণের পর বিমান থেকে ব্যাগেজ কন্টেইনার বেল্ট এলাকায় পৌঁছতে প্রায় ৩০-৪০ মিনিট আবার কখনো ১ ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে।

প্রতি শিফটে প্রায় ১৮০ জন লোকবল ব্যাগেজ লোডিং এবং আনলোডিংয়ের কাজ করে যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এ ছাড়া অনেক ট্রাফিক হেলপার তাদের এপ্রোন লুকিয়ে অবৈধভাবে ব্যাগেজ এলাকা থেকে বেল্ট এলাকায় প্রবেশ করে আগমনী যাত্রীদের প্রটোকল করে থাকেন এবং গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজে তাদের উদাসীনতা দেখা যায়।

আগমনী যাত্রীরা লাগেজ সংগ্রহের জন্য বেল্ট এলাকায় দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকায় সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা স্টাফদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়ে ভাঙচুরও করে থাকেন। প্রায়শই অভ্যন্তরীণ কানেক্টিং ফ্লাইটের যাত্রীরা বেল্ট এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে লাগেজ সংগ্রহ করতে গিয়ে তাদের ফ্লাইট মিস করেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রতিদিন ১৫-২০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। কিন্তু বিমানের কিছুসংখ্যক অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে যাত্রীরা প্রায় সময় হয়রানির শিকার হন। বিশেষ করে প্রবাসী যাত্রীরা বাংলাদেশে এসে অভ্যন্তরীণ রুটে ভ্রমণকালে লাগেজের মালামাল বহন করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হন। এ ছাড়া বকশিশ নিয়ে টিকিট বিক্রি করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, অভ্যন্তরীণ রুটে একজন যাত্রী ২০ কেজি লাগেজ বহন করতে পারে। তবে ২০ কেজির বেশি হলে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক প্রতি কেজি মালামাল বহনে ১৫০ টাকা করে জমা দিতে হয়। অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারি নির্দেশনা না মেনে রসিদ ছাড়া প্রতি কেজি মালামালে ৮০-১০০ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন।

অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনায় কর্মরত স্টাফরা অন্য এয়ারলাইন্স থেকে টোকেন মানি গ্রহণ করে ও ইচ্ছাকৃতভাবে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের কার্যক্রম বিলম্বিত করেন। এতে যাত্রীরা বিমানের ওপর আস্থা হারিয়ে বেসরকারি বিমানগুলোয় গমনাগমন করেন।

বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টারের (বিএফসিসি) নিম্নমানের খাবার সরবরাহ ও অব্যবস্থাপনার বিষয়ও উঠে এসেছে ওই প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়- সম্প্রতি বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টার (বিএফসিসি) কর্তৃক সরবরাহকৃত খাবারের মান ও শ্রেণিবিভাগ নিয়ে যাত্রীদের মাঝে অসন্তোষ লক্ষ করা যাচ্ছে।

বিশেষ করে বিভিন্ন রুটে বিজনেস ক্লাস ও ইকোনমি ক্লাসের যাত্রীদের টিকিট ফেয়ারের প্রায় দ্বিগুণ পার্থক্য থাকলেও বিমানে তাদের খাবারের মেনু ও পরিবেশনে কোনো পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না। অন্যান্য এয়ারলাইন্স যেমন এমিরেটস এয়ারলাইন্সের বিজনেস ক্লাসে বুফে সিস্টেম, টার্কিশ এয়ারলাইন্সে দুই মিলের ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের মেনুতে ভেজ, নন ভেজ, খাসি, মুরগি, বিফ প্রভৃতি অপশন থাকলেও বিমানে এ ধরনের ব্যবস্থা নেই।

বিএফসিসির প্রাপ্ত অসঙ্গতি হিসেবে আরও উল্লেখ করা হয় বেকারিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য তৈরি, হ্যান্ড গ্লাভস না থাকা, একই জুতা (বাইরে ব্যবহৃত) পরিহিত অবস্থায় সেফদের খাবার তৈরি, মশামাছির উপদ্রব ও জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কার কথা। এ ছাড়া মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবে অসঙ্গতি; ফুড ট্যাগিং, মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ সঠিকভাবে উপস্থাপন না করা ইত্যাদি।

এ ক্ষেত্রে কোনো গোষ্ঠী আঁতাতের মাধ্যমে বিএফসিসির খাবারের মান নষ্ট করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে মর্মে প্রতীয়মান হয়।

অন্যদিকে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সেবার মান বৃদ্ধি করার জন্য তাদের পুরনো সফটওয়্যার সিতার পরিবর্তে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নতুন সফটওয়্যার সাবের ইন্সটল করে। কিন্তু নতুন সফটওয়্যার ইন্সটল করার পর চেকইন কাউন্টারে কর্মরত স্টাফদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। ফলে চেকইন করতে কিছুটা বেশি সময় লাগছে।