পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গত দেড় দশকে দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের বড় গন্তব্য ছিল যুক্তরাজ্য, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্র। মূলত স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসনের অভাব আর প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির প্রশ্রয়ে এ দেশের টাকা খুব সহজেই পাচার হয়েছে ভিন দেশে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বলছে, এ সময়ে প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। আর এই পাচারের প্রায় ৮০ শতাংশই হয়েছে বাণিজ্যের আড়ালে।
তবে এবার যেসব অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে, তা দেশে ফেরত আনার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে টাস্কফোর্স গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এজন্য বিশ্বব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে সরকার আলোচনা শুরু করেছে। এদিকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা এবং পাচাররোধে করণীয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) লিগ্যাল অ্যাটাশে রবার্ট ক্যামেরুন নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের কাছে পাচারের টাকা ফেরাতে সহায়তা চেয়েছে দুদক।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য অনুসারে, গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশ থেকে অন্তত ১৪ হাজার ৯২০ কোটি বা ১৪৯.২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় পাচার করা টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলারে ১১৮ টাকা ধরে)। এ হিসাবে গড়ে প্রতিবছর পাচার করা হয়েছে অন্তত একলাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা।
তথ্য-উপাত্ত থেকে আরও জানা যায়, পণ্য আমদানি-রপ্তানির আড়ালে বড় অঙ্কের মুদ্রা পাচার করা হয়। কখনো আন্ডার ইনভয়েস, কখনোবা ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে এই পাচার হয়ে থাকে। প্রবাসীদের বাড়তি টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে হুন্ডির মাধ্যমেও একটি বড় অঙ্কের টাকা পাচার হয়। দেশের গুটিকয় অসাধু শীর্ষ ব্যবসায়ী থেকে মাঝারি স্তরের ব্যবসায়ী-আমদানিকারকরাও এই পাচারচক্রের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।
এ ক্ষেত্রে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কাস্টমস, বন্দরসহ অনেক সংস্থার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদেরও যোগসাজশ থাকার প্রমাণ রয়েছে।
এক সময় বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের জনপ্রিয় গন্তব্য ছিল সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, কানাডাসহ করস্বর্গ খ্যাত কিছু দ্বীপরাষ্ট্র। তবে গত কয়েক বছরে অর্থপাচারের গন্তব্য বদলে গেছে। বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বা পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো অর্থের নিরাপদ গন্তব্য হয়ে উঠছে।
সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে দেশটিতে বাংলাদেশীদের জমা অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ ১১ হাজার সুইস ফ্রাঁ। ২০২২ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের জমা করা আমানতের পরিমাণ ছিল পাঁচ কোটি ৫২ লাখ ১১ হাজার সুইস ফ্রাঁ এবং ২০২৩ সাল শেষে এটি নেমে এসেছে এক কোটি ৭৭ লাখ ১২ হাজার সুইস ফ্রাঁয়।
এদিকে, ব্রিটিশ সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১০ সালের জানুয়ারিতেও যুক্তরাজ্যের আবাসন খাতে সম্পত্তি মালিকের বাংলাদেশের ঠিকানা ব্যবহার করে নিবন্ধিত প্রপার্টির সংখ্যা ছিল ১৫। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ এবং ২০২১ সালের আগস্টে এই সংখ্যা বেড়ে ১০৭-এ উন্নীত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের (সিএফএডিএস) সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে তথ্য গোপন করে দুবাইয়ে প্রপার্টি কেনেন ৪৫৯ বাংলাদেশী।
আপনার মতামত লিখুন :