দেশকে পঙ্গু করে দিচ্ছে ব্যাংক খাতের দুর্নীতি


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ২৭, ২০২২, ৭:০১ পূর্বাহ্ণ /
 দেশকে পঙ্গু করে দিচ্ছে ব্যাংক খাতের দুর্নীতি

ঋণ জালিয়াতির নামে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঘটছে একের পর এক দুর্নীতির ঘটনা। কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির কেলেঙ্কারির রেশ মিলিয়ে না যেতেই বেরিয়ে পড়ছে অন্য কোন ব্যাংকের শত শত কোটি টাকা লুটপাটের তথ্য। বিভিন্ন সময়ে এই অর্থ লোপাটের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু যারা এই লুটপাটের সঙ্গে জড়িত তাদের অনেককেই বিচারের আওতায় আনা যায়নি এখনো। এ ধরনের ঘটনা ভাবিয়ে তুলছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকদেরও।

এসব আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতরা আগাম জামিনের জন্য যাচ্ছেন হাইকোর্টে। কেউ কেউ ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের চিত্র নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রিটও দায়ের করেছেন। এসব মামলার শুনানিকালে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করছে হাইকোর্ট। গতকাল তেমনি একটি মামলায় উষ্মা প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেছে, ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের দুর্নীতির অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। সংঘটিত এসব দুর্নীতির অপরাধ দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশ এগিয়ে যাবে কীভাবে। ইসলামী ব্যাংকের একটি ঋণ জালিয়াতির মামলায় চার আসামির আগাম জামিনের শুনানিকালে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এই মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে আসামিদের আগাম জামিন না দিয়ে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়।

হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংকসহ রিলায়েন্স ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিংসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের তথ্য এখন জনগণের মুখে মুখে। এই লুটপাটের ঘটনায় একের পর এক মামলা করেছে দুদক। অনেক মামলা তদন্তাধীন, অনেক মামলার বিচার শুরু হয়েছে। আবার অনেক মামলার তদন্ত এখনো শুরুই হয়নি। রয়েছে অনুসন্ধান পর্যায়ে। আবার অনেক মামলায় ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ঊর্র্ধ্বতন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ অনেক ব্যবসায়ীকে দণ্ড দিয়েছে আদালত। কিন্তু তার পরেও বন্ধ হচ্ছে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ লুটপাটের ঘটনা। এই দুর্নীতি বন্ধ না হওয়ায় উষ্মা হাইকোর্টের। এর আগে বেশ কয়েকটি লুটপাটের ঘটনা নিয়ে হাইকোর্ট নানা মন্তব্য করেছে।

দুর্নীতিবাজদেরকে কোন ধরনের ছাড় নয়

পদ্মা বহুমুখী সেতুর দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ১৭৬ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলার প্রধান আসামি এরশাদ ব্রাদার্স করপোরেশনের মালিক মো. এরশাদ আলী মার্চ মাসে যান আগাম জামিন নিতে। ঐ আসামিকে জামিন না দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে হাইকোর্ট। আদালত বলে, জাল কার্যাদেশ এবং অবৈধ ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছে আসামিরা। এ ধরনের দুর্নীতিবাজদেরকে কোন ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা আগেও ছাড় দেইনি, এখনো দেব না।

হলমার্কের ঋণ কেলেঙ্কারির মামলার অন্যতম আসামি জেসমিন ইসলামের কৌঁসুলির উদ্দেশে হাইকোর্ট বলে, চাল নেই চুলো নেই কিন্তু এরপরেও নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান বানিয়ে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। বড় লোক হওয়ার এতই উচ্চাকাঙ্ক্ষা! যে ঋণ নিয়েছেন তার সুবিধাভোগী হলেন হলমার্কের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম ও এমডি তানভীর মাহমুদ। এ কারণেই ঐ ঋণের দায় এমডির পাশাপাশি তাকেও নিতে হবে।

অর্থ পাচারকারীরা যত বড় রুই-কাতলা হোক আইনের আওতায় আনতে হবে

প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) এর মামলায় হাইকোর্ট বলে, দুর্নীতিবাজ, অর্থ পাচারকারীরা যত বড় রুই-কাতলা হোক না কেন, তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। কোন ধরনের ছাড় দেওয়া চলবে না। আদালত বলে, আমাদের সকলের উচিত দেশের সম্পদ রক্ষা করা। সবাইকে এ কাজ করতে হবে। অর্থ পাচারকারীরা যাতে আইনের জালে ধরা পড়ে সে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। আমাদেরকে সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন এ দেশকে সোনার বাংলা গড়ার। কাজেই জাতির পিতার সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।

দরকার সামারি ট্রায়াল

এমনকি এ ধরনের দুর্নীতির মামলার বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলে, ঋণ জালিয়াতির মামলাগুলোর তদন্ত থেকে শুরু করে বিচার শেষ হতে লাগছে দীর্ঘ সময়। দ্রুত বিচার পেতে হলে এ ধরনের মামলার সামারি ট্রায়াল (সংক্ষিপ্ত বিচার) করা দরকার। কারণ নিম্ন আদালত, হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগ পর্যন্ত মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে লেগে যাচ্ছে বছরের পর বছর। ফলে বিচারের এই দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ঋণ জালিয়াতির মতো দুর্নীতির অপরাধগুলো বারবার সংঘটিত হচ্ছে। যদি দ্রুত বিচার করা সম্ভব হয় তাহলে এ ধরনের অপরাধ রোধ করা সম্ভব হবে।

প্রসঙ্গত, গতকাল হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন ইসলামী ব্যাংকের চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ শাখার চার কর্মকর্তা। পরস্পর যোগসাজশে ভুয়া ঋণ হিসাব খুলে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করার অভিযোগে গত ২০ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এই মামলায় সাবেক বিনিয়োগ ইনচার্জ মো. বকর, ব্যবস্থাপক (অপারেশন) মো. মনিরুজ্জামান খান, ব্রাঞ্চের প্রধান মো. আফজাল হোসেন ও কর্মকর্তা মনোয়ারা খাতুন আত্মসমর্পণ করে হাইকোর্টে আগাম জামিন চান। শুনানি শেষে হাইকোর্ট জামিন না দিয়ে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়। আসামিদের পক্ষে মো. মাহবুব মোর্শেদ, দুদকের পক্ষে ফৌজিয়া আক্তার পপি ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক শুনানি করেন।