আফরিদা ইফরাত
সুমনা শারমিনের বেড়ে ওঠা রাজশাহীতে। চিরচেনা রাজশাহী ছেড়ে তাকে একসময় আসতে হয় ঢাকায়। আধুনিক মেট্রোপলিসে আবাসন মানুষের প্রাথমিক চাহিদা। থাকার জায়গাটা ঠিক থাকলে বাকি সবকিছু ঠিক থাকার একটা ভিত্তি গড়ে ওঠে। কিন্তু এই আবাসনেই যেন যত সংকট। রাজধানীতে ব্যাচেলরদের জন্যে এই সংকট আরও ভয়ংকর। এখানে অন্তত ৪০ লাখ ব্যাচেলর আছেন।
প্রতি বছর আরও দুই লাখ ব্যাচেলর স্বপ্ন নিয়ে এখানে আসেন। এই ব্যাচেলরদের মাঝে নারীও আছেন। ছেলে ব্যাচেলারদের আবাসন সংকটের বিষয়টি নতুন কিছু না; কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে তা আরও তীব্র। সুমনা শারমিন ঢাকায় এসে তা যেন হাড়ে হাড়ে টের পেলেন।
প্রাথমিকভাবে অত্মীয়দের বাসায় ওঠা হলেও দ্রুতই লক্ষ্য করলেন এখানেও নানা সমস্যা আছে। না, আতিথ্যের ঠিক ঘাটতি নেই। কিন্তু সমস্যা হলো, চলাফেরা কিংবা নিজের কাজে যেন কিছু বাধা চলেই আসছে। এখন একমাত্র উপায় হোস্টেল, সাবলেট বা রুম ভাড়া নিয়ে থাকা।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংকীর্ণ রুম, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, সুযোগ সুবিধার অভাব তাকে ভোগাতে থাকে। সেইসঙ্গে ভালো মানের খাবারের অভাব তো আছেই। ঠিক সেখান থেআকেই সুমনার মনে জমে উঠতে থাকে পরিকল্পনা। একসময় আর্টেমিজ লিমিটেডের অধীনে তিনি চালু করেন ‘সেকেন্ড হোম’ প্রজেক্ট।
রাজধানীর শ্যামলী, ঝিগাতলা, শুক্রাবাদ, কলাবাগানসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় প্রজেক্ট সেকেন্ড হোমের কার্যক্রম শুরু করেন। রিয়েল এস্টেট উদ্যোগে একদম নতুন একটি ধারণাকে ব্যবহার করেই যাত্রা শুরু প্রজেক্ট সেকেন্ড হোমের।
ঢাকায় প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষার্থী, শিক্ষার্থী কিংবা কর্মক্ষেত্রে যোগদান দেওয়া যেকোনো নারীর জন্যে সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ আবাসন তৈরি করাই প্রজেক্ট সেকেন্ড হোমের উদ্দেশ্য। একটি ঘর সবসময় প্রস্তুত থাকে তার বাসিন্দাদেরকে নিজস্ব বৃত্তে গুছিয়ে রাখার জন্যে। প্রজেক্ট সেকেন্ড হোমের ক্ষেত্রেও তা সত্য।
একজন নারী যখন হোস্টেলে থাকবে তখনো তাকে কিছু সুযোগ-সুবিধার অভাব অনুভব করতে হয়। তারমধ্যে খাবারের সমস্যা সবচেয়ে বড়। ঢাকার মতো ব্যস্ত শহরে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির ফলে নিজের বিকাশের জন্যে প্রয়োজনীয় খাবার খাওয়াটাও কঠিন হয়ে পড়ে। প্রজেক্ট সেকেন্ড হোম প্রাথমিকভাবে নারীর আবাসন সংকটের সমস্যার সাথে সাথে খাবারের সংকট মেটানোর ক্ষেত্রেও মনোযোগী হয়।
খাবারের মান নিয়ে কোনো আপোস নয়। যখন খাবারের মান ভালো থাকে, তখন কর্মকর্তা কর্মচারী পর্যায়েও এই খাবারই সরবরাহ করা হয়। প্রজেক্ট সেকেন্ড হোম যেন তারই প্রয়োগ করে দেখিয়েছে।
সুমনা শারমিনের হাত ধরে প্রতিষ্ঠানটি আত্মপ্রকাশ করে ২০১৬ সালে। ফেসবুকে প্রথমে সেবামূলকভাবে কাজ শুরু করলেও দিনে দিনে এটি প্রতিষ্ঠানিক রূপ নেয়। সুমনার সাথে আরও ৩৩ জন তরুণ উদ্যোক্তা কাজ করে চলেছেন এক্সিকিউটিভ পর্যায়ে। তবে এই প্রজেক্টের সঙ্গে জড়িত আছেন আরও এক হাজারের মতো সদস্য।
সুমনাদের উদ্দেশ্য এখন স্পষ্ট। রাজধানীর অন্তত আরও পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চালু করতে চান নিজেদের এই প্রজেক্ট। শুধু নারী নয়; ছেলেদের জন্যেও আছে শুক্রাবাদ ও শ্যামলীতে দুটি শাখা। বর্তমানে প্রায় ৪৫০ স্বপ্নবাজ নারীর আবাসন সংকট নিরসনে ভূমিকা রেখে চলেছে এই প্রজেক্টটি।
আপনার মতামত লিখুন :