শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলায় স্ত্রী, শাশুড়ি ও চাচা শ্বশুরকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জামাই মিন্টু মিয়াকে (৩৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের খোশালপুর পুটল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে শুক্রবার সকালে ঘাতক জামাইকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
নিহতরা হলেন-মিন্টু মিয়ার স্ত্রী মনিরা বেগম (৩০), শাশুড়ি শেফালী বেগম (৫০) ও চাচা শ্বশুর মাহমুদ হাজী (৬২)। এ ঘটনায় আরও তিনজনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে ঘাতক জামাই। তারা হলেন-বাচ্চুনী বেগম (৫২), মনু মিয়া (৭৫) ও মিন্টুর শ্যালক শাহাদাৎ হোসেন (৪০)। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তারা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন।
জানা যায়, হত্যার পর ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ গজ দূরে একটি গাছের আগ ডালে সারারাত বসে ছিলেন ঘাতক জামাই। ঘটনার পর পরই পুলিশ চারদিক ঘিরে রাখে। শ্রীবরদী থেকে বের হওয়ার সকল রাস্তায় সারারাত পুলিশের কড়া নজরদারি ছিল। রাস্তায় চলাচলে সাধারণ মানুষ পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে পড়েছে।
পাশেই ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় পুলিশ ও বিজিবি তৎপর ছিল। একপর্যায়ে পুলিশ তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে পারে ঘাতক মিন্টু ঘটনাস্থলের আশপাশেই আছে। পরে ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে পুলিশ তাকে একটি গাছে সাদা প্যান্ট পরা অবস্থায় দেখতে পায়।
পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছে, এই নৃশংস হত্যার কারণ দাম্পত্য কলহ, মিন্টুর নিঃসঙ্গতা এবং সদ্য শ্যালকের বিয়েতে মিন্টুকে দাওয়াত না দেওয়া। মিন্টু স্থানীয়ভাবে ছাগল ক্রয়-বিক্রয়, কবুতর পালন ও মাঝে মাঝে কৃষি শ্রমিকের কাজ করত। টাকা চাইলে কাজকর্মে সামান্য ত্রুটি হলেই স্ত্রীকে মারধর করত। এ নিয়ে এলাকায় একাধিকবার বিচার সালিশ হয়েছে। কিন্ত কোনো পরিবর্তন হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, ১৭ বছর আগে পাশের গেরামারা গ্রামের মৃত মাইমদ্দিনের ছেলে মিন্টুর সাথে বিয়ে হয় মনিরার। তাদের ঘরে এক ছেলে, এক মেয়ে। গত রোজায় ঝগড়া করে স্ত্রী মনিরা বাপের বাড়িতে চলে আসে। তারপর আর স্বামীর বাড়ি যায়নি। সপ্তাহ খানেক আগে মিন্টুর শ্যালক সাহাদাতের বিয়ে হয়। রাগ-অভিমানের কারণে সেই বিয়েতে শ্বশুর বাড়ির দাওয়াত পায়নি মিন্টু। এ নিয়ে মিন্টু ক্ষিপ্ত হয়
আগের বিবাদ ও বিয়েতে দাওয়াত না পাওয়ায় রাগে-ক্ষোভে ধারালো রাম দা ও চাকু নিয়ে বোরকা পরে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে স্ত্রীর বাড়িতে প্রবেশ করে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রথমে শ্যালককে কোপায়। পরে শাশুড়ি ও চাচা শ্বশুরসহ অন্যরা এগিয়ে আসলে তাদেরকেও কোপাতে থাকে। এসব দেখে ভয়ে স্ত্রী মনিরা পাশের গোয়াল ঘরে প্রবেশ করে। পরে গোয়াল ঘর থেকে খুঁজে মনিরাকে নিয়ে এসে কোপাতে থাকে।
একপর্যায়ে স্থানীয়রা সবাইকে উদ্ধার করে পাশের বকশীগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যায় স্ত্রী মনিরা বেগম। পরে শাশুড়ি ও চাচা শ্বশুর মারা যায়। হত্যার সময় মন্টুর সাথে আরও এক সহযোগী ছিল বলে অনেকেই বলেছেন। পুলিশ রক্তমাখা একটি বোরকা ছাড়াও আরো একটি বোরকা উদ্ধার করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, মিন্টু একাই ছিল। তাকে সাদা একটি হাফ প্যান্ট ও গেঞ্জি পরা অবস্থায় পুলিশ ধরেছে। হত্যায় ব্যবহৃত মাঝারি আকারের একটি দা ও এক দেড়শ টাকা দামের একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।
সহকারী পুলিশ সুপার আফরোজা নাজনীন বলেন, রাতব্যাপী পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে নৃশংস এই হত্যাকারীকে ধরা গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। লাশ ময়নাতদন্তের কাজ চলছে। আইনগত সকল ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
শেরপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) হাসান নাহিদ চৌধুরী বলেন, ঘটনাস্থলেই মনিরা বেগমের মৃত্যু হয়েছে এবং অন্য দুইজন বকশীগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর মারা যায়। আহতদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :