সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে পাচার হচ্ছে শত শত টন সোনা


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : মে ৩১, ২০২৪, ৪:৫৪ অপরাহ্ণ /
সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে পাচার হচ্ছে শত শত টন সোনা

সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রতি বছর পাচার হচ্ছে শত শত টন সোনা। সোনার এসব চালান আসছে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক উন্নয়ন সহায়তা ও অ্যাডভোকেসি সংস্থা সুইসএইড। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে আমিরাতে চোরাই পথে প্রবেশ করেছে মোট ৪৩৫ টন সোনা। এর মধ্যে ৪০৫ টনের চালান এসেছে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে।

বর্তমান বাজারে এই পরিমাণ সোনার মূল্য ৩ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি। ছাড়া গত এক দশকে আমিরাতে চোরাচালানের মাধ্যমে এসেছে ২ হাজার ৫০০ টন সোনা, যার বর্তমান বাজারমূল্য ১১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।

সুইসএইড বলেছে, আমিরাতে চোরাই পথে ঢোকা এসব সোনা বৈধভাবে খনি থেকে উত্তোলন করা হয়নি। আইন এবং সরকারি বিধিনিষেধকে ফাঁকি দিয়ে আহরণ করা হয়েছে। এর অর্থ বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর অবৈধভাবে যে পরিমাণ সোনা আহরণ করা হচ্ছে, তার পরিমাণ বৈধভাবে উত্তোলিত সোনার প্রায় সমান কিংবা কোনো কেনো ক্ষেত্রে বেশি।

সুইসএইডের প্রতিবেদন প্রকাশের পর এ প্রসঙ্গে আমিরাতের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চোরাই সোনার প্রবেশ রোধে আমিরাতের সরকার গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বাজারে সোনা ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু এবং রত্নের ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত নতুন কিছু বিধিও জারি করেছে। এর আগে, ২০১৯ সালে সোনা চোরাচালান সংক্রান্ত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রয়টার্স। সেই অনুসন্ধানেও জানা গেছে, আমিরাতে প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার সোনা চোরাই পথে ঢুকছে।

আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, টনের পর টন সোনা চোরাই পথে প্রবেশ করায় একদিকে যেমন আমিরাত বিশাল অঙ্কের কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি এই সোনা থেকে প্রাপ্ত অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছে।

সুইসএইডের কর্মকর্তা মার্ক উমেল জানিয়েছেন, যদি কোনো দেশে প্রায় প্রতি বছর ৪০০ টনের বেশি সোনা প্রায় বিনা বাধায় পৌঁছায় ও কেনাবেচা হয়, তাহলে বুঝতে হবে সোনা চোরাচালান প্রতিরোধে ঐ দেশে কঠোর আইন নেই; কিংবা যদি থাকেও তাহলে সেই আইনের বাস্তবায়ন নেই। এশিয়ার দেশগুলোতে সোনার চালান পাঠানোর ক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে করিডোর হিসেবে ব্যবহার করছে পাচারকারীরা। এক্ষেত্রে তাদের প্রধান সহায়ক চোরাচালান ইস্যুতে আমিরাতের শিথিল আইন।

আফ্রিকার থেকে সোনা আমদানি করে- এমন দেশগুলোর আমদানি সংক্রান্ত তথ্য জাতিসংঘের বৈশ্বিক বাণিজ্যবিষয়ক তথ্যাগার ইউএন কমার্শিয়াল ট্রেড থেকে নিয়েছে সুইসএইড। সেই সঙ্গে সেসব দেশের সোনার বাজারের অভ্যন্তরীণ বাজারের তথ্যও সংগ্রহ করেছে। সংগৃহীত তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, জাতিসংঘের তথ্যের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ দেশীয় বাজারের তথ্যের মিল নেই।

অর্থাৎ জাতিসংঘের তথ্যাগারে প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ ক্রয়কৃত সোনার যে পরিমাণ উল্লেখ করছে, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ সোনা বেচাকেনা হয়েছে সেই দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বাজারগুলোতে। অর্থাৎ চোরাই সোনার প্রবেশ ও বাণিজ্য বন্ধে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোর উৎসাহ কম।

এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সোনা চোরাচালানের ক্ষেত্রে আমিরাতকে রুট হিসেবে ব্যবহার করছে আন্তর্জাতিক চোরাকারবারিরা। তবে আমিরাতের কর্মকর্তরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি বছর বাড়ছে সোনার দাম। বর্তমানে এই মূল্যবান ধাতুর দাম ২০০৯ সালের তুলনায় দ্বিগুণ।

এ অবস্থার সুযোগে বৈধভাবে সোনা উত্তোলনের পাশাপাশি বাড়ছে অবৈধভাবে উত্তোলনের হারও। সুইসএইডের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে বিশ্বের বিভিন্ন খনি থেকে বৈধভাবে তোলা হয়েছে প্রায় ৫০০ টন সোনা এবং অবৈধভাবে উত্তোলিত হয়েছে অন্তত ৪৪৩ থেকে ৫৯৬ টন সোনা।