রাজনৈতিক দলগুলির ঐক্য একান্তই জরুরী নইলে আবারও ফ্যাসিবাদী শক্তি জাগতে পারে


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২৬, ২০২৪, ১২:৪৭ অপরাহ্ণ /
রাজনৈতিক দলগুলির ঐক্য একান্তই জরুরী নইলে আবারও ফ্যাসিবাদী শক্তি জাগতে পারে

রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে সরানোর দাবির পক্ষে ঐকমত্য তৈরির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।

রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে সরানোর দাবির পক্ষে ঐকমত্য তৈরির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। এরই মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন দুই সংগঠনের নেতারা।

রাষ্ট্রপতি ও সংবিধান ইস্যুতে যখন হঠাৎ করেই রাজনীতিতে মতভেদের সুর ওঠে, তখন তরুণরা বলছেন, ঐক্যে ধরে না রাখলে সুযোগ নিতে পারে ফ্যাসিবাদী শক্তি।

দেশের রাজনীতিতে যে ইতিবাচক বদল ঘটেছে, তা ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। দলীয় কর্মসূচির ভিন্নতা থাকলেও স্বৈরাচার বিরোধী শক্তি ঠেকাতে একসাথে কাজ করার কথা বলছেন বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা না গেলে সংকট বাড়বে রাজনীতিতে। দ্বিতীয় স্বাধীনতাখ্যাত ছাত্র জনতার এই গণঅভ্যুত্থানে ঐক্যের যে মিনার রচিত হয়েছে এই জনপদে, মুক্তিযুদ্ধ উত্তর সময়ের সমীকরণে বিরল, সেটা স্বীকার করছে সবাই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনকার মূল অ্যাজেন্ডা হওয়া প্রয়োজন রাজনীতি, রাষ্ট্র ও সংবিধান সংস্কার। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত করা। এখন এমন কোনো সংকট সৃষ্টি করা উচিত হবে না, যা অন্তর্বর্তী সরকারের কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে এবং গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার পথকে দীর্ঘায়িত করবে।

দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কর্তৃত্ববাদী শাসকের, প্রতিটি পর্যায় থেকে সর্বব্যাপী পলায়নের যে দৃশ্যপট রচনা হয়েছে এখানে, সেখানে মতাদর্শের ভেদ ভুলে জুলুমের অবসান ঘটাতে ছাত্র জনতার সাথে এক কাতারে দাঁড়িয়ে গেছে রাজনৈতিক দলগুলোও। সফল গণঅভ্যুত্থানের পর এই ঐক্যের প্রথম ফসল, প্রশ্নবিদ্ধ সংবিধানের বাইরে গিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

কিন্তু এ সরকারের আড়াই মাসের যখন প্রতিটি শিবিরে আলোচনার বিষয়বস্তুর হওয়ার কথা ছিল প্রতিশ্রুত সংস্কার, তার বদলে রাজনীতির মাঠে দেখা যাচ্ছে স্বৈরাচার বিরোধীতার নামে যারা এক হয়েছিলো, তাদের নানামাত্রিক বিভাজন। এটি বড় আকার ধারণ করছে, রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যু ঘিরে। সংবিধান না জাতীয় আকাঙ্ক্ষা পূরণ, এই ইস্যুতে বেড়েছে দূরত্ব।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিতে হবে। আমরা এখন তাদের সঙ্গে কথা বলব। তারা কেন রাষ্ট্রপতিকে রাখতে চাচ্ছে। প্রত্যেকটা দলের সঙ্গে আমরা সংলাপে বসব। রাষ্ট্রপতি কোনোভাবেই আর থাকছেন না। তবে আমরা চাচ্ছি রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এ সিদ্ধান্তে আসুক। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই আমরা বসব। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কাউকে এ সংলাপে আমরা রাখব না।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার দোহায় দিয়ে তারা চপ্পুকে রাষ্ট্রপতি পদে দেখতে চাই। আর এই যে অনৈক্যের সুর, এখানেই ফ্যাসিবাদ পুনরুত্থানের শঙ্কা দেখছেন তরুণ নেতারা।’

বিএনপির নীতি নির্ধারকরা বলছেন, সকল অনৈক্যের সীমানা ভেঙে ঐক্যের যে চেতনা দেশের রাজনীতিতে নতুন আশা দেখিয়েছে তা সুসংহত রাখতে চেষ্টা করছে তাদের দল।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, ‘যে কোন সংকটের সমাধান করতে আলোচনার সকল দ্বার খোলা রাখতে চান। ৫ আগস্টের আগে যেভাবে বিগত সরকারে পতনে একসঙ্গে আন্দোলন, কর্মসূচি দিয়ে ভূমিকা রেখেছি। এর পরেও আমরা করে যাচ্ছি।’

জনজীবনে দ্রব্যমূল্যের চাপ, গণহত্যার বিচারে ধীরগতি, প্রশাসনের অসহযোগিতা কিংবা রাজপথের হরেক রকম আন্দোলনের বিপরীতে যখন বেসামাল হঠাৎ দায়িত্ব পাওয়া একটি সরকার, তখন এই প্রতিবিপ্লবের শঙ্কা নিয়েই আলোচনা হচ্ছে পক্ষে বিপক্ষে। রাজনীতি বিশ্লেষকরা এটিই বলছেন, এমন বহুমুখী সংকটে প্রধানত দেশের রাজনীতিকদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে কোনপথে চান।