মাত্র ৬ মিনিটে পদ্মা পার তাই উচ্ছ্বসিত মানুষ


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুন ২৭, ২০২২, ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ /
মাত্র ৬ মিনিটে পদ্মা পার তাই উচ্ছ্বসিত মানুষ

খরস্রোতা পদ্মার দুই পাড়ে উত্সবের রং ছড়িয়ে উদ্বোধনের পরদিনই যান চলাচল শুরু হয়েছে স্বপ্নের সেতুতে। গতকাল রবিবার সকাল থেকেই পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ছুটেছে বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্স, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকতে অনেককেই বিভিন্ন বাহন নিয়ে গভীর রাতে এসে দুই প্রান্তে টোল প্লাজার সামনে অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে।

পরে সকাল ৬টার দিকে উভয় টোল প্লাজা খুললে তাদের অপেক্ষার পালা শেষ হয়। একই সঙ্গে ঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার দুর্দশার অবসান হয়েছে। মাত্র ছয় মিনিটে পদ্মা পার হওয়ার স্বস্তির যাত্রায় উচ্ছ্বসিত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পরিবহন যাত্রী-চালকসহ সর্বস্তরের মানুষ।

জানা গেছে, পদ্মা সেতুতে প্রথম ১০ ঘণ্টায় কোটি টাকার বেশি টোল আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্তে ৫৬ লাখ এবং জাজিরা প্রান্তে ৩৫ লাখ টাকা। এদিকে যানবাহনের ভিড়ের পাশাপাশি গতকালও পদ্মা পাড়ের হাজারো মানুষ কাছ থেকে সেতু দেখার জন্য জড়ো হয়েছিলেন মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে।

পদ্মা সেতু পাড়ি দেওয়ার সময় থামানো যাবে না গাড়ি। যানবাহন থেকে নেমে সেতুতে তোলা যাবে না ছবি; করা যাবে না হাঁটাহাঁটি। এই নির্দেশনাগুলো দিয়েছিল বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অনেকে তা মানছেন না। রীতিমতো নিয়ম ভাঙার প্রতিযোগিতা চলছে সেখানে। উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর বিপুলসংখ্যক মানুষ উঠে পড়েন মূল সেতুতে। তাদের নামাতে বলপ্রয়োগ করতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।

ঘোষণা অনুযায়ী রবিবার ভোরে সেতুতে যান চলাচল শুরু হওয়ার পরও একই চিত্র দেখা যায়। যে যার মতো করে সেতুতে হাঁটাহাঁটি করেছেন; তুলেছেন ছবি। কেউ আবার এক ধাপ এগিয়ে সেতুর রেলিংয়ে বসে দিয়েছেন পোজ। এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে হাইওয়ে ও সেতুর টহল পুলিশ দলের চেষ্টাও যাচ্ছে বৃথা। গণপরিবহন ছাড়া অন্য প্রায় সব গাড়িকে সেতুতে থামতে দেখা গেছে।

কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটাহাঁটির পাশাপাশি তুলেছেন ছবি। মাইক্রোবাস ভাড়া করে পরিবার নিয়ে পদ্মা সেতু দেখতে আসেন তোফাজ্জল হোসেন। গাড়িটি দাঁড় করিয়ে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে পরিবারের ১৪ সদস্য সেতু ঘুরে দেখেন; তোলেন দলবদ্ধ ছবি। পরিবার নিয়ে গোপালগঞ্জ যাচ্ছিলেন শিক্ষক নিহার রঞ্জন দাস।

তাদের বাহনও মাইক্রোবাস। সেতুতে গাড়ি দাঁড় করিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নেমে পড়েন এ শিক্ষক। সেলফি তোলাসহ ভিডিও ধারণ করেন সেতু ও নদীর। ঝুঁকির কথা ভুলে গিয়ে হূদয় নামের এক যুবক বসেছিলেন সেতুর রেলিংয়ের ওপর। সাধারণদের নিয়ম ভাঙার এ খেলা বন্ধ করতে সাইরেন বাজিয়ে সেতুর উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছিল টহল গাড়ি।

থেমে থাকা গাড়ি বা মানুষকে দাঁড়াতে দেখলেই ছুটে যান পেট্রলম্যান। কখনো অনুরোধ করে, আবার কখনো গলা চড়িয়ে সরিয়ে দেন নিয়মকে থোড়াই কেয়ার করা লোকজনকে। সেতুর পেট্রলম্যান সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমি গাড়ি নিয়ে শুধু ছুটেই যাচ্ছি। পাবলিক কোনো কথা শোনে না। এক জায়গার মানুষের গাড়ি সরাচ্ছি, অন্য জায়গায় আবার দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।’

