বৃষ্টির অভাবে সাড়ে চার লাখ হেক্টর জমি পড়ে আছে


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ২৪, ২০২২, ৯:১৪ অপরাহ্ণ /
বৃষ্টির অভাবে সাড়ে চার লাখ হেক্টর জমি পড়ে আছে

বৃষ্টির অপেক্ষায় এখনো পড়ে আছে সাড়ে চার লাখ হেক্টর জমি যশোরসহ ছয় জেলার কৃষকরা বৃষ্টির পানির জন্য হাহাকার করছেন। আমন ধান চাষে অনিশ্চিয়তা ও পাট পঁচানো নিয়ে তারা রীতিমত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এসব জেলায় ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৪ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের কথা থাকলেও ভরা মৌসুমে ২০ জুলাই পর্যন্ত কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় এক হেক্টর জমিতেও চারা রোপণ করতে পারেনি কৃষক। এছাড়া, যশোর, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলায় মাত্র ২ হাজার ৭শ’ ৬০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।

এদিকে, বর্ষা মৌসুম আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে এসব জেলায় কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মাঠঘাট ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এ কারণে কৃষক চাষকাজে মাঠে নামতে পারছেন না। একইসাথে পাটচাষে ব্যাপক বিপর্যয় হয়েছে। প্রচন্ড রোদে পাটগাছের কঁচিপাতা পুড়ে গেছে ও পাট পচানোর জন্য ডোবা, জলাশয় ও পুকুর পাচ্ছেন না কৃষক। এরপর শনিবার যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় ছিটেফোঁটা বৃষ্টি কৃষকের মাঝে আশার আলো দেখিয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের অতিরিক্ত পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে এখন চলছে আমন ধান চাষের ভরা মৌসুম। অথচ এখন পর্যন্ত যশোরাঞ্চলে কৃষক বৃষ্টিপাতের দেখা পায়নি। যে কারণে মাঠেঘাটে বর্ষার পানি না জমায় আমন আবাদ করতে পারছেন না কৃষক। অথচ এই সময়ে তাদের ধানচাষ নিয়েই ব্যস্ত থাকার কথা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৪ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে যশোর জেলায় নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৪৭ হেক্টর, ঝিনাইদহে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৫০ হেক্টর, মাগুরায় ৬১ হাজার ৪৭২ হেক্টর, কুষ্টিয়ায় ৮৮ হাজার ৮৯৫ হেক্টর, চুয়াডাঙ্গায় ৩৪ হাজার ৯২০ হেক্টর ও মেহেরপুর জেলায় ২৬ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ। এসব জমিতে হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের ধান চাষও করবে কৃষক।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, গত ২০ জুলাই পর্যন্ত ছয়টি জেলার মধ্যে শুধুমাত্র যশোর, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলায় মাত্র ২ হাজার ৭শ’ ৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চারা রোপন করতে পেরেছে কৃষক। এছাড়া বাকি তিনটি জেলা কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে এসময় পর্যন্ত এক হেক্টর জমিতেও আমনের চারা রোপন করতে পারেননি চাষিরা।

কৃষকরা জানান, দেশে আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে সাধারণত বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করে কৃষক আমন চাষে নামে। এ কারণে এ আবাদে তাদের সেচ খরচ কম হয়। কিন্তু এ বছর বর্ষাকালে আষাঢ় ও শ্রাবণে বৃষ্টির দেখা না পেয়ে তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। কৃষকের মাঝে এখন রীতিমত পানির জন্য হাহাকার চলছে। বৃষ্টির অপেক্ষায় থেকে কৃষকরা আজও তাদের কাঙ্খিত আমনের চারা রোপন করতে পারেননি।

এদিকে, ধানের পাতো ক্ষেতে থেকে বড় হয়ে রোপনের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। ফলে ধান আবাদ নিয়ে কৃষক দু’কুলই হারিয়ে ফেলছেন। কৃষকরা বলেছেন, ধানের চারার বয়স বেশি হলে ফলন কমে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় তারা বৃষ্টির অপেক্ষায় বসেও থাকতে পারছেন না। কৃষকরা বর্তমানে সেচ দিয়েই আমন ধানের চারা রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে কথা হয় সদর উপজেলার ডহরসিঙ্গা গ্রামের কৃষক রজব আলীর সাথে। তিনি বলেন, এ বছর আমন ধান আবাদের জন্য তিনি ৫ বিঘা জমি প্রস্তুত করেছেন। কিন্তু বৃষ্টির পানির অভাবে তিনি চারা রোপণ করতে পারছেন না। শনিবারের ছিটেফোঁটা বৃষ্টিতে তিনি খানিকটা আশার আলো দেখছেন। তিনি দোয়া করছেন এটি যেন মুষলধারার বৃষ্টিতে রূপ নেয়। তবেই তিনি চারা রোপণ করতে পারবেন। নতুবা আগামী সপ্তাহে টাকা খরচ করে সেচের পানি দিয়ে তিনি আবাদের প্রস্তুতি নেবেন।

এদিকে, অনাবৃষ্টিতে এ বছর আমন আবাদ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষিবিভাগ। এছাড়া বর্তমানে পাট চাষের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। প্রচন্ড রোদে পাট গাছের আগার কঁচিপাতা পুড়ে আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে তারা অপরিপক্ক পাট গাছ কেটে ফেললেও পঁচানোর জায়গা পাচ্ছেন না। কাঠফাঁটা রোদে পুকুর, ডোবা জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় তারা পাট পঁচানোর পানি পাচ্ছেন না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক নূরুজ্জামান বলেন, শুধু যশোরেই নয়, প্রয়োজনীয় বৃষ্টির অভাবে দেশের অনেক জেলার আমন আবাদে এ অবস্থা বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে আমরা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি। তবে আমন মৌসুমের ধান রোপণের সময় খুব বেশি পিছিয়ে যায়নি। আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত রোপণ করা যাবে। বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে বলে তিনি আশা করেন।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর আঞ্চলিক কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক ড. এখলাছ হোসেন বলেন, আমন আবাদ নিয়ে কৃষকের পাশাপাশি কৃষি বিভাগও চিন্তায় রয়েছে। তবে এখনও আবাদের সময় চলে যায়নি। চলতি মাসে বৃষ্টি হলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে কৃষক সেচের মাধ্যমে আমন ধানের চারা রোপণ শুরু করেছে। প্রকৃতিতে বর্তমানে যে আবহাওয়া বিরাজ করছে, তাতে দ্রুত কৃষক তার কাঙ্খিত বৃষ্টির দেখা পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।