পদ্মা সেতু চালুর পর খুলনা-সাতক্ষীরার বিমানে অর্ধেক যাত্রী নেই!


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ৬, ২০২২, ৭:৪০ পূর্বাহ্ণ /
পদ্মা সেতু চালুর পর খুলনা-সাতক্ষীরার বিমানে অর্ধেক যাত্রী নেই!

ঢাকা রুটে বিমানে অর্ধেক যাত্রী পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচলের প্রভাব পড়েছে দেশের অভ্যন্তরীন বিমান সেক্টরে। সেতু উদ্বোধনের ১০ দিনের মধ্যে যশোর-ঢাকা রুটে উড়োজাহাজে প্রায় অর্ধেক যাত্রী কমেছে। বর্তমানে অর্ধেক সিট খালি রেখেই ঢাকার পথে উড়াল দিচ্ছে তিনটি এয়ারলাইন্সের বিমান।

বিশেষ করে খুলনা ও সাতক্ষীরার যাত্রীরা এখন যশোর বিমানবন্দর মুখি হচ্ছেন না বললেই চলে। তারা সরাসরি পদ্মা সেতু দিয়েই যানবাহনে অল্প সময়ে ঢাকায় পাড়ি জমাচ্ছেন।

২০২০ সালে দেশে করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়ে বিমান সেক্টরে। জরুরি প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া মানুষ তখন জেলার বাইরে যাতায়াত করতেন না। এক পর্যায়ে সরকার দেশের অভ্যন্তরীন রুটে যাত্রীবাহী বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালের শেষ নাগাদ করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে প্রাণ ফিরে আসে বিমান সেক্টরে।

বর্তমানে যশোর বিমানবন্দর থেকে ১৪টি বিমান যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করে। এরমধ্যে বাংলাদেশ বিমানের দুটি ফ্লাইট রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি সংস্থা ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ৭টি ও নোভো এয়ারলাইন্সের ৫টি ফ্লাইট রয়েছে। কিন্তু পদ্মা সেতু তাদের ব্যবসার মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।

সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই ব্যাপকহারে বিমানের যাত্রী কমতে শুরু করেছে। কারণ খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার যাত্রীরা এখন পদ্মা সেতু দিয়েই ঢাকায় যাতায়াত করছে। এতে তারা বিমানের সময়েই ঢাকায় চলে যাচ্ছেন।

যাত্রীরা জানান, খুলনা ও সাতক্ষীরার যাত্রীদের যশোর বিমানবন্দরে আসতে সময় লাগতো দু’ঘন্টা, আবার ঢাকা বিমানবন্দর থেকে তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছাতে সময় লাগতো আরো দু’ঘন্টা। এ হিসেবে গড় সময় লাগতো চার ঘন্টা।

কিন্তু তারা পদ্মা সেতু দিয়ে সাড়ে তিনঘন্টায় ঢাকায় পৌছে যাচ্ছেন। এ হিসেবে তাদের সময় কমেছে আধাঘন্টার বেশি। এ জন্য তারা এখন আর বিমানমুখি হচ্ছেন না। এটি এখন বেসরকারি বিমান মালিকদের অন্যতম চিন্তার বিষয়।

গত ২৫ জুন সেতু উদ্বোধনের মাত্র ১০ দিনের মধ্যে যশোর-ঢাকা রুটে বিমানের যাত্রী কমেছে ৫০ ভাগ বলে সূত্রটি জানিয়েছে। কমে যাওয়া যাত্রীদের বেশিরভাগই খুলনা ও সাতক্ষীরার। এ দুটি জেলার বিমান যাত্রীরা পদ্মা সেতু দিয়েই যানবাহনে দ্রুততম সময়ে ঢাকায় চলে যাচ্ছেন।

এ কারণে তিনটি এয়ারলাইন্সের ১৪টি ফ্লাইটে ধারণ ক্ষমতার প্রায় অর্ধেক যাত্রী নিয়ে যশোর-ঢাকা রুটে চলাচল করছে। এতে তাদের ব্যাপক লোকসান হচ্ছে। এ লোকসান এড়াতে বেসরকারি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ নানা চিন্তাভাবনা শুরু করেছে।

ইতিমধ্যে নোভো এয়ারলাইন্স একটি মোবাইল কোম্পানির স্টার গ্রাহকদের ১০ ভাগ ভাড়া কমিয়ে দিয়েছে। এছাড়া, যাত্রী ধরে রাখতে বাংলাদেশ বিমান ও ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স ঈদুল আজহা উপলক্ষে নতুন অফার দিয়েছে। ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ ১ থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত শুধুমাত্র যশোর থেকে ঢাকা যাত্রী প্রতি নতুন ভাড়া নির্ধারণ করেছে তিন হাজার টাকা।

৩০ জুন পর্যন্ত এ রুটে সকল বিমানে গড় ভাড়া ছিল সাড়ে ৪ হাজার টাকা। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা আগামীতে ভাড়া কমিয়ে আনার চিন্তা করছে বলেও সূত্রটি জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে নোভো এয়ারলাইন্সের ঢাকা অফিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের কিছুটা প্রভাব তাদের এয়ারলাইন্সে পড়েছে। তবে এর সাথে ঈদের প্রভাবও রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে ঢাকা থেকে মানুষ বাইরের জেলায় যাবে, কিন্তু ঢাকায় আসবে কম সংখ্যক যাত্রী।

এ কারণে যশোর-ঢাকা রুটে যাত্রী সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। এরমধ্যে পদ্মা সেতু চালুর পর বিমানে খুলনা ও সাতক্ষীরার যাত্রী কমেছে বলে তিনি জানান। বিষয়টি নিয়ে তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নতুন করে চিন্তা ভাবনা করছেন।

বিষয়টি নিয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের যশোর স্টেশন ইনচার্জ সাব্বির হোসেন টুটুল বলেন, পদ্মা সেতু চালু হবার পর বিমানে তাদের যাত্রী কমেছে। খুলনা ও সাতক্ষীরা মিলিয়ে যশোরের সব এয়ারলাইন্সে গড়ে ৩০ ভাগের বেশি যাত্রী ইতিমধ্যে কমে গেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। একটি এয়ারলাইন্স যশোর রুটে তাদের দুটি ফ্লাইট কমিয়ে দেয়ার চিন্তা করছে।

তিনি আরও বলেন, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স খুলনায় তাদের যাত্রী ধরে রাখতে চলতি সপ্তাহে নতুন তিনটি অত্যাধুনিক বাস যুক্ত করেছে। শুধুমাত্র খুলনার যাত্রীদের জন্য, তাদের এয়ারলাইন্সে ৬টি বাস চলাচল করে ও সাতক্ষীরায় একটি মাইক্রোবাস যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করে।

কিন্তু এতেও তারা যাত্রী ধরে রাখতে পারছেন না। অস্বাভাবিক হারে ওই দুটি জেলার যাত্রী কমে যাচ্ছে। যশোর থেকে বিমানের ঢাকা রুট আগের মত যাত্রী সরগরম রাখতে কর্তৃপক্ষ নতুন করে চিন্তাভাবনা করছেন বলে তিনি জানান।