মোটরসাইকেলে প্রথম সেতু পার হন আমিনুল : প্রথমবারের মতো পদ্মা সেতু পার হয়ে অনেকেই আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করেছেন। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে এসেছেন কালের সাক্ষী হতে। অনেকেই মোটরসাইকেল নিয়ে পদ্মা নদী পার হয়েছেন। ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে আমিনুল ইসলাম নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী মাওয়া টোল প্লাজার ৩ নম্বর লেইনে ১০০ টাকা টোল দিয়ে পদ্মা সেতু পার হন।

তিনি জানান, কামরাঙ্গীর চর থেকে তারা বন্ধুরা মিলে দল বেঁধে এসেছেন পদ্মা সেতু পার হওয়ার জন্যই। তার মোটরসাইকেল সামনে থাকায় প্রথম সুযোগটা তিনিই পেয়ে গেছেন। মাওয়া টোল প্লাজা থেকে জানা গেছে, প্রথম ট্রাক, ঢাকা মেট্রো ট-১৮-৭২২২, প্রথম প্রাইভেট কার ঢাকা মেট্রো গ২৮-০৯৮৬ ও প্রথম বাস ঢাকা মেট্রো হ ১৫-৪৬২৪ গতকাল পদ্মা সেতু পার হয়েছে।

ঈদের মতো খুশি লাগছে : ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্হাপিত হয়েছে। এই ২১টি জেলার মাওয়া রুট ব্যবহারকারী বাসসহ যানবাহনগুলো এত দিন ফেরিতে পারাপার হতো। এখন চলছে সেতুতে। শনিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাওয়া প্রান্তে টোল দিয়ে তিনিই হন এ সেতুর প্রথম যাত্রী।

গতকাল মাগুরা থেকে আসা দোলা পরিবহনের চালক আতিয়ার হোসেন বলেন, ‘রাত ৯টা থেকে অপেক্ষায় ছিলাম। কখন পদ্মা পাড়ি দেব। অবশেষে সেই অপেক্ষার পালা শেষ হলো। খুব ভোরেই টোল প্লাজার সামনে হাজির হলাম। টোলও দিয়েছি। আল্লাহর নামে চললাম। দীর্ঘ দিন ধরে ফেরিতে যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তার সমাপ্ত হলো আজকে।’ মোটরসাইকেলযোগে খুলনা থেকে আসা রফিক আহমেদ বলেন, ‘অনেক ইচ্ছে ছিল প্রথমই পদ্মা সেতু পার হবো। তাই রাতে আসছি।’ সার্বিক পরিবহনের চালক ইব্রাহিম মিয়া বলেন, ‘আমাদের ঈদের মতো খুশি লাগছে। যে দুর্ভোগ ঘাটে পোহাতে হয়েছে, তা থেকে মুক্তি হয়েছে।’

সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রথম বার সেতু দিয়ে পদ্মা নদী পাড়ি দিতে খুব সকালে আসেন বাগেরহাট-২ (সদর-কচুয়া) আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়। বাগেরহাট থেকে নিজে গাড়ি চালিয়ে টোল প্লাজায় এসে হাজির হন এই তরুণ সংসদ সদস্য। পদ্মা পাড়ি দিতে যাওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই আবেগের কথা বুঝানোর ভাষা নেই। আমি নিজে গাড়ি চালাচ্ছি, ব্রিজে গাড়ি চালাতে চাই, দেখতে চাই। আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের চাওয়া পাওয়ার আর কিছু নাই।’

জাজিরা ও মাওয়া প্রান্তে যানবাহনের দীর্ঘ সারি আর পথচারীর ভিড় সামলাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও হিশশিম খেতে হচ্ছিল। সকাল ৬টায় টোল গেট খুলতেই সেতুর জাজিরা প্রান্তে প্রথম টোল দিয়ে প্রাইভেটকার নিয়ে সেতুতে ওঠেন এবি এম জাফর উল্লাহ। জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, ‘এ অনুভুতি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।’ এক সময় পুলিশে চাকরি করা জাফর উল্লাহ এখন ঢাকায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে নিয়োজিত। তিনি বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর পরে আমি প্রথম প্রাইভেট কার চালিয়ে টোল দিয়ে সেতু পার হচ্ছি, অনুভূতিটা সত্যিই অন্যরকম।’

