রাজধানী জুড়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জয়জয়াকার


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুন ৫, ২০২২, ১২:৫০ পূর্বাহ্ণ /
রাজধানী জুড়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জয়জয়াকার

দ্রুত শেয়ার  করুন-

রাজধানীতে চার বছর ধরে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন গাইবান্ধার সাবের আলী। গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা করছে তার তিন ছেলেমেয়ে। স্ত্রী জবেদা খাতুনও আছেন সেখানে। প্রতিদিনের উপার্জনের টাকা কাছে না রেখে প্রতিদিনই স্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। অথবা সঞ্চয় করেন নিজের অ্যাকাউন্টে। এতে টাকা হারানোর যেমন ভয় থাকে না, তেমনি কোনো ঝামেলা ছাড়াই নিজের কষ্টার্জিত টাকা পাঠাতে পারেন পরিবারের কাছে।

শুধু সাবের আলী নন, তার মতো অনেক শ্রমজীবী কিংবা নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের কাছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা (এমএফএস) এখন বড় আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়াও আর্থিক লেনদেনে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে এমএফএস সেবা অনেকাংশে বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে রেকর্ড পরিমাণ লেনদেন হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকরা ৭৭ হাজার ২২ কোটি টাকার লেনদেন করেছেন। যা একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ লেনদেনের রেকর্ড।

প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা। এর আগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয় এ বছরের জানুয়ারিতে; ৭৩ হাজার ৩৯৩ টাকা। ২০২১ সালের মে মাসে ৭১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা লেনদেন করেন গ্রাহকরা। যা এখন পর্যন্ত একক মাস হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে শহর থেকে গ্রামে বা গ্রাম থেকে শহরে তাৎক্ষণিকভা?বে টাকা পাঠানোর সুবিধা নিয়ে থাকেন দেশের সব শ্রমজীবী মানুষেরা। বিশেষ করে ব্যাংকের ঝামেলা এড়াতে অনেক স্বল্প আয়ের মানুষ এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে।

বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন শুধু টাকা পাঠানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। দৈনন্দিন কেনাকাটা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধ ও মোবাইলে রিচার্জসহ নানা ধরনের সেবা মিলছে এর মাধ্যমে। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের বেতনও এমএফসি মাধ্যমে দিয়ে থাকে।

বিকাশের হেড অফ কর্পোরেট কমিউনিকেশনস্‌ শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম মানবজমিনকে বলেন, এখন বিকাশের মতো একটি মোবাইল আর্থিক সেবা অ্যাকাউন্ট দিয়ে একজন গ্রাহক তার দৈনন্দিন প্রায় সব ধরনের লেনদেন অনায়াসে করতে পারছেন এবং ক্রমাগত এই সেবার পরিধি আরও বিস্তৃত হচ্ছে। এ খাতে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, সৃজনশীল ও সময়োপযোগী সেবার নিয়মিত সংযোজনে সাধারণের লেনদেন আরও সহজ, সময় ও খরচ সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ হচ্ছে।

এ ছাড়া সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগ এবং সব ধরনের ভাতা, উপবৃত্তি, প্রণোদনা বিতরণে মোবাইল আর্থিক সেবা খাতকে ব্যবহার করার সিদ্ধান্তে এই খাতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সব মিলিয়ে সমাজের সব স্তরের গ্রাহকের মাঝেই এমএফএস লেনদেনের অভ্যস্ততা তৈরি হচ্ছে এবং নির্ভরতাও বাড়ছে। আগামী দিনেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে মানুষ খুব সহজেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় টাকা পাঠাতে পারেন। বিভিন্ন প্রয়োজনে জরুরিভাবে মানুষ এই সেবা নিয়ে থাকেন। অর্থাৎ অর্থ লেনদেনের এই সহজ প্রক্রিয়াতে মানুষ ধীরে ধীরে আরও বেশি অভ্যস্ত হয়ে উঠছে।

ফলে এর গ্রাহক যেমন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি লেনদেনও বাড়ছে। শহর থেকে গ্রামে কিংবা গ্রাম থেকে শহরে বিশেষ করে কম পরিমাণের লেনদেনগুলো মানুষ এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেই করে থাকে। এ ছাড়া কেনাকাটা, বিদ্যুৎ বিলসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধেও এখন মোবাইল ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ তুলনামূলক বেড়েছে।

বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং: বাংলাদেশে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবার যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের মার্চে। বেসরকারি খাতের ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করে। পরে এটির নাম বদলে হয় রকেট। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান চালু করে বিকাশ। পরবর্তী সময়ে আরও অনেক ব্যাংক এ সেবায় এসেছে। এ ছাড়াও নগদ, শিওর ক্যাশ, রেডি-ক্যাশ, টি-ক্যাশ, ইউ ক্যাশ, এম ক্যাশ সহ বর্তমানে দেশে অন্তত ১৫টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে।

বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা: সমপ্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৩টি এমএফএস সেবার হালনাগাদ তথ্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, ২০২২ সালের মার্চ শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ১০ কোটি ৯১ লাখ ৩০ হাজার ৪০৫ জন। এর মধ্যে গ্রামে পাঁচ কোটি ৬৬ লাখ ৭০ হাজার এবং শহরে পাঁচ কোটি ২৪ লাখ ৬০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন।

নিবন্ধিতদের মধ্যে পুরুষ ছয় কোটি ৩১ লাখ ৭৫ হাজার এবং মহিলা গ্রাহক চার কোটি ৫৬ লাখ ২৬ হাজার। এ সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৫১ হাজার ২১৩ জনে।