নবীদের প্রতি গালমন্দ : মুসলমানদের কর্তব্য


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুন ২২, ২০২২, ৮:৫৪ পূর্বাহ্ণ /
নবীদের প্রতি গালমন্দ : মুসলমানদের কর্তব্য

ড. মাহফুজুর রহমান
নবী করীম সা:কে যারা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে তাদের ব্যাপারে মুসলমানদের কী কর্তব্য সে প্রসঙ্গে ইসলাম ওয়েভের এক ফতোয়ায় বলা হয়, প্রত্যেক মুসলমানেরই জানা উচিত যুগে যুগে ধর্মের যে অবমাননা ও রাসূলের প্রতি যে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হয়েছে, তা এমন এক পরীা যা মুসলমানদেরকে ধৈর্যের মাধ্যমে মোকাবেলা করতে হবে।

ইমাম মুসলিম তার সাহী মুসলিমে ছুহাইব রুমী থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূল সা: সালাম বলেছেন, ‘মুমিনের বিষয়টি আশ্চর্যজনক। তার সব ব্যাপারে তার কল্যাণ থাকে। তা শুধু মুমিনরাই অর্জন করতে পারে। তার যদি সুসংবাদ বা সুদিন আসে তখন সে শুকরিয়া আদায় করে, ফলে তার জন্য তা কল্যাণকর হয়। আর যদি তার ওপর দুর্দিন বা বিপদ আসে তখনো সে ধৈর্য ধারণ করে, তখনো তা তার জন্য কল্যাণকর হয়।’

বর্তমানে রাসূল সা:-কে নিয়ে যে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হচ্ছে তা নতুন কিছু নয়। বরং তা পুরনো জিনিস নতুনভাবে ফিরে এসেছে। মক্কার কাফেররা রাসূল সা:কে গালমন্দ করেছে। তারা বলেছে যে, তিনি জাদুকর বা গণক বা পাগল ইত্যাদি। এই গালাগাল রাসূল সা:-এর কোনো তি করতে পারেনি, তাঁর মর্যাদারও কোনো হানি করতে পারেনি।

বর্তমানে তারা মাটির নিচে গর্তে আর তিনি আকাশে। কোথায় মাটির নিচের গর্ত আর কোথায় আকাশ। সুতরাং এসব গালমন্দ রাসূলের প্রতি আমাদের একিন ভালোবাসা ও তাঁর আদেশ-নিষেধের প্রতি আনুগত্য আরো বৃদ্ধি করবে। এসব ব্যাপারে আমরা যে উপদেশ ইতঃপূর্বে দিয়েছি তার সাথে নতুনভাবে মুসলমান ভাইদেরকে নিম্নোক্ত উপদেশগুলো দিতে চাই-

প্রথম উপদেশ : এসব ব্যাপারে নিজেদেরকে সংবরণ করতে হবে, ধৈর্য ধারণ করতে হবে। তাড়াহুড়ো করে এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যার জন্য মুসলমানদের পরে তির সম্মুখীন হতে হবে। এসব ঘটনাকে আল্লাহর দীনের খেদমতে ব্যবহার করতে হবে। কারণ এমন অনেক বিপদ আছে যার মধ্যেও কল্যাণ থাকে। ইবনুল কাইয়্যিম রা: বলেন : আপদ বিপদ যেমন গজব; তেমনি নেয়ামতও বটে। এসব ঘটনার মাধ্যমে অসতর্ক মুসলমানদের আল্লাহর দিকে প্রত্যাগমনের জন্য সতর্ক করা হয়। মুসলমানদের হৃদয়ে দীনকে নতুন করে স্থাপিত করা হয়। এ ছাড়া আরো কল্যাণ রয়েছে।

দ্বিতীয় উপদেশ : মুসলমানদের আল্লাহর কাছে প্রত্যাগমন করতে হবে। তার কাছে তাওবা করতে হবে এবং গুনাহ ও নাফরমানি থেকে সতর্ক ও দূরে থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের ওপর যেসব আপদ বিপদ ও মুসিবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। আর অনেক কিছুই তিনি মা করে দেন। আবু দাউদ ইবন ওমর থেকে বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, তোমরা যদি ঈনা (বাই বেক) পদ্ধতিতে ব্যবসা করো আর গরুর লেজ ধারণ করে থাকো আর তে খামার নিয়ে সন্তুষ্ট থাকো আর জিহাদ পরিহার করো তা হলে আল্লাহ তোমাদের ওপর এমন লাঞ্ছনা চাপিয়ে দেবেন যে তোমরা তোমাদের দীনের দিকে ফিরে না আসা পর্যন্ত উঠিয়ে নেবেন না।’

তৃতীয় উপদেশ : জ্ঞানী গুণী আলেম ওলামা ও আমলদার সুধীজনদের কাছে যেতে হবে, তাদের উপদেশ ও নসিহত মতে চলতে হবে। কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আর যখন তাদের কাছে শান্তি কিংবা ভীতিজনক কোনো বিষয় আসে, তখন তারা তা প্রচার করে। আর যদি তারা সেটি রাসূলের কাছে এবং তাদের কর্তৃত্বের অধিকারীদের কাছে পৌঁছে দিত, তা হলে অবশ্যই তাদের মধ্যে যারা তা উদ্ভাবন করে তারা তা জানত।

সুতরাং কোনো কথা ও কাজ ওই সব আলেম ওলামা ও সুধীজনের উপদেশ ও পরামর্শ ছাড়া বলা যাবে না, করা যাবে না। আমরা এখানে এ উম্মাহর আলেম ওলামা ও সুধীজনেরা যেসব দেশ এসব কুকাজে সহযোগিতা করছে তাদের পণ্য বর্জনের যে আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষ করে তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সাথে সাথে যেসব মাধ্যম অবলম্বন করলে শরিয়তের দিক থেকে কল্যাণ হবে, তা বর্জন না করার কথা বলতে চাই।

আমরা এখানে বিশেষ করে যেসব দেশ থেকে এসব কুকাজ করা হচ্ছে তাদের পণ্য তাদের সেবা তাদের ওষুধ ইত্যাদি পুরোপুরিভাবে বর্জন করতে বলি; যাতে সেসব দেশের জনগণ তাদের কুকাজের ফল যথাযথভাবে ভোগ করতে পারে।

চতুর্থ উপদেশ : মুসলমানেদের এসব ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কারণ তাতেই রয়েছে উম্মাহর শক্তি। আর দ্বিধাবিভক্তি থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ তাতেই লাঞ্ছনা ও বঞ্চনা। আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘তোমরা সকলেই আল্লাহর রুজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করো পরস্পর বিভক্ত হইও না।’

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন : ‘এবং পরস্পর ঝগড়া করো না, তা হলে তোমরা সাহসহারা হয়ে যাবে এবং তোমাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য ধরো, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।’

মুসলমানদের সবসময় ও সব স্থানে এসব উপদেশ মেনে চলার জন্য আহ্বান জানাই। বিশেষত যখন এ ধরনের ঘটনা ঘটে; তখন তাদের জন্য তা মেনে চলা আরো বেশি আবশ্যক হয়ে পড়ে। আল্লাহই ভালো জানেন।

লেখক : প্রফেসর, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া