ফরিদপুরের ভাঙা থেকে রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে যাচ্ছেন চালক তানভীর হাসান। তিনি বলেন, ‘আগে ৬-৭ ঘণ্টা লেগে যাইতো ফেরির কারণে। চোখের সামনে গাড়িতে মানুষ মারা যাইতে দেখছি, এই দৃশ্য দেখার কষ্ট অনেক। আজকে ছয় মিনিটে পার হয়ে যেতে পারবো, এর চেয়ে খুশির কিছু নেই।’

ছিল দীর্ঘ যানজট: ভায়াডাক্টসহ ৯ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির টোল আদায় কার্যক্রম দ্রুতগতি করতে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের দুটি টোলপ্লাজায় বসানো হয়েছে সাতটি করে মোট ১৪টি গেট চালু আছে। সব কটি গেটে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ফলে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রথম দিকে মোটরসাইকেলের চাপ ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বাস, মিনিবাস ও প্রাইভেট কারের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং সেতু এলাকাজুড়ে দীর্ঘ সারির সৃষ্টি হয়।

তবে পদ্মা সেতু পার হওয়া এবং দেখার জন্যই উত্সুক জনতার সংখ্যাটাই বেশি। বেলা ১১টা পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের সমষপুর থেকে পদ্মা সেতুর উত্তর থানা পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে এর বিপরীত চিত্র ছিল সেতুর জাজিরা প্রান্তে। সেখানে সময় যত বাড়তে থাকে, যানজট ততই কমতে থাকে। এক পর্যায়ে যানজট ছাড়াই টোল পরিশোধ করে সেতুতে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।

মাওয়া প্রান্তে প্রথম যাত্রীবাহী পরিবহন হিসেবে পদ্মা সেতু পাড়ি দেয় এনা পরিবহন। এটির গন্তব্য ছিল ফরিদপুরের ভাঙ্গা। বাসপ্রেমীদের সংগঠন বিডি বাস লাভার-এর সদস্যরা পদ্মা সেতু পাড়ি দিতেই আয়োজন করে এ স্বপ্নযাত্রার। রাত ১২টার আগেই শাহবাগ থেকে শুরু হয়েছিল যাত্রা। বাসটি সেতুর সংযোগ সড়কে এসে পৌঁছায় রাত পৌনে ১টায়। শুরু হয় অপেক্ষার পালা। চোখে মুখে অদ্ভুত এক আনন্দ নিয়ে গাড়িটি চালাচ্ছিলেন চালক তৌহিদুর রহমান বাবুল। তিনি বলেন, ‘খুবই আনন্দ লাগতেছে। দক্ষিণবঙ্গের মানুষের স্বপ্নপূরণ হয়েছে, আর ফেরিঘাটে চালকদের দীর্ঘ অপেক্ষা শেষ হইছে।’

সকাল ৬টার দিকে টোল দেওয়ার পর নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে সেতুতে ওঠেন ফরিদপুরের ভাংগার বাসিন্দা রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের দিন। টোল দিয়ে সেতুতে উঠতে পেরে গর্বিত মনে হচ্ছে।’ রংপুর, খাগড়াছড়ি, নেত্রকোনা, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার তরুণদের সংগঠন নর্থ রাইডার্স বিডি, বাইকার্স জিরো সেভেন ও জিরো নাইনের ১৬ সদস্যর একটি দল মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে মাওয়া প্রান্ত থেকে সকাল সোয়া ৬টার সময় জাজিরা প্রান্তে আসে। জাজিরা প্রান্ত ঘুরে আবার তারা সকাল ৮টার দিকে মাওয়া প্রান্তে ফিরে যান।

বিশৃঙ্খলা চালকদের: এদিকে আগে সেতু পাড়ি দেওয়ার প্রবণতার কারণে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। প্রথম দিন আগে সেতু পাড়ি দেওয়ার আগ্রহ কাজ করেছে অনেকের মাঝেই। ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, বাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলে পারাপারের জন্য অপেক্ষা করেছে মানুষ। যানজট দেখে আগে সেতু পাড়ি দিতে না পাড়ার শঙ্কায় নিয়ম ভাঙতে শুরু করেন চালকরা। উল্টোপথে এসে মাওয়া প্রান্েতর সব সড়ক বন্ধ করে দেন বিভিন্ন বাহনের চালক। উল্টো পথে এসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন বাবুল নামের একজন ট্রাকচালক।

তার কাছে উল্টো পথে আসার কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘আমিতো লাইনেই ছিলাম, কিন্তু পিছের সব গাড়ি দেখি রং সাইড দিয়া যাইতাছে। আমি বইসা থাকমু ক্যান!’ একই কাজ করেছেন মাইক্রোবাস চালক তুহিন। তার কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘ভাই এখন কথা কওয়ার টাইম নাই। আগে ব্রিজে উঠতে হইব। এইজন্য উল্টা মারছি।’

এদিন সবচেয়ে বেশি বিশৃঙ্খলা করতে দেখা যায় মোটরসাইকেল চালকদের। সেতু চালু হবার আগে মাওয়া প্রান্তে হাজারো মোটরসাইকেলের জটলা ছিল। সেতু খুলে দেওয়ার আগেই কয়েকজন মোটরসাইকেল চালক পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে টোল প্লাজায় পৌঁছে যান। পরে সেতু কর্তৃপক্ষের তোপের মুখে ফিরে যান তারা।

স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের দুর্ভোগ: দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা থেকে পদ্মা সেতু পার হয়ে গতকাল ঢাকায় ঢুকেছে অনেক গাড়ি। তবে রাজধানী ঢাকামুখী দূরপাল্লার কোনো বাসে স্বল্প দূরত্বের যাত্রী না তোলায় দুর্ভোগে পড়েন ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ স্হানীয় বাসিন্দারা। ফরিদপুর ভাঙার বাসিন্দা কামরুল হাসান রবিবার সকালে জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় এসেছেন।

কিন্তু ঢাকা যাওয়ার জন্য কোনো বাসে উঠতে পারছেন না। ভাঙা থেকে যেসব বাস এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে সেতু পার হচ্ছে তার সবগুলোই দূরপাল্লার। এসব বাসে স্বল্প দূরত্বের কোনো যাত্রী তোলা হচ্ছে না। এদিকে লোকাল কোনো বাস সার্ভিসও নেই, এতে করে স্হানীয়রা পড়েছেন দুর্ভোগে। বাসে উঠতে না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

এদিকে আবেগতাড়িত হয়ে নৌকার আদলে দুটি মোটরযানকে সাজিয়েছিলেন মিনারুল ইসলাম ও শহিদুল শেখ নামের দুই ব্যক্তি। তারা চেয়েছিলেন এই নৌকা দুটি নিয়ে পার হবেন স্বপ্নের পদ্মা সেতু। কিন্তু মিনারুলের তিন চাকার ইজিবাইক ও শহিদুলের ফিটনেসবিহীন লক্করঝক্কর মোটরসাইকেল হওয়ায় বাহন দুটিকে সেতু পাড়ি দেওয়ার অনুমতি দেয়নি কর্তৃপক্ষ।

টোল বুথের দায়িত্বে নারীরাও: পদ্মা সেতুতে টোল বুথে পুরুষের পাশাপাশি বাংলাদেশি নারী কর্মীরা দায়িত্ব পালন করছেন। সেতু কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলী বলছেন, টোল আদায় ও সংরক্ষণের দায়িত্ব পেয়েছে কোরিয়া এক্সপ্রেস করপোরেশন এবং মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। সরেজমিন দেখা গেছে, জাজিরা প্রান্েত টোল প্লাজায় পাঁচটি বুথে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা দায়িত্ব পালন করছেন।

পদ্মা সেতুতে নামলেই ব্যবস্থা: পদ্মা সেতুতে হাঁটা কিংবা গাড়ি থামিয়ে ছবি তোলা বারণ থাকলেও প্রথম দিনে মানুষের উচ্ছ্বাসে ভেসে যায় এসব বিধি-নিষেধ। যার পরিপ্রেক্ষিতে সেতু কর্তৃপক্ষ গতকাল আবার গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই বিধি-নিষেধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে সেতুর ওপর গাড়ি থামানো বন্ধে তত্পর হয়েছে কর্তৃপক্ষ।

গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে: পদ্মা সেতুর ওপর গাড়ির অনুমোদিত গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার/ঘণ্টা। পদ্মা সেতুর ওপর যে কোনো ধরনের যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে সেতুর ওপরে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা/হাঁটা সম্পূর্ণ নিষেধ। তিন চাকা বিশিষ্ট যানবাহন (রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা ইত্যাদি), পায়ে হেঁটে, সাইকেল বা নন-মটোরাইজড গাড়ি যোগে সেতু পার হওয়া যাবে না।

গাড়ির বডির চেয়ে বেশি চওড়া এবং ৫.৭ মিটার উচ্চতার চেয়ে বেশি উচ্চতার মালামালসহ যানবাহন সেতুর ওপর দিয়ে পারাপার করা যাবে না। সেতুর ওপরে কোনো ধরনের ময়লা ফেলা যাবে না।