প্রতিবেদকঃ
বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেরুন্নেছা মীম। শুধু পড়াশোনাই নয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে চালাচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ বইয়ের দোকান। ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার নেশা ছিল তার। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে পড়তেন একসময়। সাহিত্য আর জ্ঞানপিপাসার টান থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর শরৎ উৎসবে বই প্রদর্শনীর পরিকল্পনা করেছিলেন। যদিও নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় বই বিক্রির কথা ভাবেন। প্রকাশকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বই আনেন ঢাকার প্রকাশনী থেকে।
২০২৪ সালের ৮ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে প্রথম বইয়ের দোকান নিয়ে বসেন। প্রথম দিনেই বিক্রি হয় ৩৭টি বই। সেই অভিজ্ঞতা তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। এখন মীম প্রতি শুক্রবার ও শনিবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বসেন তার ভ্রাম্যমাণ বইয়ের দোকানে। এ সময়টায় চাইলেই বিনামূল্যে তার দোকানে বসে বই পড়তে পারেন পাঠকরা। তার দোকানে রয়েছে অনুবাদ সাহিত্য, ইংরেজি বই, উপন্যাস, থ্রিলার, কিশোর উপন্যাসসহ নানান ধরনের বই।
আপাতত ৪০০-৫০০ বই সংগ্রহে আছে। ভবিষ্যতে স্থায়ী দোকান দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তার। মীম বলেন, ‘ব্যবসা নয়, বই বিক্রি আমার কাছে আনন্দ আর ভালোবাসার জায়গা।’ তিনি ছোট পরিসরে ছোট পাঠক সমাবেশেরও আয়োজন করেন। যেখানে শিশু ও কিশোররা নতুন বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হয়, পড়ার প্রতি তাদের আগ্রহ তৈরি হয়। তার এ পথে আসা সহজ ছিল না। সহপাঠীদের কাছ থেকে শুনেছেন কটূক্তি। কেউ কেউ বলেছে, ‘তোকে বুঝি বই বেচেই খেতে হবে?’। কিন্তু তিনি দমে যাননি। তিনি সামাজিক মাধ্যমেও বই সংক্রান্ত তথ্য দেন।
নতুন প্রকাশনা ও লেখকদের পরিচিতি তুলে ধরেন। এ ছাড়া নিয়মিত ছোট লেখা ও রিভিউ পোস্ট করেন, যা তরুণদের পড়ার প্রতি আগ্রহ আরও বাড়ায়। আজকের তরুণ প্রজন্ম যেখানে প্রযুক্তির মোহে হারিয়ে যাচ্ছে, সেখানে মেহেরুন্নেছা মীম বইয়ের প্রতি আকর্ষণ ফিরিয়ে আনছেন নতুনভাবে। তার ভ্রাম্যমাণ দোকান শুধু বই বিক্রির জায়গা নয়, বরং জ্ঞানচর্চার এক মুক্ত প্ল্যাটফর্ম। শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি অনুপ্রেরণীয় একজন।
আপনার মতামত লিখুন :