ভারতের দলিত এক কিশোরীকে ৫ বছর ধরে ৬৪ জন মিলে ধর্ষণ!


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জানুয়ারি ১৪, ২০২৫, ৮:৩৩ অপরাহ্ণ /
ভারতের দলিত এক কিশোরীকে ৫ বছর ধরে ৬৪ জন মিলে ধর্ষণ!

– সংগৃহীত

দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য কেরালার বাসিন্দা এক ১৮ বছর বয়সী দলিত কিশোরীকে গত পাঁচ বছর ধরে ৬৪ জন পুরুষ যৌন নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তার বয়স যখন মাত্র ১৩ বছর ছিল, তখন থেকেই সে যৌন নিগ্রহের শিকার হতে শুরু করেন। পুলিশ এখন পর্যন্ত ২৮ জনকে গ্রেফতার করতে পেরেছে। তারা পুলিশ হেফাজতে থাকায় তাদের কোনো বক্তব্য প্রকাশ্যে আসেনি।

পুলিশ বলছে, অভিযুক্তদের বয়স ১৭ বছর থেকে ৪৭ বছর পর্যন্ত এবং এদের মধ্যে যেমন রয়েছে ওই কিশোরীর প্রতিবেশীরা, তার খেলার প্রশিক্ষক এবং বাবার বন্ধুরাও। অভিযুক্তদের মধ্যে প্রথম নামটি ওই কিশোরীর প্রতিবেশী এবং তার ছোটবেলার বন্ধুর। এক সরকারি কর্মসূচির অধীনে কয়েকজন মনোবিদ ওই কিশোরীর বাড়িতে গিয়েছিলেন। তখনই গোটা ঘটনা জানা যায়।

পতনমথিট্টা জেলার পুলিশ সুপারিন্টেডেন্ট নন্দকুমার এস জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ১৮টি মামলা দায়ের হয়েছে, এগুলোর মধ্যে রয়েছে দলিত শ্রেণীর মানুষের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধ-রোধী আইন এবং শিশু-কিশোরদের ওপরে যৌন নিগ্রহ রোধ আইন।

পুলিশী তদন্ত এখনো চলছে, তাই পরবর্তী সময়ে আরো নতুন মামলা দায়ের করা হবে বলে পুলিশ জানাচ্ছে। পুরো ঘটনার তদন্তে ২৫ সদস্যের একটি দল গঠন করেছে ওই রাজ্যের সরকার।

ছোটবেলার বন্ধুই প্রথম নির্যাতন চালায়। সংবাদ পোর্টাল ‘নিউজ মিনিট’ জানাচ্ছে ওই কিশোরী যখন ১৩ বছর বয়সী ছিল, তখনই প্রথমবার তিনি যৌন নিগ্রহের শিকার হয়। তার পাড়ার ছোটবেলার এক বন্ধুই তাকে প্রথম যৌন নিগ্রহ করে এবং সেই ঘটনার কিছু ছবিও তুলে রাখে সে। ওই বন্ধুর নামই অভিযুক্তদের তালিকায় এক নম্বরে আছে।

পতনমথিট্টা জেলার ক্রাইম ব্রাঞ্চের মুখপাত্র সঞ্জীব এম বলেন, ‘প্রথম অভিযুক্তের মোবাইলে যৌন নিগ্রহের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই ভিডিও দেখিয়েই সে কিশোরীকে ব্ল্যাকমেইল করে যৌন নিগ্রহ চালাত। আবার তার বন্ধুদের কাছেও নিয়ে যেত কিশোরীটিকে।’

পরবর্তীতে ওই কিশোরীর ১৬ বছর বয়সে সেই বন্ধুই আবারো যৌন নিগ্রহ করে। এবার সেই যৌন নিগ্রহের ভিডিও করে সেটা বেশ কয়েকজনের সাথে শেয়ার করে দেয় ওই প্রতিবেশী। ওই সব ব্যক্তিরা পরবর্তী কয়েক বছর ধরে যৌন নিগ্রহ চালাতে থাকে।

ক্রীড়া প্রশিক্ষকও যৌন নিগ্রহ চালায়। জেলা শিশু-কিশোর কল্যাণ কমিটির প্রধান, আইনজীবী এন রাজীব বলেছেন, যৌন নিগ্রহের শিকার হওয়া ওই কিশোরী একজন অ্যাথলেট। খেলার জন্য নানা শিবিরে তাকে যেতে হতো। সেখানেও যৌন নিগ্রহের শিকার হতে হয় তাকে। পুলিশ বলছে, গত পাঁচ বছরে ওই কিশোরীকে অন্তত তিনবার গণ-ধর্ষণের অভিযোগ সামনে এসেছে।

তদন্তকারীরা বলছেন, ওই কিশোরীর ছোটবেলার যে বন্ধু প্রথমবার তাকে যৌন নিগ্রহ করেছিল, সে অন্তত একবার গণ-ধর্ষণেও হাজির ছিল। অভিযোগ, ওই কিশোরী প্রথমবার গণ-ধর্ষণের শিকার হন তার বাড়ির পাশেই।

পতনমথিট্টা জেলা ক্রাইম ব্রাঞ্চের মুখপাত্র সঞ্জীব এম বলেছেন, ‘অভিযুক্তরা ওই কিশোরীর বাবার ফোন নম্বরে কল করত এবং সে তাদের সবার নম্বর ওই ফোনেই সেভ করে রেখেছিল। বাবার ফোনে আসা এরকম ৪০ জন অভিযুক্তদের কল সে সেভ করে রেখেছিল। ওই ফোন থেকে তথ্য যোগাড় করেই পুলিশ এখন বাকি অভিযুক্তদের সন্ধান করছে।

যেভাবে ঘটনা জানা গেল। ওই কিশোরীর পরিবার অবশ্য গোটা ঘটনার কিছুই জানত না। গত মাসে যখন ওই কিশোরীর বাড়িতে কয়েকজন মনোবিদ যান, তখনই ব্যাপারটা জানা যায়। ওই মনোবিদরা শিশু-কিশোর কল্যাণ কমিটিকে জানায় ঘটনাটি।

শিশু-কিশোর কল্যাণ কমিটির প্রধান, আইনজীবী এন রাজীব বলছিলেন, ‘কুটুম্বশ্রী স্নেহিতা নামের একটি সরকারি কর্মসূচির অধীনের কয়েকজন কাউন্সেলর বিস্তারিত পারিবারিক তথ্য যোগাড় করছিলেন। পরিবারগুলোকে পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে যে নিজেদের সমস্যাগুলোর কিভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

যৌন নিগ্রহের শিকার ওই কিশোরী যখন তার স্কুলের কথা বলতে চাইছিল, কিন্তু সে জেদ ধরে যে কোনো একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সাথে কথা বলবে। ওই মনোবিদ-কাউন্সেলর সরাসরি আমার সাথে যোগাযোগ করেন।’

এন রাজীব বলেন, ‘তার মানসিক কাউন্সেলিং করা হচ্ছে এখন। সে মনোবিদের সামনে মুখ খুলছে, ১৩ বছর বয়স থেকে কিভাবে সে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছে, তা জানাচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, কিশোরীটি যখন তাদের সাথে কথা বলছিল, তখন তার মা বাইরে অপেক্ষা করছিলেন।

সাধারণত শিশু-কিশোর কল্যাণ কমিটিগুলো স্থানীয় থানায় এ ধরনের ঘটনার খবর জানিয়ে দেয়। তবে রাজীব বলছিলেন, ‘আমাদের মনে হয়েছিল যে এটা অনেক গুরুতর ঘটনা। তাই আমি সরাসরি জেলার পুলিশ সুপারের সাথে যোগাযোগ করি। তার নিরাপত্তার খাতিরে একটি শিশু-কিশোর হোমে তাকে ও তার মাকে রাখা হয়েছে।’

নারী অধিকার সংগঠনগুলো কী বলছে? নারী অধিকার সংগঠন ‘সখী’র আইনজীবী সন্ধ্যা জনার্দন পিল্লাই বলেছেন, ‘এই ঘটনা প্রমাণ করে দিলো যে শিশু-কিশোরীদের যৌন নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য শুধু আইন করা যথেষ্ট নয়।’

তার কথায়, ‘শিশু-কিশোরীদের নিরাপদে রাখার গোটা ব্যবস্থাতেই যে গলদ আছে, সেটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো এই ঘটনা। এছাড়াও যৌন নির্যাতনের শিকার কিশোরীটি গরিব এবং দলিত পরিবারের সদস্য। সামাজিক অবস্থানের দিক থেকে এই কিশোরীটি তাই সব থেকে ঝুঁকির মুখে রয়েছে।’

সূত্র : বিবিসি