রংপুর নগরীতে প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে ছোট-বড় সব সড়কেই এখন ব্যাটারিচালিত অটো ও চার্জার রিকশার দাপট। যানজটে নাকাল হয়ে পড়েছে মানুষ। রংপুর সিটি করপোরেশন থেকে নিবন্ধন (লাইসেন্স) দেওয়া রয়েছে ৮ হাজার ২৪০টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার। দুর্ঘটনা প্রবণ ও বিপজ্জনক এসব হালকা যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হলেও বাস্তবে চিত্র উলটো। বৈধ-অবৈধ মিলে এখন ৪০ হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও চার্জার রিকশা চলাচল করছে নগরীতে।
নগরীর পায়রা চত্বরের পাশে হারাগাছ সড়কের মধ্যে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড। পায়রা চত্বর থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত পাঁচ মিনিটের হাঁটাপথ, অটোরিকশায় গেলে সময় লাগছে আধঘণ্টা। এই সড়কের মতো রংপুর নগরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কের ১২টি স্হানে ৩০টির বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। এর সব কটিই অবৈধ। এভাবে যত্রতত্র স্ট্যান্ডের কারণে নগরবাসীর দুর্ভোগ বাড়ছে।
বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দেখা যায়, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো রিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ঠাসা। যাত্রী দেখলেই চালকরা যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ছে। আবার সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীর আশায় অটোরিকশাগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। দীর্ঘ সারির কারণে পথচারীদের সড়কের এক পাশ থেকে অন্য পাশে যাওয়াও কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
নগরের কাচারী বাজার মোড় থেকে পুলিশ লাইনস স্কুল মোড়, টাউন হল চত্বর মোড় সিটি করপোরেশন ও সিটি বাজারের মোড়, সুপার মার্কেট মোড়, পায়রা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড় পর্যন্ত সকাল থেকে সন্ধ্যা পুরোটা সময়ই যানজট থাকে। জাহাজ কোম্পানি মোড় এলাকায় চারদিক থেকে চারটি সড়ক এসে মিলেছে। নগরের প্রধান ব্যাবসায়িক কেন্দ্র হাঁড়িপট্টি, লোহাপট্টি ও বেতপট্টি। এই এলাকার ছোট সংযোগ সড়কগুলোয় কেনাকাটা করতে এসে দীর্ঘ সময় মানুষকে যানজটে আটকে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
রংপুর সিটি বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে চার্জার রিকশায় বাড়ি ফিরছিলেন ফারুক মিয়া। যানজটে আটকে পড়ে বিরক্ত হয়ে তিনি বললেন, পুরো বাজার ঘুরে শাক সবজিসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী কিনতে এক ঘণ্টারও কম সময় লেগেছে। কিন্তু এখন দেখছি বাজার করতে যত সময় লাগে, তার থেকে বেশি সময় রাস্তায় চলে যাচ্ছে। সিটি বাজার থেকে ৩০ মিনিটেরও বেশি সময়ে ৫০০ গজ দূরত্বে জাহাজ কোম্পানি মোড় পর্যন্ত এসেছি। নগরীর পায়রা চত্বরে চার্জার রিকশাচালক মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়।
তিনি বদরগঞ্জের শ্যামপুর থেকে প্রতিদিন নগরীতে এসে রিকশা চালিয়ে রাতে আবার ফিরে যান। সঙ্গে বৈধ কাগজপত্র না থাকার কথা স্বীকার করে এই রিকশাচালক বলেন, রংপুর শহরে ভালোই কামাই হয়। কিন্তু যানজটে সময় নষ্ট হয়। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের রেজিস্টার ডা. জামাল উদ্দিন বলেন, চার্জার রিকশা আর ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার অটোর যন্ত্রণায় টেকা মুশকিল। এদের জন্য রাস্তা পার হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বাড়ছে দুর্ঘটনা।
রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, ব্যাটারিচালিত বৈধ অটোরিকশার সংখ্যা ৫ হাজার ২৪০ এবং বৈধ চার্জার রিকশার সংখ্যা ৩ হাজার। সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি নতুন আর কোনো নিবন্ধন দেননি। কিন্তু নগর জুড়ে বর্তমানে ১৫-২০ হাজারের মতো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও চার্জার রিকশা চলাচল করছে।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও চার্জার রিকশা চলাচল করার কারণে যানজট নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো যানজটমুক্ত রাখতে অনেকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু থেমে থেমে আবার একই ঘটনা ঘটছে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে যানজটের কারণে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে না হয়।