কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, যিনি নাকি মায়ের পাশে দাঁড়ালেন না, তিনি সংকটে দেশের পাশে কীভাবে দাঁড়াবেন? এই প্রশ্ন যেমন অবিবেচনাপ্রসূত তেমনই ইতিহাসবিমুখ। জিয়া পরিবার বারবারই 
নিজেদের ব্যক্তিগত সুবিধার চেয়ে দেশের কল্যাণকে বড় করে দেখেছে। বেগম খালেদা জিয়া দেশ ছাড়েননি; প্রতিকূলতা, মিথ্যাচার আর নিপীড়নের মুখেও তিনি বাংলাদেশের মাটিতে অবিচল থেকেছেন। তারেক রহমান কঠিন সময়েও দলের নেতৃত্বকে দৃঢ় ও সংগঠিত রেখেছেন, নতুন প্রজন্মকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করেছেন এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের দাবিকে ধারাবাহিকভাবে উচ্চকিত করেছেন। নেতৃত্ব মানে যে আবেগকে শাসন করতে জানা- তিনি তার বাস্তব উদাহরণ।
আমরা লক্ষ করছি, কিছু মহল, বিশেষ করে বিএনপির প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে জনমতকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকতেই পারে; কিন্তু অসুস্থ মানুষের শয্যাকে কেন্দ্র করে আক্রমণ, বিদ্বেষ ও বিদ্রুপ এগুলো কোনো সভ্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হতে পারে না। আমরা বিরোধীদের প্রতিপক্ষ, শত্রু নই। তাই আবেদন জানাই চরিত্রহননের এই নোংরা প্রতিযোগিতা থামান। ভিন্নমত প্রকাশ করুন যুক্তি দিয়ে, তথ্য দিয়ে, ভদ্রতা দিয়ে।
এমন পরিস্থিতিতে একজন দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদের করণীয় কী? প্রথমত বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করা দেশে এবং প্রয়োজনে বিদেশে। এটিই বিএনপির অগ্রাধিকার এবং তারেক রহমানের নেতৃত্বে দল সে ব্যবস্থাই করছে। পুরো বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, যিনি নিজেও একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরামর্শ, বিশেষজ্ঞ মতামত এবং পরিবারের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত এই তিন স্তম্ভে দাঁড়িয়ে আমরা এগোচ্ছি।
একজন সুযোগ্য রাজনৈতিক নেতার আরেকটি করণীয় হলো সংগঠনকে শৃঙ্খলায় রাখা উসকানি, বিভ্রান্তি ও আবেগতাড়িত পদক্ষেপ থেকে দূরে রেখে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, ধৈর্য ও দূরদর্শিতার চর্চা করা। নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রেখে তারেক রহমান সেই কাজটিই করছেন। তিনি তাঁর ব্যক্তিজীবনের এ চরম ক্রান্তিকালে ঠিক সেই মূল্যবোধেরই চর্চা করছেন, যা তাঁর দল চিরকাল প্রচার করেছে, ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়।’
আজ রিকশাচালক রাস্তার ধারে বসে হাত তুলে দোয়া করছেন, সাধারণ গৃহিণী চোখের জলে কোরআন খতম করে দোয়ায় মগ্ন; শিক্ষার্থী, শ্রমিক, পেশাজীবী দল-মতনির্বিশেষে মানুষ প্রার্থনা করছে বেগম খালেদা জিয়ার আরোগ্যের জন্য। তিনি আজ কেবল একটি দলের নেত্রী নন, তিনি আজ গোটা দেশের নেত্রী। তাঁর জন্য দল-মতনির্বিশেষে মানুষের এই কায়মনো প্রার্থনা জাতির আবেগ, সম্মান ও স্মৃতির বহিঃপ্রকাশ। এই ভালোবাসাই প্রমাণ করে তিনি কত বড় নেতা, তিনি গণমানুষের কতটা প্রিয়।
আমরা সবাই চাই গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়া দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন। তাই আহ্বান জানাই এই ক্রান্তিলগ্নে কাদাছোড়াছুড়ি বন্ধ হোক। আসুন আমরা মানবিকতা দিয়ে রাজনীতিকে শুদ্ধ করি। আমাদের মতভেদ থাক কিন্তু অসুস্থতা নিয়ে বিদ্রুপ না করি, কারও সন্তানের হৃদয়ের শোককে রাজনৈতিক মঞ্চে টেনে না আনি। দেশের সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ও মানুষের মর্যাদা এই তিনটি মূল্যবোধকে সামনে রেখে এগোলে আমরা সবাই লাভবান হব।
শেষ কথা তারেক রহমান আজ যে আত্মসংযম, দূরদৃষ্টি ও দায়িত্ববোধের পরিচয় দিচ্ছেন, তা রাজনৈতিক প্রজ্ঞারই বহিঃপ্রকাশ। ব্যক্তিগত বেদনার চেয়ে জাতীয় স্বার্থকে বড় করে দেখা সহজ নয়, তবু নেতার প্রকৃত পরীক্ষা সেখানেই। আমাদের বিশ্বাস, বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য সর্বোত্তম ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, সংগঠনকে সুসংহত রাখা এবং দেশকে বৃহত্তর ঝুঁকি থেকে নিরাপদ রাখা এই ত্রিবিধ দায়িত্ব তিনি পালন করে চলেছেন। বাকিটা সৃষ্টিকর্তার হাতে। আসুন আমরা সবাই তাঁর কাছে প্রার্থনা করি- গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য হোক, দেশ সুস্থ হোক, রাজনীতি হোক শিষ্টাচার ও প্রজ্ঞায় পরিপূর্ণ।
লেখক : প্রফেসর মার্কেটিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়



আপনার মতামত লিখুন :