২দিন পর জাহাজ ভিড়লো চট্টগ্রাম বন্দরে


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : মে ২৯, ২০২৪, ৭:২৪ পূর্বাহ্ণ /
২দিন পর জাহাজ ভিড়লো চট্টগ্রাম বন্দরে

ঘূর্ণিঝড় রিমালের বর্ধিত প্রভাবে সমুদ্র উপকূল খুবই উত্তাল অশান্ত থাকায় দুইদিন পর গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি-বার্থে জাহাজ ভিড়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বন্দরের বিভিন্ন জেটিতে ১২টি জাহাজ ভিড়ে। ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে রোববার সকালেই ১৯টি জাহাজ জেটি-বার্থ থেকে বহির্নোঙরে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। তার মধ্যে গতকাল বেলা ১১টার পর একে একে ১২টি জাহাজ ফিরিয়ে আনা হয়। এসব জাহাজ ভেড়ার পরই মূলত শুরু হয় চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ওঠানামা।

ঘূর্ণিঝড় রিমাল বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করার পরও সাগর প্রচণ্ড উত্তাল থাকায় দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে সোমবার সারাদিনে এমনকি রাত পর্যন্ত চেষ্টা করেও কোন বাণিজ্যিক জাহাজ জেটি-বার্থে ভেড়ানো সম্ভব হয়নি। এ কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বন্দরের পুরো জেটি-বার্থ ছিল খালি, সুনসান। কেন না উত্তাল সমুদ্রে তা ছিল বন্দরের অবকাঠামো ও জাহাজের জন্যও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। যদিও করিৎকর্মা আবহাওয়া বিভাগ (বিএমডি) সোমবার সকালেই চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে দেয়া ৯ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত হঠাৎ এক লাফে ৩-এ নামিয়ে ফেলে! সেই সঙ্গে আবহাওয়া বিভাগের মতো করিৎকর্মা কর্পোরেট ব্যবসায়ী হাউসের বিশেষ এক প্রিন্টিং মিডিয়ায় গতকাল মিথ্যচারের গালগল্প প্রকাশ করা হয়েছে।

তাতে বলা হয়েছে, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে ফের কাজ শুরু, জেটিতে জাহাজ ফেরানোর পর ফের লোডিং-আনলোডিং’। এ ধরনের আজগুবি ভুয়া ও মিথ্যা খবরে বন্দর-শিপিং সার্কেলে বিস্ময় ও হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেরই প্রশ্ন, ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে বহির্নোঙর থেকে জাহাজ ভেড়াতে না পারার প্রকৃত তথ্যকে পাশ কাটিয়ে ঠিক বিপরীত সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে এহেন মিথ্যাচারের উদ্দেশ্য কী? প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল সোমবার ভোরে উপকূল অতিক্রম করলেও এর সক্রিয় প্রভাবে সমুদ্র বন্দর ও বহির্নোঙর উত্তাল অশান্ত থাকাটা খুবই স্বাভাবিক।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলে প্রচণ্ড ঢেউয়ের কারণে সোমবার কোন জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ভেড়ানো যায়নি। জেটিতে কোন জাহাজ না থাকায় কনটেইনার বা পণ্যসামগ্রীও ওঠানামার কাজও বন্ধ থাকে। শুধুই বন্দর ইয়ার্ড থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম চলে। অর্থাৎ বন্দরের অপারেশনাল কাজ আংশিক চালু রাখা সম্ভব হয়। তবে দুইদিন পর গতকাল জেটিতে জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হয়।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক ইনকিলাবকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জেটি ইয়ার্ড থেকে বহির্নোঙ্গরে ফেরত পাঠানো ১৯টি জাহাজের মধ্যে ১২টি জেটিতে ভিড়েছে। বাকি জাহাজও জেটিতে ভেড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেওয়া ৪৯টি জাহাজ বহির্নোঙ্গরে ফিরে আসছে। বেলা ১১টা থেকে জেটিতে জাহাজ ভেড়ার পরপর পণ্য ওঠানামার কাজ শুরু হয়েছে।

সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে এখনও সাগর উত্তাল। তাই সোমবার কোন জাহাজ ভেড়ানো যায়নি। আজ (মঙ্গলবার) ১৯টি জাহাজের মধ্যে ১২টি জাহাজ বন্দরের জেটিতে ভিড়েছে। পণ্য ওঠানামার কাজও শুরু হয়েছে। পণ্য খালাস বন্ধ করে বহির্নোঙর থেকে গভীর সাগরে ফেরত পাঠানো ৪৯টি খোলা পণ্যবাহী জাহাজও বহির্নোঙ্গরে ফিরতে শুরু করেছে বলে জানান তিনি।

রিমালের প্রভাবে সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে গত রোববার সকালের জোয়ারে বন্দরের জেটি থেকে ১৯টি জাহাজ সাগরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। তাতে বন্দর জেটি ফাঁকা হয়ে যায়। বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানামা ও ইয়ার্ড থেকে পণ্য খালাসের মতো সব কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয় যথা নিয়মে। রোববার আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে দেয়া ৯ নম্বর মহাবিপৎ সংকেত সোমবার সকালে তুলে নেয়া হয়। এর পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলে আবহাওয়া বিভাগ।

আবহাওয়া বিভাগের এ ঘোষণার পর সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম বন্দরের সর্বোচ্চ সতর্কতা তুলে নেয়া হয়। তখন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল ৩টার জোয়ারে সাগর থেকে ১৯টি জাহাজ জেটিতে আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। কিন্তু কর্ণফুলী নদীর চ্যানেল ও সাগরে প্রচণ্ড ঢেউ থাকায় বন্দরের পাইলটদের পক্ষে সাগরে নোঙর করে রাখা জাহাজে যাওয়া সম্ভব ছিল না। তাই ঝুঁকি বিবেচনায় একটি জাহাজও জেটিতে আনা যায়নি।

এ বিষয়ে বন্দরের কর্মকর্তারা বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর থেকে কোন জাহাজ জেটিতে আনা যায়নি। তবে পচনশীল নয়, এমন পণ্যসামগ্রী বন্দর ইয়ার্ড থেকে খালাস করা হয়। বড় জাহাজ জেটিতে থাকলে প্রচণ্ড ঢেউয়ের কারণে জেটি-বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত (ড্যামেজ) হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে সাগরে জাহাজগুলো ইঞ্জিন চালু রেখে ঢেউ বা ঝড়ের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে ভাসতে পারে। এ জন্য সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে বড় জাহাজগুলো সাগরে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

এদিকে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূল অতিক্রম করলেও এর তীব্র প্রভাব রয়েছে এখনও। সমুদ্র উপকূলের প্রত্যক্ষদর্শী বাসিন্দা, নাবিক ও জেলেরা জানান, বাংলাদেশ সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর উপকূল এখনো প্রচণ্ড উত্তাল অশান্ত রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার ট্রলার নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রাসমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সঙ্কেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।

সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব এখনো সক্রিয় ও প্রবল। সাগর প্রচণ্ড উত্তাল থাকা সত্ত্বেও মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে দেয়া ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে দেয়া ৯ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত থেকে হঠাৎ এক লাফে সঙ্কেত ৩ নম্বরে নামানো নিছক তামাশা বৈ কী!

কেননা সমুদ্র বন্দরসমূহ সোমবার পর্যন্ত কোন জাহাজ নৌযান ভিড়া কিংবা অপারেশানাল কার্যক্রমের জন্য আদৌ উপযোগী ছিল না দুর্যোগপূর্ণ টালমাটাল আবহাওয়া পরিস্থিতি। সৈকতে আছড়ে পড়ছে পাহাড়সম ঢেউ। এহেন বৈরী আবহাওয়াকে আমলে না নিয়ে হঠাৎ সঙ্কেত তলানিতে নামিয়ে নেয়ার মতো খামখেয়ালিপনার দায় নেবে কী চার সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষ নাকি আবহাওয়া বিজ্ঞপ্তি জারিকারক আবহাওয়া বিভাগ? এ নিয়ে অনেকেই আবহাওয়া বিভাগের দায়িত্বহীনতার সমালোচনায় মুখর দেখা গেছে।