শেখ নাজমুল ইসলাম:
চলতি বছর ধর্মপ্রান মুসলমানদের জন্য অতি মর্যাদা পুর্ণ রাত পবিত্র শবেবরাত ও পশ্চিমা অপ-সংস্কৃতি নতুন প্রজন্মের উপর ভর করা ভ্যালেন্টাইন ডে একই দিনে পড়েছে ৷ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে ১৪ই ফেব্রয়ারী দিবাগত রাতে দেশে শবেবরাত পালিত হবে ৷ অপার দিকে নতুন প্রজন্জের কিশোর কিশোরীদের কাছে অত্যান্ত জন প্রিয় হয়ে উঠছে পশ্চিমা অপ সংস্কৃতি খ্যাত ভ্যালেন্টাইন ডে ও একই দিন পড়েছে ৷
ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলেই জানা যায়, সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগের কথা। রোমের বাসিন্দা, খ্রিষ্টধর্মের যাজক ও চিকিৎসক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেই উদ্যাপিত হয়েছিল এই দিনটি। Saint Valentine Day’-এর ঐতিহাসিক সূত্র। ২৭০ খ্রিষ্টাব্দের কথা। তখন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস নারী-পুরুষের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন।
তার ধারণা ছিল, বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে যুদ্ধের প্রতি পুরুষদের অনীহা সৃষ্টি হয়। সে সময় রোমের খ্রিষ্টান গির্জার পুরোহিত ‘ভ্যালেন্টাইন’ রাজার নির্দেশ অগ্রাহ্য করে গোপনে নারী-পুরুষের বিবাহ বন্ধনের কাজ সম্পন্ন করতেন। এ ঘটনা উদ্ঘাটিত হওয়ার পর তাকে রাজার কাছে ধরে নিয়ে আসা হয়।
ভ্যালেন্টাইন রাজাকে জানালেন, খিষ্টধর্মে বিশ্বাসের কারণে তিনি কাউকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে বারণ করতে পারেন না।রাজা তখন তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। কারাগারে থাকা অবস্খায় রাজা তাকে খ্রিষ্টান ধর্ম ত্যাগ করে প্রাচীন রোমান পৌত্তলিক ধর্মে ফিরে আসার প্রস্তাব দেন এবং বিনিময়ে তাকে ক্ষমা করে দেয়ার কথা বলেন।
উল্লেখ্য, রাজা দ্বিতীয় ক্লডিয়াস প্রাচীন রোমান পৌত্তলিক ধর্মে বিশ্বাস করতেন এবং তৎকালীন রোমান সাম্রাজ্য ছিল। যা হোক, ভ্যালেন্টাইন রাজার প্রস্তাব মানতে অস্বীকৃতি জানালেন এবং খ্রিষ্ট ধর্মের প্রতি অনুগত থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করলেন। তখন রাজা তাকে মৃত্যু দন্ডের নির্দেশ দেন ৷ খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু পোপ গ্লসিয়াস ১৪ ফেব্রুয়ারিকে `Saint Valentine Day’ হিসেবে ঘোষণা করেন। ভ্যালেন্টাইন কারারক্ষীর যুবতী মেয়েকে ভালোবাসার কারণে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু পোপ গ্লসিয়াস ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ ঘোষণা করেননি।
কারণ, খ্রিষ্ট ধর্মে পুরোহিতদের জন্য বিয়ে করা বৈধ নয়। তাই অত:পর রাজার নির্দেশে ২৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ৩৫০ সালে রোমের যে স্থানে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল সেখানে তার স্মরণে একটি গির্জা নির্মাণ করা হয়। অবশেষে ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু পোপ গ্লসিয়াস ১৪ ফেব্রুয়ারিকে `Saint Valentine Day’ হিসেবে ঘোষণা করেন।
কারণ, খ্রিষ্ট ধর্মে পুরোহিতদের জন্য বিয়ে করা বৈধ নয়। তাই পুরোহিত হয়ে মেয়ের প্রেমে আসক্তি খ্রিষ্ট ধর্মমতে অনৈতিক কাজ। তা ছাড়া, ভালোবাসার কারণে ভ্যালেন্টাইনকে কারাগারে যেতে হয়নি। কারণ, তিনি কারারক্ষীর মেয়ের প্রেমে পড়েছিলেন কারাগারে যাওয়ার পর। সুতরাং, ভ্যালেন্টাইনকে কারাগারে নিক্ষেপ ও মৃত্যুদণ্ডদানের সাথে ভালোবাসার কোনো সম্পর্ক ছিল না। তাই ভ্যালেন্টাইনের কথিত ভালোবাসা সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে’র মূল বিষয় ছিল না। বরং ধর্মের প্রতি গভীর ভালোবাসাই তার মৃত্যুদণ্ডের কারণ ছিল।
ইসলামের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করা ব্যক্তিদের মতে মুসলিমদের মধ্যে শবে বরাত পালনের প্রথা শুরু হয় ইসলাম ধর্মের উৎপত্তির সময় থেকেই।
“নবী হযরত মুহাম্মদ (স:) শাবান মাসের ১৪ তারিখ যে সারা রাত নফল নামাজ পড়তেন ও কবরস্থান জিয়ারত করতেন, তা অনেক হাদিসেই বর্ণিত রয়েছে। পনের দিন বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা কর শবে বরাত পালন করার রেওয়াজ আছে বহুকাল ধরে। তবে শবে বরাতের সময় যেসব আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয় সেগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা বিতর্ক দেখা যায়। শবে বরাত পালন করা উচিৎ কী না, ইসলাম ধর্মে শবে বরাতের কোনো তাৎপর্য আছে কী না, বা শবে বরাতের কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে কি না পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক-বিতর্ক চোখে পড়ে।
ইসলামি বিশ্বাস মতে শবে বরাতের রাতে আল্লাহ তার বান্দাদেরকে বিশেষভাবে ক্ষমা করেন। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের অনেক মুসলমান নফল ইবাদাতের মাধ্যমে শবে বরাত পালন করেন। অনেক অঞ্চলে, এই রাতে তাঁদের পরিবারের মৃত ব্যাক্তিদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য প্রার্থনার আয়োজন করা হয় ৷
শবে বরাতের রাতের ফজিলত সম্পর্কিত একাধিক সহি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে (শবে বরাত) সৃষ্টির প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (মুসনাদে আহমদ : ৪/১৭৬)
মৌট জনসংখ্যার শতকারা ৯১.৪ ভাগ মুসলমানের দেশে পবিত্র শবে বরাতের দিনে আমার নতুন প্রজন্ম পশ্চিমা সংস্কৃতিকে প্রধান্য দিতে গিয়ে আমাদের ধর্মীয় অনুভুতিতে যেনো কোন প্রকার আঘাত না আসে , বিশৃংস্খলা না ঘটে সেদিকে প্রশাসন সহ রাষ্ট্রর দায়িত্বশীল ব্যাক্তি ও সুশিল সমাজের নজর রাখা দরকার ৷
আপনার মতামত লিখুন :