হাইকোর্টে বেঞ্চ দেয়া হলোনা ১২ বিচারপতির


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১৭, ২০২৪, ৮:৫২ পূর্বাহ্ণ /
হাইকোর্টে বেঞ্চ দেয়া হলোনা ১২ বিচারপতির

বুধবার হাইকোর্ট চত্বরে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা -সাবা

  • *অপসারণে ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ শুনানি রোববার *রোববার বিকেল পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত

গত সাড়ে ১৫ বছরে হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ করা দুর্নীতিবাজ ও দলীয়কর্মীর মতো আচরণকারী বিচারপতিদের অপসারণ দাবিতে চলা আন্দোলন স্থগিত করে সুপ্রিম কোর্ট ছেড়েছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা। আপাতত হাইকোর্ট বিভাগে ১২ জন বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা।

এ ছাড়া বিচারপতিদের অপসারণ নিয়ে ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে মামলার রিভিউ শুনানির জন্য আগামী ২০ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। রিভিউ নিষ্পত্তির মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণ নিয়ে জটিলতা নিষ্পত্তি হবে বলেও জানানো হয়।

গতকাল বুধবার বিকেল ৪টার দিকে হাইকোর্টের বর্ধিত ভবনের সামনে বিক্ষোভস্থলে এসে এই তথ্য জানান সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল। তার এই ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা হাইকোর্ট এলাকা ছাড়েন। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা শেষে এ সিদ্ধান্ত হয়।

  • ওই ১২ বিচারপতি হলেন বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস, বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার, বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান, বিচারপতি আতাউর রহমান খান, বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিন, বিচারপতি মো. আক্তারুজ্জামান, বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম, বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলন, বিচারপতি খিজির হায়াত, বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান।

আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে গতকাল দুপুর থেকে সুপ্রিমকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে আসছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অন্যদিকে হাইকোর্ট বিভাগের দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি পালন করছিল বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ। আর ফ্যাসিবাদের দোসর বিচারপতিদের অনতিবিলম্বে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করছিল জাতীয় নাগরিক কমিটি-লিগ্যাল উইং।

এই কর্মসূচি চলার মধ্যেই খবর ছড়ায়, প্রধান বিচারপতি হাইকোর্ট বিভাগের ১২ বিচারপতিকে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এই ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও খবর পাওয়া যায়। এখন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল জানালেন, আপাতত হাইকোর্ট বিভাগে ১২ জন বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না।

আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে আজিজ আহমদ ভূঞা বলেন, আমি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল হিসেবে আপনাদের দাবিগুলো নিয়ে আপনাদের লিডাররা আমার চেম্বারে বসেছেন। দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেছি। পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলেছি। সঙ্গে আমার দুজন সহকর্মী ছিলেন।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন বিচারপতিদের পদত্যাগ বা অপসারণের একটা প্রক্রিয়া আছে। বর্তমানে দেশে এ সংক্রান্ত কোনো আইন বিদ্যমান নেই। বিগত সরকার সংসদের মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছিল। একটা সংশোধনী হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট সেটা বাতিল করে দিয়েছেন এবং সরকার সেটা রিভিউ আকারে পেশ করেছে। আগামী ২০ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগে সেটির শুনানি হবে। এক নম্বর আইটেমে রাখা হয়েছে জানালেন রেজিস্ট্রার জেনারেল।

তিনি বলেন, আসলে বিচারপতিদের নিয়োগকর্তা হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি এবং পদত্যাগ বা অপসারণের উদ্যোগও রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে হয়ে থাকে। এখানে প্রধান বিচারপতির যেটা করণীয় উনি সেটা করেছেন। আপাতত ১২ জন বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। বেঞ্চ না দেওয়ার অর্থ হলো, আগামী ২০ অক্টোবর যে কোর্ট খুলবে, তারা সেখানে বিচারকাজে অংশ নিতে পারবেন না। বাকি বিষয়গুলো পর্যায়ক্রমে শুনানির মাধ্যমে আপনাদের সামনে আসবে।

এর আগে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর সঙ্গে আলোচনার পর বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সামনে গিয়ে এ ঘোষণা দেন আজিজ আহমদ ভূঞা।

এসময় হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা আগামী রোববার বিকেল পর্যন্ত দেখবো। এরপর বিকেল সোয়া ৪টার দিকে আন্দোলনকারীরা আদালত প্রাঙ্গণ ছাড়েন। দলবাজ, দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টের দোসর’ বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে গতকাল বুধবার দুপুর থেকে হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অন্যদিকে, ফ্যাসিবাদের দোসর বিচারপতিদের অনতিবিলম্বে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক কমিটি।

কর্মসূচি চলাকালেই খবর বেরোয়, প্রধান বিচারপতি হাইকোর্ট বিভাগের ১২ বিচারপতিকে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এই ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও গুঞ্জন ওঠে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ঘেরাও কর্মসূচি ও বিক্ষোভের মধ্যেই ১২ বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখার ঘোষণা আসে।

সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা যায়, ১২ বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর হিসেবে কাজ করেছেন। এর আগে গতকাল দুপুরে আওয়ামীপন্থী বিচারপতিদের অপসারণসহ তিন দাবিতে এক ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল বুধবার দুপুর ১টার দিকে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে এ আল্টিমেটাম দেন সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এই সমন্বয়ক বলেন, হাজার হাজার মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের দোসররা শহীদদের রক্তের সঙ্গে গাদ্দারি করে ‘শেখ হাসিনা সরকার, বারবার দরকার’ স্লোগান দেয়। তাদের ন্যূনতম অনুশোচনা নেই। আমরা এক দফার মূল কথা ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থার বিলোপ চাই।

এর আগে পূর্বঘোষিত হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে মিছিল নিয়ে হাইকোর্ট এলাকা ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচিতে নামেন শিক্ষার্থীরা। এদিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নানা শ্রেণির-পেশার মানুষও মিছিলে অংশ নেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সমন্বয়কেরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩ দফা দাবিগুলো হলো- আওয়ামীপন্থী ‘ফ্যাসিস্ট’ বিচারপতিদের অপসারণ করতে হবে, সারাদেশে সুপ্রিম কোর্ট, জজ কোর্ট, দায়রা জজ আদালত থেকে আওয়ামী প্যানেলের আইনজীবীদের অপসারণ করতে হবে এবং অনতিবিলম্বে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করতে হবে।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত প্রাঙ্গণে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। ওই সময় তারা ‘শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার’, ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’সহ নানা স্লোগান দেন। ২০ থেকে ২৫ জন আইনজীবী ওই বিক্ষোভে অংশ নেয়ার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের এ বিক্ষোভ কর্মসূচির প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার রাতে ফেসবুকে দেয়া পোস্টে হাইকোর্ট ঘেরাওয়ের কর্মসূচির ডাক দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ।