*ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকায় সরকারের বাজার নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন
*বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম, সবজির বাজারও চড়া
*বোরোর মৌসুম শুরু হলে আগামী সপ্তাহ থেকে কমতে পারে চালের দাম
দেশে পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় সংগ্রহ হয় হালি পেঁয়াজ থেকে। এই পেঁয়াজের আবাদ হয় ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে আর খেত থেকে তোলা হয় মার্চ-এপ্রিলে। সেই হিসেবে হালি পেঁয়াজের মৌসুম এখনো শেষ হয়নি। অথচ এরই মধ্যে দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহে রাজধানীসহ দেশের বাজারগুলোতে খুচরায় প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১৫-২০ টাকা বেড়েছে।
পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে দাম বাড়ায় সরকারের বাজার নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্রেতা ও বাজার বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, এখন পেঁয়াজের সরবরাহে সংকট হওয়ার কোনো কারণই নেই। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে একশ্রেণির ব্যবসায়ী আমদানির পথ খুলতে চাইছেন। এতে বাজারে দাম বাড়ছে।
গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩০-৪৫ টাকা কেজি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪৫-৬৫ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. সেলিম বলেন, পয়লা বৈশাখের আগপর্যন্ত সরবরাহ ঠিকই ছিল। তিন-চার দিন যাবৎ আড়তগুলোতে সরবরাহ কমে গেছে। ফরিদপুরসহ বিভিন্ন মোকামে দাম বেড়েছে। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আসে ফরিদপুর থেকে। সেখানকার হাটেও দাম বেশি।
কারওয়ান বাজারে গতকাল পাইকারিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০-৫১ টাকা কেজি, যা তিন থেকে চার দিন আগে ৪৪-৪৫ টাকা ছিল।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, দেশি পেঁয়াজ ফুরিয়ে এলে নাহয় দাম বাড়ার একটা যুক্তি থাকে। তখন আমদানি যৌক্তিক হয়। কিন্তু এখন কোনো কারণেই হঠাৎ দাম বাড়তে পারে না। পেঁয়াজের আকস্মিক এই দাম বাড়া এই খাতে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজির অংশ। পেঁয়াজের আড়তদার, কমিশন এজেন্ট, দাদন ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ কিনে মজুত করে রাখছেন। সে কারণে দাম বাড়ছে। পেঁয়াজের বাজারে কোনো তদারকি হয় না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
প্রায় দেড় বছর ধরে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছিল ভারত সরকার। পেঁয়াজের মজুত বেড়ে যাওয়ায় ১ এপ্রিল থেকে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক তুলে নিয়েছে দেশটি। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, দেশীয় কৃষকের কথা চিন্তা করে বর্তমানে পেঁয়াজের আমদানি অনুমোদন (ইমপোর্ট পারমিশন বা আইপি) দেওয়া বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত আইপি দেওয়া হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে প্রতিবছর ৩৫ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এসব পেঁয়াজের ৮০-৮৫ শতাংশই আসে মার্চ-এপ্রিল মৌসুমে। তবে ২৫ শতাংশ নানাভাবে নষ্ট হওয়ায় বছর শেষে ৬-৭ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।
বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও
পেঁয়াজ ছাড়া চলতি সপ্তাহে বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। এক ধাক্কায় সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ থেকে ১৮৯ টাকা করেছেন মিলমালিকেরা। যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, খুব শিগগিরই তেলের দাম কমানো হবে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচার বিক্রেতা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে বাড়তি মূল্যের তেল বাজারে চলে এসেছে। অনেক দোকানে আগের মূল্যের তেলের মজুত থাকায় নতুনগুলো রাখছে না। আগামী সপ্তাহের মধ্যে সব দোকানেই বাড়তি দামের তেল চলে আসবে।
সবজির দাম চড়ছে
মৌসুম শেষ হওয়ায় টমেটো, বেগুন, শিম, করলাসহ কিছু কিছু সবজির দাম বাড়তে শুরু করেছে। এসব সবজির দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়েছে চলতি সপ্তাহে।
তবে তেল ও পেঁয়াজ ছাড়া চিনি, আটা, ময়দা, ফার্মের মুরগির ডিম, ফার্মের মুরগি, গরুর মাংসসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রি হচ্ছে গত সপ্তাহের দামেই।
দেশের চালের বড় মৌসুমের বোরো ধান উঠতে শুরু করলেও চালের দাম কমেনি। তবে বিক্রেতারা বলছেন দাম নতুন করে বাড়েনি, আগের দামেই স্থির রয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে চালের দাম কমতে শুরু করবে বলেও জানান তাঁরা।
রাজধানীর বাজারগুলোতে বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি নাজিরশাইল, মিনিকেট, জিরাশাইলসহ সরু চাল কিনতে ব্যয় হচ্ছে ৭৪-৮৬ টাকা। বিআর আঠাশ, পাইজামসহ মাঝারি মানের চাল কিনতে লাগছে ৬২-৭০ টাকা। স্বর্ণা, গুটিসহ বিভিন্ন মোটা চাল কিনতে লাগছে প্রতিতে ৫৪-৬০ টাকা।
বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ও বাবুবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী কাউসার আলম বাবু বলেন, এখনো নতুন ধানের চাল বাজারে আসেনি। তাই দাম স্থির রয়েছে। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহ থেকেই চালের দাম কমতে শুরু করবে। আমরা আশা করছি এবার পূর্ণ মৌসুম শুরু হলে চালের দাম কেজিতে ১০-১২ টাকা কমবে।
আপনার মতামত লিখুন :