১৯৭০ সালে সামরিক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান লিগ্যাল ফ্রেইমওয়ার্ক অর্ডারের অধীন পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র রচনার লক্ষ্যে যে নির্বাচনের আয়োজন করেন সেটিতে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ৩০০টির মধ্যে ১৬৯টি আসন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত ছিল। এই ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭টিতে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে দলটি পাকিস্তানের একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে সরকার গঠনের জন্য জনগণের সমর্থন পায়। নির্বাচন-পরবর্তী শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর বিষয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে এ দেশের সাধারণ মানুষ সশস্ত্রপন্থায় স্বাধিকারের পথে অগ্রসর হয়। স্বাধিকারের সংগ্রাম চলাকালীন দেশের মুক্তিকামী ছাত্র, শ্রমিক, জনতা, রাজনীতিকের একটি অংশ পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে গেরিলা রণকৌশলে দেশকে মুক্ত করার সংগ্রামে লিপ্ত হন। অপর একটি অংশ দেশে থেকে স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। উভয় দলকে এ দেশের সাধারণ মানুষ নিজেদের জীবন ও সম্পদ বিপদাপন্ন করে অন্ন, বস্ত্র, অর্থ ও আশ্রয় সহায়তা দেন।
নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ১৯৭১ সালে ১০ এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে যে প্রবাসী সরকার গঠিত হয়েছিল সেটি সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ছিল। তৎকালীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধকালীন পাকিস্তানের কারাগারে অন্তরীণ থাকায় তার স্থলে প্রবাসী সরকারে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিরূপে তার রাজনৈতিক সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলাম আসীন হন। এ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তাজউদ্দীন আহমদ।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করলে স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের অন্তরীণ অবস্থা হতে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি লন্ডন ও দিল্লি হয়ে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় আসার পর ট্রাকযোগে তৎকালীন রেসকোর্সের (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসভা স্থলে যাওয়ার সময় তিনি তার অপর রাজনৈতিক সহচর প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের নিকট আগ্রহ ব্যক্ত করেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে অভিষিক্ত হতে ইচ্ছুক। স্বীয় অভিপ্রায় অনুযায়ী ১২ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করে দায়িত্ব পালনে রত হন।
১৯৭০ সালে পাকিস্তানের শাসনামলে একই সাথে জাতীয় প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও স্বাধীনতা-পরবর্তী পৃথক সত্তা নিয়ে প্রাদেশিক পরিষদের আবশ্যকতা না থাকায় উভয় পরিষদের সদস্যদের সমন্বয়ে কনস্টিস্টুয়েন্ট অ্যাসেমবলি (গণপরিষদ) গঠিত হয়। গণপরিষদ স্বল্পতম সময়ের মধ্যে স্বাধীন দেশের জন্য শাসনতন্ত্র রচনা করে যা ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর হতে কার্যকর হয়। নতুন শাসনতন্ত্রের অধীন ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। নির্বাচনটি ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত হয়। ক্ষমতাসীনরা সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩টিতে বিজয় নিশ্চিত করে। সে নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছিল স্বাধীনতাযুদ্ধে সশস্ত্র অংশগ্রহণকারী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল। নির্বাচনটির স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। অনেক আসনের বিজয়ী বিরোধী প্রার্থীকে অন্যায়ভাবে পরাভ‚ত করার ঘটনাসমূহ পীড়াদায়ক হিসেবে এখনো মানুষের স্মৃতিতে রয়েছে।
প্রথম জাতীয় সংসদের মেয়াদকালের প্রায় মাঝপথে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদে সংক্ষিপ্ত ১২ মিনিটের আলোচনায় সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা রহিত করে একদলীয় রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থার প্রবর্তনপূর্বক শেখ মুজিবুর রহমানকে আজীবন রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। একদলীয় বাকশাল প্রবর্তনের পর সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করা হয়। জাতীয় সংবাদপত্রের সংখ্যা চারটিতে সীমাবদ্ধ করে অপরগুলোর প্রকাশনা নিষিদ্ধ করা হয়।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে বন্যা ও দুর্ভিক্ষে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। সে সময় দ্রব্যমূল্য দেশের সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাওয়ায় আওয়ামী লীগ দ্রুত জনসমর্থন হারায়। বাকশাল প্রতিষ্ঠার ছয় মাসের মাথায় শেখ মুজিবুর রহমানের অপর ঘনিষ্ঠ সহকর্মী বাকশাল সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থানে শেখ মুজিবুর রহমান দু’কন্যা ছাড়া পরিবারের অপরাপর সদস্যসহ মর্মান্তিকভাবে নিহত হন। খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতি শাসিত যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় তাতে শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশাল মন্ত্রিসভার ২১ জন মন্ত্রী যোগ দেন।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার অভ্যুত্থানে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে খন্দকার মোশতাক আহমেদ ক্ষমতাচ্যুত হন। আর বন্দিদশা হতে মুক্ত হয়ে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। জিয়াউর রহমান প্রথমত জাগ দল (জাতীয় গণতান্ত্রিক দল) এবং পরবর্তীতে বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) গঠনের মধ্য দিয়ে রাজনীতির মাঠে প্রবেশ করেন। তিনি রাষ্ট্রপতি পদে আসীন থাকাকালীন ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে তিনি বাকশালের বিলোপ ঘটিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তন করেন। সংবাদপত্র প্রকাশে বিধিনিষেধ বাতিল করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। ওই নির্বাচনে বিএনপি ও পুনর্গঠিত আওয়ামী লীগসহ দেশের অপরাপর রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। এতে বিএনপি ২০৭টি ও পুনর্গঠিত আওয়ামী লীগ ৩৯টি আসন পায়। অবশিষ্ট আসন অপরাপর রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা বিজয়ী হন। দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী সংসদ গঠিত হলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে একদলীয় শাসনের বিলোপ ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়।
