বিবিএস জরিপঃ এক বছরে ঘুষ-দুর্নীতির শিকার ৩১.৬৭ শতাংশ নাগরিক, দুর্নীতির শীর্ষে বিআরটিএ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুন ১৯, ২০২৫, ৫:০৪ অপরাহ্ণ /
বিবিএস জরিপঃ এক বছরে ঘুষ-দুর্নীতির শিকার ৩১.৬৭ শতাংশ নাগরিক, দুর্নীতির শীর্ষে বিআরটিএ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা

বিবিএসের সংবাদ সম্মেলন

সরকারি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে গত এক বছরে ৩১.৬৭ শতাংশ নাগরিক ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হয়েছে। যেখানে পুরুষ ৩৮.৬২ শতাংশ এবং নারী ২২.৭১ শতাংশ। ঘুষ-দুর্নীতিতে শীর্ষে বিআরটিএ (৬৩.২৯ শতাংশ), আইন প্রয়োগকারী সংস্থা (৬১.৯৪ শতাংশ), পাসপোর্ট অফিস (৫৭.৪৫ শতাংশ) ও ভূমি রেজিস্ট্রি অফিস (৫৪.৯২ শতাংশ) বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়া, ১৫.১৯ শতাংশ নাগরিক সন্ধ্যার পর নিজ এলাকায় নিরাপদবোধ করেন না। 

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) আগারগাঁওস্থ বিবিএস মিলনায়তনে আয়োজিত সিটিজেন পারসেপশন জরিপের তথ্য প্রকাশ করা হয়। এই তথ্য তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক রাশেদ-ই-মাসতাহাব। বক্তব্য রাখেন, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ড. কাইয়ুম আরা বেগম, সদস্য (সচিব), আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ এবং মিজ আলেয়া আক্তার, সচিব, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ।

জরিপে বেরিয়ে এসেছে, ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সময়ে দেশব্যাপী ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস)’ পরিচালনা করে। ৬৪ জেলার ১ হাজার ৯২০টি প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিট (পিএসইউ) থেকে ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানার ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী মোট ৮৪ হাজার ৮০৭ জন নারী-পুরুষ উত্তরদাতার সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

জরিপে নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিরাপত্তা, সুশাসন, সরকারি সেবার মান, দুর্নীতি, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার এবং বৈষম্য বিষয়ক এসডিজি ১৬ এর ছয়টি সূচকের অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়েছে।

নিরাপত্তা বিষয়ে জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায় যে, ৮৪.৮১ শতাংশ নাগরিক সন্ধ্যার পর নিজ এলাকার আশপাশে একা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন। তবে, পুরুষদের (৮৯.৫৩ শতাংশ) তুলনায় নারীরা (৮০.৬৭ শতাংশ) কম নিরাপদ বোধ করেন। শহরাঞ্চলের নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ (৮৩.৭৫%) গ্রামীণ এলাকার নাগরিকদের তুলনায় কিছুটা কম (৮৫.৩০%) পরিলক্ষিত হয়। অপরদিকে সন্ধ্যার পর নিজ বাড়িতে নাগরিকদের নিরাপত্তাবোধের হার ৯২.৫৪ শতাংশ। যা নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৯১.৮২% ও ৯৩.৩৫%।

জরিপে রাজনৈতিক প্রভাব বিষয়ের ক্ষেত্রে ২৭.২৪% নাগরিক মনে করেন যে, তারা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সরকারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করতে পারেন। এক্ষেত্রে শহর (২৭.৮৭%) ও গ্রাম (২৬.৯৪%) এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য না থাকলেও লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য রয়েছে। যা পুরুষের ক্ষেত্রে ৩১.৮৬% এবং নারীর ক্ষেত্রে ২৩.০২%। একইভাবে ২১.৯৯% নাগরিক মনে করেন যে, তারা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন মর্মে মত প্রকাশ করেন। এই হার নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১৭.৮১% ও ২৬.৫৫%।

সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে দেখা যায়, ৪৭.১২% নাগরিক গত এক বছরের মধ্যে অন্তত এক বার সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা গ্রহণ করেছেন। সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৮২.৭২% নাগরিকের মতে উক্ত স্বাস্থ্যসেবা সহজে প্রাপ্তিযোগ্য এবং স্বাস্থ্যসেবার খরচ সামর্থের মধ্যে ছিল মর্মে ৮৯.৩৪% নাগরিক মত প্রকাশ করেন। এক্ষেত্রে, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মান, সেবাগ্রহিতার সাথে আচরণ এবং ডাক্তার/স্বাস্থ্যকর্মীদের সময় দেয়ার বিষয়ে সেবা গ্রহণকারীদের সন্তুষ্টির হার যথাক্রমে ৬৫.০৭%, ৬৩.১৩% ও ৬৩.১৯%।

শিক্ষা ক্ষেত্রে দেখা যায়, ৪০.৯৩% নাগরিকের কমপক্ষে একটি শিশু সরকারি প্রাথমিক/মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন। এরমধ্যে, ৯৬.৪৬% নাগরিক প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহজে প্রবেশযোগ্য (যেকোনো ধরনের যানবাহনে বা পায়ে হেঁটে ৩০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছানো যায়) ও ৯২.৬৬% নাগরিক রিপোর্ট করেন যে শিক্ষাব্যয় সামর্থের মধ্যে ছিল। যেখানে মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ হার যথাক্রমে ৮২.২০% ও ৮০.৮৬%। অপরদিকে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান মানসম্মত ছিল মর্মে যথাক্রমে ৬৭.৯৩% ও ৭১.৮৬% নাগরিক মত প্রকাশ করেন।

অন্যান্য সরকারি সেবার (পরিচয়পত্র/নাগরিক নিবন্ধন) ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৮.১২% সেবার প্রাপ্যতা ও ৮৬.২৮% সেবাপ্রাপ্তি ব্যয় সামর্থের মধ্যে ছিল মর্মে উল্লেখ করেন। অপরদিকে, কার্যকর সেবাদান প্রক্রিয়া, সম-আচরণ, সময়মতো সেবাদানে সন্তুষ্টির হার যথাক্রমে ৬২.৬০%, ৫৬.২৬% ও ৫১.২৮%।

সরকারি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে ঘুষ-দুর্নীতি বিষয়ে দেখা যায়, গত এক বছরে যেসব নাগরিক সরকারি সেবা গ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে ৩১.৬৭% নাগরিক ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন মর্মে রিপোর্ট করেছেন, যেখানে পুরুষ ৩৮.৬২% এবং নারী ২২.৭১%।

জরিপ বলছে, গত দুই বছরে ১৬.১৬% নাগরিক কোনো না কোনো বিবাদ বা বিরোধের মুখোমুখি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮৩.৬০% নাগরিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আনুষ্ঠানিক অথবা অনানুষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার পেয়েছেন। এর মধ্যে ৪১.৩৪% আনুষ্ঠানিক (যেমন- আদালত, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ইত্যাদি) প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এবং ৬৮.৯৬% অনানুষ্ঠানিক (যেমন- কমিউনিটি নেতা, আইনজীবী ইত্যাদি) প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেবা পেয়েছেন।

জরিপে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, গত এক বছরে দেশের ১৯.৩১% জনগণ কোনো না কোনো ধরনের বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হয়েছেন। নারীদের মধ্যে এই হার কিছুটা বেশি যা ১৯.৬২%, যেখানে পুরুষদের মধ্যে তা ১৮.৯৭%। শহরাঞ্চলে বৈষম্যের হার (২২.০১%) গ্রামাঞ্চলের (১৮.০৭%) তুলনায় বেশি। এক্ষেত্রে আর্থ-সামাজিক অবস্থা (৬.৮২%) এবং লিঙ্গভেদে (৪.৪৭%) বৈষম্য হয়রানির হার সর্বাধিক। নিজের পরিবারের মধ্যে (৪৮.৪৪%), গণপরিবহন/উন্মুক্ত স্থানে (৩১.৩০%) এবং কর্মস্থলে (২৫.৯৭%) বৈষম্য/হয়রানির ঘটনা সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। এরমধ্যে মাত্র ৫.৩৫% ভুক্তভোগী এসব ঘটনার বিষয়ে রিপোর্ট করেছেন।