বাগেরহাটে খালদখল করে চলছে মাছ চাষ দেখা বলার কেউ নেই


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ২৩, ২০২২, ৭:২৬ পূর্বাহ্ণ /
বাগেরহাটে খালদখল করে চলছে মাছ চাষ দেখা বলার কেউ নেই

বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের জয়গাছি খালটি এখন মৃতপ্রায়। বছরের পর বছর প্রভাবশালী দখলদারা খালটি দখল করে মাছ চাষ করছে। খালের ওপর বাঁধ দিয়ে তার ওপর বিভিন্ন জাতের বৃক্ষ রোপণ করেছে। ফলে অস্তিত্ব প্রায় হারিয়ে গেছে এক সময়ের পবাহমান এ খালটির।

স্থানীয়দের অভিযোগ খালটি প্রভাবশালীদের দখলে থাকার কারনে কৃষি কাজ ও নৌচলাচল মানত্মক ব্যহত হচ্ছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতার। ভোগান্তি হচ্ছে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের। ভোগান্তির শিকার এলাকাবাসী পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের রহস্যজনক উদাসীনতার অভিযোগ করে দ্রুত খালটি দখলমুক্ত করার দাবী জানিয়েছেন।

সরোজমিনে বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের জয়গাছি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ দিন দখল করে মাছ চাষ করার ফলে এক সময়ের প্রবাহমান খালটি এখন মৃত প্রায়। খালটির বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১০টি বাঁধ ও নেটপাটা দিয়ে রেখেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। প্রভাবশালীদের মৎস্য ঘেরের পাশ দিয়ে খাল বয়ে যাওয়ায় যে যার মত করে খালটি দলখ করে রেখেছে। অবৈধ বাঁধ দিয়ে তার ওপর নারকেল, সুপারী, মেগহনি-সহ নানা প্রকার গাছ রোপন করেছে কেউ কেউ। ফলে এখন কোনটি খাল আর কোনটি মৎস্য ঘের তা খুঁজে বের করা দুস্কর।

জয়গাছি গ্রামের বাসিন্দা সালাম শেখ বলেন, আমাদের এ খালটির সাথে পাশ্ববর্তি ভৈরব নদীর সাথে সংযোগ রয়েছে। বর্সা মৌসুমে এই খালটি দিয়ে পানি নামতো এক সময়। এছাড়া খালটির জোয়ারের সময়ের পানি দিয়ে স্থানীয় কৃষকরা তাদের কৃষি কাজ করতো। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর দখল করে মাছ চাষ করার ফলে খালটি এখন মৃত প্রায়। বর্মমানে পরিস্থিতি এমন যে, কোনটা খাল আর কোনটা মাছের ঘের সেটাই খুজে পাওয়া যায়না।

একই গ্রামের অপর বাসিন্দা এনামুল মোল্লা বলেন, এলাকার জলাবদ্ধা নিরাশনে গুরুত্বপূর্ণ এ খালটি দখলে থাকার কারনে জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জয়গাছি মাঠ সংলগ্ন প্রায় এক’শ পরিবারের ঘর-বাড়ী সামান্য বৃষ্টি হলেই তলীয়ে যাচ্ছে। এমনকি যারা খাল দখল করে মাছ চাষ করছে জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে তারাও। কারা দখল করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, বেমরতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলী মল্লিক এর নেতৃত্বে খালটি দখল করা হয়েছে। দীর্ঘদিন দখলের ফলে পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে পৌচেছে যে, খালটি দখলমুক্ত হওয়ার আশাও ছেড়ে দিয়েছে গ্রামবাসি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেমরতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলী মল্লিক বলেন, জয়গাছি খালটি আমি বা আমার নেতৃত্বে দখল করা হয়েছে বিষয়টি এমন নয়। খালটির এক পাশ দিয়ে পুরাতন একটি রাস্তা রয়েছে, যার নিচ দিয়ে কোন কালভাট বা পানি সরার কোন ব্যবস্থা নেই। এছাড়া খালটির বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ও নেট-পাটা দিয়ে যে যার মত করে দখল করার কারনে আমি ইচ্ছা না থাকলেও দখলদার সেজে গেছি।

এলাকাবাসি জলাবদ্ধতার আছেন কি না জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমি নিজেও তো জলাবদ্ধার শিকার হচ্ছি। সামান্য বৃষ্টি হলেই আমার বাড়ী-ঘর সব পানিতে তলীয় যাচ্ছে। আমি নিজেও প্রশাসনের কাছে খালটি দখলমুক্ত করার দাবী জানাচ্ছি। বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগীয় প্রকৌশলী মো: মাসুম বিল্লা বলেন, আমি সম্প্রতি বাগেরহাটে যোগদান করেছি। জয়গাছি খাল দখলের বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দ্রুত গ্রহন করা হবে।

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, জয়গাছি খালটি দখল করে মাছ চাষ ও বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধার বিষয়ে ওই এলাকার বাসিন্দারা বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, প্রবাহমান নদী-খালে বাঁধ দেওয়া অপরাধ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল নদী-খালের স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখতে অভিযান চলছে। অবৈধ দখলদার যত শক্তিশালী হোক না কেন, তা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমান আদালদের মাধ্যমে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।