টানা পাঁচ দিন ধরে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন ছিল সারাদেশ। তবে গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮টার পর থেকে নির্দিষ্ট কিছু স্থানে সীমিত পরিসরে চালু করা হয় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা। এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে ব্যাংকিং, কমার্শিয়াল, কূটনৈতিক, প্রযুক্তি, আউটসোর্সিং, বাণিজ্যিক, রপ্তানি, মিডিয়া অধ্যুষিত এলাকা, এয়ারলাইন্সগুলোতে। তবে ইউটিউব, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চালুর বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এছাড়া এখনই চালু হচ্ছে না মোবাইল ফোন ইন্টারনেট সেবা। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট চালু করা হয়েছে। তবে এটি পরীক্ষামূলক।
জানা যায়, গতকাল রাত ৮টার পর থেকে প্রথমে ঢাকার একেকটি এলাকায় একের পর এক ইন্টারনেট সেবা চালু হতে থাকে। তবে এসময় ইন্টারনেট ব্যবহার করে ইউটিউব, ফেইসবুক, হোয়াটঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছিল না।
গত বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশ ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সরকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহাখালী, নারায়ণগঞ্জসহ কয়েকটি স্থানে ডাটা সেন্টারে অগ্নিসংযোগ, বিভিন্ন স্থানে ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ৫ দিন ধরে অত্যন্ত জরুরি সেবায় পরিণত হওয়া ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় থমকে যায় সকল ধরণের ডিজিটাল কার্যক্রম। বিপর্যয় নেমে আসে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগসহ সার্বিক ক্ষেত্রে। বিশেষ করে রপ্তানিভিত্তিক ব্যবসা পড়ে হুমকির মুখে। বিদেশী ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষায় ব্যর্থ হওয়া, তাদের বিভিন্ন বার্তার প্রতিত্তোর দিতে না পারা, নির্ধারিত সময়ে রপ্তানি পণ্য সাপ্লাই না দেয়াসহ সবকিছু মিলেই দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। রপ্তানিকারক ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট ও সফটওয়্যার এবং ফ্রিল্যান্সিংয়ে যুক্তদের তথ্য মতে বিগত ৫ দিনে শুধু ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ক্ষতি হয়েছে বিলিয়ন ডলারের বেশি।
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় প্রতিদিন ১৬শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কয়েকদিনে ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, ৫ বিলিয়ন ডলারের যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আমরা ফ্লাই করেছিলাম সেটাতে ঝামেলায় পড়বো। এছাড়া আমরা হয়তো অনেকগুলো জব হারাবো।
এর আগে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দেশের অন্যতম রপ্তানিকারক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এপেক্স গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিম মঞ্জুর বলেন, ডিজিটাল বেশি হয়ে যাওয়ায় আমরা বিপদে পড়েছি। ইন্টারনেট চালু না করলে কোন অর্ডার থাকবে না। প্রয়োজনে ই-মেইল করার মতো করে ইন্টারনেট চালু করে দেন। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী পলককে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি চাইলে এটুকু সুযোগ চালু করতে পারবেন। না হলে অর্ডার সব চলে যাবে, কোন অর্ডার থাকবে না। আমরা এই সপ্তাহটা পার করতে পারবো না। প্লিজ আমাদের সাহায্য করুন। আমাদের অর্ডারগুলো অন্যদের হাতে চলে যাবে।
বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে আমদানি-রপ্তানি সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কারণ আমাদের এখন সবকিছু ডিজিটালাইজড।
ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে বিগত এক দশকে ব্যাংকিং, আর্থিক লেনদেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগসহ সর্বক্ষেত্রেই বেড়েছে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রায় সবকিছুই অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ে ইন্টারনেটের ওপর। ব্যক্তিগত ব্যবহারের পাশাপাশি বাণিজ্যিক কার্যক্রম, দেশে বিদেশে-যোগাযোগ স্থাপন, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও নিবিড়ভাবে সংযুক্ত ইন্টারনেটের সাথে। কিন্তু হঠাৎ করে গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে বন্ধ হয়ে যায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা। এর আগে ওই দিনই বন্ধ রাখা হয় মোবাইল ইন্টারনেট। ফলে বিপাকে পড়েন সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গ্রাহক, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে যারা দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আমদানি-রপ্তানি, পণ্যের অর্ডার, যোগাযোগ, টিকেটিংসহ সার্বিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। ####
আপনার মতামত লিখুন :