আওয়ামী লীগ দলটি ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান শাসনামলে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে দলটির নাম আওয়ামী লীগ করা হয়। পাকিস্তান শাসনামলে দলটি অব্যাহতভাবে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে এবং ১৯৫৪ ও ১৯৫৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সীমিত সময়ের জন্য শাসনক্ষমতা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে। গণতন্ত্র, সাধারণ মানুষের অধিকার এবং বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য যে দলটি জন্মলগ্ন থেকে ১৯৭০ সালের নির্বাচন অবধি এবং তৎপরবর্তী বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের পর বাকশাল প্রবর্তনের পূর্ব পর্যন্ত আন্দোলন সংগ্রামে রত থেকে গণতন্ত্রের সপক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করেছে, সে দল ও তার শীর্ষ নেতার কাছ থেকে একদলীয় শাসনের মধ্য দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রের বিলোপসাধন প্রত্যাশিত ছিল না। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নিহত হওয়ার পর তার শাসনামলের উপ-রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পদে আসীন হন। রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার সামরিক শাসক এরশাদ দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত হলে এরশাদ রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হন এবং পরবর্তীতে সাজানো নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি পদে নিজের বিজয় হাসিল করেন।
১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ ক্ষমতা ত্যাগে বাধ্য হলে তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী কর্মরত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন অস্থায়ী সরকারের অধীন পঞ্চম সংসদ নির্বাচন হয়। এ নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল। এতে দেশের সব রাজনৈতিক দলের জন্য অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হওয়া উন্মুক্ত ছিল। বড় দু’টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কোনোটিই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৫১ আসনে জয়ী হতে পারেনি। এ নির্বাচনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি ১৪০টি আসনে বিজয়ী হয়ে ১৮টি আসন প্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে। ওই নির্বাচনে সম্মিলিতভাবে বিরোধী দল ও স্বতন্ত্রের প্রাপ্ত আসনসংখ্যা ছিল ১৪২টি।
বহুদলীয় গণতন্ত্রের সাথে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা সামঞ্জস্যপূর্ণ। পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী বিএনপি দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থার অনুসারী ছিলেন। তিনি নিজে এ শাসনব্যবস্থার অধীন রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন এবং তার দল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়। বেগম খালেদা জিয়ার স্বামী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থার প্রতি অনুগত ছিলেন বিধায় তার সহধর্মিণী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াও একই ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন দেশের জনমানুষ এমনই ধারণা পোষণ করতেন। কিন্তু নিজের ও দলের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে তিনি গণতন্ত্রের স্বার্থে দেশের বৃহত্তর মঙ্গল ও কল্যাণের আশায় রাজনৈতিক মতাদর্শের দিক থেকে তার বিপরীত মেরুতে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনে সমর্থন জ্ঞাপন করেন। পঞ্চম জাতীয় সংসদে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের সমর্থনে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থার বিলোপসাধন করে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন করা হয়, যা অব্যাহত আছে।
এ দেশে দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর এ দাবি মেনে নিয়ে বিএনপি একক উদ্যোগে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিধান প্রবর্তনপূর্বক সংসদটির অবলুপ্তি ঘটায়। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন পরবর্তী এ ব্যবস্থার অধীন সপ্তম ও অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যার প্রথমোক্তটিতে আওয়ামী লীগ ও শেষোক্তটিতে বিএনপি জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল দলসমূহের দাবির সমর্থনে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হলেও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভ‚মিধস বিজয় পরবর্তী দেখা গেল দলটির শীর্ষ নেত্রী নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে স্বীয় নিজ দলের দৃঢ় অবস্থান হতে সরে এসে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ব্যবস্থাটির বিলোপসাধন করে ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান প্রবর্তন করেন।
দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনের প্রথমোক্তটির ১৫৪টি আসনের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হওয়ায় এবং শেষোক্তটিতে আনুষ্ঠানিক ভোটগ্রহণের পূর্ববর্তী রাতে প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তায় ব্যালট পেপারে সিল মেরে ভোটের বাক্স পূর্ণ করায় উভয় নির্বাচন সাংবিধানিক ও আইনগত দিক হতে কলুষিত ও ত্রুটিপূর্ণ।
আওয়ামী লীগ ও দলটির শীর্ষ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান দলটির জন্মলগ্ন হতে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ে সোচ্চার থাকলেও অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে এ দলটি ও দলটির শীর্ষ নেতা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পথ হতে বিচ্যুত হয়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনপূর্বক সংবাদপত্র প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করে বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর কুঠারাঘাত করেন।
জিয়াউর রহমান রাজনীতিবিদ ছিলেন না। দেশের রাজনৈতিক সঙ্কটময় মুহূর্তে দেশের স্থিতিশীলতা ও সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা যখন বিপন্ন এমন এক সময় সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জন-আকাক্সক্ষায় দেশের রাজনীতির হাল তার ওপর ন্যস্ত হয়। তিনি স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন এবং বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রথা প্রবর্তনপূর্বক সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেন ও এর পাশাপাশি সংবাদপত্র প্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন। জিয়াউর রহমানের ন্যায় তার সহধর্মিণী খালেদা জিয়াও রাজনীতিবিদ ছিলেন না। দলের ঐক্যের স্বার্থে তার রাজনীতিতে আগমন এবং এর পরই তার হাত ধরে এ দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা পায়। উপরোক্ত আলোচনার ধারাবাহিকতায় এ কথাটি নির্দ্বিধায় বলা যায় এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় যে দু’জনের অবিস্মরণীয় অবদান তারা উভয়ে রাজনীতির মাঠের অচেনা মুখ জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: [email protected]
আপনার মতামত লিখুন :