শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা ‘কফিন ম্যানেজমেন্টের নির্দেশ দিয়েছিলেন


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ১৮, ২০২৫, ৪:৫৫ অপরাহ্ণ /
শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা ‘কফিন ম্যানেজমেন্টের নির্দেশ দিয়েছিলেন
  • ‘কফিনের ব্যবস্থাপনায় মূল ভূমিকা রেখেছিল ছাত্রশিবির, যা জামায়াতের সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে করা হয়েছিল।’

ঠিক এক বছর আগে আজকের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জুলাই আন্দোলনের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ এক ঘটনা ঘটে—ছয় শহীদকে ঘিরে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল। ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ছয়জন নিহত হন। পরদিন ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আয়োজিত হয় প্রতীকী গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল, যা পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে বাস্তবায়িত হয়।

ঘটনার এক বছর পূর্তিতে স্মৃতিচারণ ও ঘটনার পেছনের বিশদ বর্ণনা উঠে এসেছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী ও সংগঠকদের বক্তব্যে। আলোচনার সূত্রপাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরের ফেসবুক পোস্ট থেকে।

তিনি জানান, “গায়েবানা জানাজা ও কফিন ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আমাদের ছিল। কাফনের কাপড় সংগ্রহ করা গেলেও পুলিশের কড়া নজরদারিতে কফিন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করানো যাচ্ছিল না। পরে বিভিন্ন উপায়ে সেগুলো ভেতরে আনা হয়।”

তবে কাদেরের এ বর্ণনায় ভিন্নমত তুলে ধরেছেন শিবিরের তৎকালীন ছাত্র আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক জায়েদুল হক ও বর্তমান সভাপতি এস এম ফরহাদ। তাদের দাবি, কফিনের ব্যবস্থাপনায় মূল ভূমিকা রেখেছিল ছাত্রশিবির, যা জামায়াতের সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে করা হয়েছিল।

জায়েদুল হক জানান, “সেদিন কফিন ম্যানেজমেন্টের নির্দেশ আসে শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছ থেকে। অ্যাডভোকেট শাহ মাহফুজুল হক ও দেলোয়ার হোসেন কফিন সরবরাহের দায়িত্ব নেন। কাটাবন ও পল্টন থেকে পাঠানো হয় মোট ৬টি কফিন। বিভিন্ন পথে ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করা হলেও পুলিশের বাধার কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরে মুজিব হলের পকেট গেট দিয়ে সাদা কাপড় ও পতাকা ছুড়ে ভেতরে পাঠানো হয়।”

এস এম ফরহাদ বলেন, “মূল পরিকল্পনা ছিল একজন শহীদের লাশ জানাজায় আনার। কিন্তু প্রশাসনের হুমকির কারণে তা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রতীকী কফিনেই জানাজা সম্পন্ন হয়। মাঠপর্যায়ে ছাত্রশিবিরের টিম পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কফিনগুলো ক্যাম্পাসে প্রবেশ করায়। শেষে অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে কফিন ভিসি চত্বরে পৌঁছায় এবং সেখানেই জানাজার আয়োজন হয়।”

ঘটনার সময় রাজু ভাস্কর্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর টিয়ারশেল ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে আহত হন বহু শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনের জোয়ার সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

এই ঘটনার স্মরণে আজ আবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে কফিন মিছিলের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের নেপথ্যের ঘটনা। স্মৃতিচারণ ও তথ্যভিত্তিক মতপার্থক্য হলেও এটি স্পষ্ট—তৎকালীন ছাত্রদের সাহস, কৌশল ও ঐক্য এই ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসূচিকে সফল করে তোলে, যা ২০২৪ সালের আন্দোলনের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়ে পরিণত হয়।