রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের ব্যবস্থাপনায় সাত দিনব্যাপী যাত্রা উৎসব। ছুটির দিনের সঙ্গে রাজধানীতে যাত্রার আয়োজন, এদিন তিলধারণের জায়গা ছিল না মুক্তমঞ্চে! হাজারের বেশি দর্শকের উপস্থিতিতে উৎসবের প্রথম দিনে প্রদর্শিত হয় সুরুভী অপেরার নাটক ‘নিহত গোলাপ’। পালা নির্দেশনায় ছিলেন কবির খান।
উদ্বোধনী পর্ব শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শুরু হয় প্রথম দিনের আয়োজন। সুরুভী অপেরার পরিবেশনায় ‘নিহত গোলাপ’ যাত্রাপালায় এক করুণ কাহিনি তুলে ধরা হয়। এতে উঠে আসে মাধবপুর জমিদারের চক্রান্তের বাস্তব কাহিনি। যে চক্রান্তের বলি হয় রাধারানী কলেজের মেধাবী ছাত্র গোকুল। জমিদারের আত্মীয়কে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার কারণে গোকুলের জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। গোকুলকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয় ‘নিচু জাতের’ ছেলের অপবাদ দিয়ে। পরে সে সমাজবিরোধী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে। আয়োজকেরা জানান, এই উৎসবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিবন্ধিত সাতটি যাত্রাদল প্রতিদিন একটি করে ‘ঐতিহাসিক ও সামাজিক’ ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত যাত্রাপালা পরিবেশন করবে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত পালা পরিবেশিত হবে।
ছুটির দিন বিকেল থেকে আস্তে আস্তে দর্শক সমাগম বাড়তে থাকে মুক্তমঞ্চে। এর মাঝে কেউ কেউ এসেছিলেন যাত্রাপালার দিনের স্মৃতি ফিরে পেতে, আবার কেউবা এসেছিলেন প্রথমবার যাত্রা দেখতে। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছাত্র থেকে শ্রমিক, হকার সব পেশার মানুষ যেন একসঙ্গে মিশে গেছেন মুক্তমঞ্চে।
এর আগে যাত্রা উৎসবের উদ্বোধন করেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী রিকশাচালক ইসরাফিল মজুমদার। এ পর্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্তিত ছিলেন যাত্রাশিল্পী অনিমা দে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক ফয়েজ জহির। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক, নাট্যনির্দেশক ও শিক্ষক জামিল আহমেদ। দর্শকসারি থেকে যাত্রা উপভোগ করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
সভাপতির বক্তব্যে শুরুতেই জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে মহাপরিচালক বলেন, ‘বিদ্যুচ্চমকের মতো দ্রুতবেগে ঘটে যাওয়া এক নির্ভয় অভ্যুত্থানের অগ্নিগর্ভ ছিঁড়ে জন্ম নিয়েছে নতুন এই বাংলাদেশ।’
সংস্কৃতি খাতে বাজেট বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে মহাপরিচালক জামিল আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় বাজেট যেখানে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা, সেখানে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ কেবল ৭৭৮ কোটি টাকা।’ সংস্কৃতি খাতে এত স্বল্প বাজেট নিয়ে সরকারের কাছে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
জামিল আহমেদ আরও বলেন, ‘শিল্পকলা একাডেমি মনে করে, শিল্পচর্চা জনজীবনের কেন্দ্রে অবস্থিত। শিল্পচর্চার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে এবং গ্রামীণ জনসাধারণের বিনোদনের ঐতিহ্য বিবেচনায় আমরা এই যাত্রাপালার আয়োজন করেছি। আমরা চাই আপনারা সবাই যাত্রাশিল্পীদের পাশে থাকুন।’
একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক ফয়েজ জহির উপস্থিত বিপুল দর্শককে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘সকলের সহযোগিতায় এই উৎসব আমরা সারা দেশে যেন ছড়িয়ে দিতে পারি। যাত্রাশিল্পসহ শিল্পকলার সকল মাধ্যমকে প্রবাহিতভাবে বেগবান করার সময় এসেছে।’
জুলাই বিপ্লব–উত্তর সময়ের বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম স্থবিরতা কাটিয়ে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যাত্রা উৎসব-২০২৪।
‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের ব্যবস্থাপনায় আজ ১ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর এ যাত্রা উৎসব চলবে।
আপনার মতামত লিখুন :