আলোচনা সভায় প্রধান উপদেষ্টার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। ছবি – ইউএনবি
ভয়েস কল ও ইন্টারনেটের মূল্য কমিয়ে আনতে হবে। ডাটার কোনো মেয়াদ থাকবে না। ইন্টারনেট যেকোনো অজুহাতে বাজে কোন কারণে সরকার বন্ধ করবে না এই ঘোষণা অথবা এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। পাশাপাশি ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে।
দেশে আর কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে যাতে ইন্টারনেট বন্ধ না হয়, সে লক্ষ্যে নীতিমালা তৈরি করতে সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ‘দ্রুতগতির মানসম্পন্ন ও সহজলভ্য ইন্টারনেট প্রাপ্তিতে করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ফয়েজ আহমদ বলেন, বাংলাদেশে গ্রাউন্ড আর্থ স্টেশন স্থাপনে সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের টেলিকম জায়ান্ট স্টারলিংকের অংশীদার হয়ে কাজ করছে কয়েকটি বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান।
বর্তমানে স্টারলিংকের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে রয়েছে। এই সফরে বাংলাদেশে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা চালু করতে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি হয়েছে।
এর আগে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি স্টারলিংকের প্রতিষ্ঠাতা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ককে স্টারলিংক স্যাটেলাইট সেবা চালুর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমে অংশ নিতে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
ফয়েজ আহমদ বলেন, ভূমি বরাদ্দ, নির্মাণ সহায়তা ও অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের মতো কার্যক্রম পরিচালনায় এসব সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে। স্টারলিংক টিম এই কাজের জন্য কিছু নির্দিষ্ট স্থান চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব সম্পত্তি এবং কিছুক্ষেত্রে হাইটেক পার্কের জমি ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করছে স্টারলিংক।
তিনি আরো বলেন, ‘প্রকল্পের স্থান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা চলছে। স্টারলিংক বাংলাদেশের শহরে কিংবা প্রান্তিক অঞ্চলে, উত্তর অঞ্চল কিংবা উপকূলে লোডশেডিং কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝামেলামুক্ত রিলায়েবল এবং হাইস্পিড ইন্টারনেটের নিশ্চয়তা দেবে।’
এছাড়াও এটি নিরবচ্ছিন্ন সেবা এবং উচ্চমান কোয়ালিটি সার্ভিসের নিশ্চয়তা দেবে বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি। প্রধান উপষ্টোর এই তথ্য সহকারী জানান, ‘যেহেতু বাংলাদেশে টেলিকম গ্রেড ফাইবার নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি সীমিত এবং প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতে এখনো লোডশেডিংয়ের সমস্যা রয়েছে তাই স্টারলিংক আমাদের উদ্যোক্তা, ফ্রিল্যান্সার, এনজিও এবং এসএমই ব্যবসায়ীদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড এবং ডিজিটাল ইকোনমিক ইনিশিয়েটিভগুলোকে বেগবান করবে।’
আগামী ৯০ দিনের মধ্যে স্টারলিংকের সাথে একটা বোধগম্য মডেল বাস্তবায়নের চেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এ সময় বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিকম বিশেষজ্ঞ মোস্তফা হুসাইন।
তিনি বলেন, টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি সেবাখাতে সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে। ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেটের গতি হতে হবে সর্বনিম্ন ২০ এমবিপিএস। কোয়ালিটি বেঞ্চমার্ক নির্ধারণ করতে হবে। ভয়েস কল ও ইন্টারনেটের মূল্য কমিয়ে আনতে হবে। ডাটার কোনো মেয়াদ থাকবে না। ইন্টারনেট যেকোনো অজুহাতে বাজে কোন কারণে সরকার বন্ধ করবে না এই ঘোষণা অথবা এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। পাশাপাশি ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে।
টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি সেবাখাতের সংস্কারের জন্য তিনি কিছু সুপারিশ করেন। সুপারিশে তিনি বলেন, অবৈধ আইএসপি ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। সেই সাথে মোবাইল অপারেটরদের আইএসপি ব্যবসা থেকে বিরত রাখতে হবে। ওভারহেড ফাইবার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে। ব্যান্ডউইথ ও এনটিটিএন এর দাম নির্ধারণ না করে বাজার প্রতিযোগিতায় ছেড়ে দিতে হবে। ইন্টারনেট এর ওপর কর কমিয়ে আনতে হবে। সহজ লভ্য হ্যান্ডসেট গ্রাহকদের কিস্তির মাধ্যমে অপারেটরদের বিক্রয়ের জন্য বাধ্য করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, মোবাইল অপারেটর যদি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায় আসে তাহলে আইএসপির ব্যবসা থাকবে।
সূত্র : ইউএনবি
আপনার মতামত লিখুন :