অপরিকল্পিত ঘের ও খালে পাটার খেসারত হাজার বিঘা জমির ধান পানির নীচে


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪, ১০:৪০ অপরাহ্ণ /
অপরিকল্পিত ঘের ও খালে পাটার খেসারত হাজার বিঘা জমির ধান পানির নীচে

অপরিকল্পিত ঘের তৈরি ও খালে একের পর এক অবৈধভাবে পাটা দেয়ার কারণে পানি নিষ্কাশন হচ্ছেনা যশোরের নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ছয়টি মাঠ ও কয়েকটি গ্রামের। এ কারণে এসব মাঠের এক হাজারেরও বেশি বিঘা ধান পানির নীচে রয়েছে। অনেক ধানে পচন ধরেছে। শংকা ও উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন ওই এলাকার কৃষক।

অন্যদিকে, বাসাবাড়িতে এখনো হাঁটু পানি থাকায় জীবন-জীবিকাতেও পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। ভুক্তভোগীরা দ্রুত পাটা অপসরণ ও ঘের মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা তরান্বিত করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ওই ঘের ও যত্রতত্র পাটা দেয়াকে দায়ী করে কার্যকরী ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানিয়েছেন।

গত ১৪ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা তিন দিনের প্রবল বর্ষণে যশোরের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ভোগান্তিতে পড়েন ভুক্তভোগী মানুষ। ওই তিন দিনে ভারী থেকে থেমে থেমে আরও এক দিনের বৃষ্টিতে যশোর আবহাওয়া অফিস ৩২৭ মিলিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় খোদ যশোর শহর ও গ্রামাঞ্চলে। পানিতে তলিয়ে যায় মাঠের পর মাঠ। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে তত শহর থেকে পানি নেমে গেছে। কিন্তু, শহরতলী ও গ্রামাঞ্চলের মাঠঘাট থেকে এখনো পানি নিষ্কাশিত হয়নি। এভাবেই তলিয়ে আছে সদর উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ছয়টি মাঠের প্রায় এক হাজার বিঘার বেশি জমির ধান।

এই ইউনিয়নের বড় বালিয়াডাঙ্গা, ছোটবালিয়াডাঙ্গা, তেলিকুড়ি, আড়পাড়া, কায়েতখালী, শালিয়াট মাঠের সহস্রাধিক বিঘা জমির ধান এখনো পানির নীচে দেখা গেছে। কোনো কোনো মাঠে ধান গাছে পচন ধরেছে। আর দু-এক দিনের মধ্যে পানি না কমলে ওই ছয়টি মাঠে কোনো ধান কৃষকের ঘরে উঠবেনা বলেও জানিয়েছেন কৃষক। এছাড়া তালবাড়িয় মাঠের একাংশ পানিতে ডুবে আছে।

স্থানীয় কৃষক ও গ্রামবাসী জানিয়েছেন, ওই মাঠগুলোতে অপরিকল্পিত এবং কায়েতখালী, ঘুরুলিয়া, চিংয়েডাঙ্গা, তালবাড়িয়া ও ধানঘাটা ব্রিজ পর্যন্ত খালটিতে ইচ্ছেমত পাটা বসিয়ে মাছ চাষ করছেন স্থানীয়রা। ওই ঘেরের মাটি, পাড় ও খালে যত্রতত্র পাটার কারণে পানি নিস্কাশন হচ্ছেনা। যে কারণে ধানঘাটা ব্রিজ হয়ে জলেশ্বর বিলে যে পানি সরবরাহ হতো তা হচ্ছেনা বললেই চলে। এ কারণে বর্ষণের পাঁচদিন পার হলেও পানি কমছেনা ওই এলাকার মাঠগুলোতে।

এলাকার কৃষক আয়নাল হোসেন, আলতাফ হোসেন, জসীম উদ্দিন, ইমামুল হোসেনসহ অনেকেই জানান, ছয়টি মাঠের এক হাজারেরও বেশি বিঘা ধান পানির নীচে। এবার ওই সব জমির ধান ঘরে উঠবেনা। কায়েতখালী থেকে ঘুরুলিয়াগামী খালে অনেকগুলো পাটা রয়েছে। ব্যক্তি স্বার্থে পাটা দেয়ায় পানি নিস্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যে কারণে পানি সরছেনা। আর একদিকে ছয়টি মাঠ এবং বালিয়াডাঙ্গাসহ কয়েকটি গ্রামে এখনো হাঁটু পানি রয়েছে। সব মিলিয়ে চরম হতাশা আর উৎকণ্ঠায় সময় কাটছে এলাকার কৃষকদের।

এলাকাবাসী বলেছেন, কয়েক বছর আগেও পানি জমে গেলে তা দ্রুত সরে যেত কয়েক দিনেই। আর এখন পাটা ও ঘেরের কারণে খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছেনা। জলেশ্বরের বিলেও পানি আগের মত প্রবেশ করছেন বাধার কারণে।

এলাকাবাসীর দাবি, এখানে দ্রুত প্রশাসন হস্তক্ষেপ করে পাটা অপসরণ করলে এবং ঘেরগুলোর কারণে যে মাটি ও পাড় দিয়ে পানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সেগুলো কেটে দিলে পানি প্রবাহ বাড়বে। আর খাল হয়ে পানি জলেশ্বরের বিলে পড়লেও পানি সরে যাবে মাঠ থেকে।

এ ব্যাপারে নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর তুহিন গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নে ভয়াবহ অবস্থা মাঠের পর পাঠ পানি। ছয়টি মাঠের কমপক্ষে এক হাজার বিঘা ধান পানির নীচে। অধিকাংশ কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে। অপরিকল্পিত ঘের ও পাটার কারণে এই সমস্যা বলে তিনি খোঁজখবর নিয়ে জানতে পেরেছেন।

এলাকার কিছু সুবিধাবাদী লোকজন ওই পাটা ও ঘের দিয়েছেন। দশের ক্ষতি হলেও ব্যক্তিস্বার্থে এগুলো করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় ওই ঘেরগুলো ওই পাটার ব্যাপারে তিনি কার্যকরী ব্যবস্থা নেবেন। তিনি জানান, কয়েকটি গ্রামেও এখনো পানি রয়েছে। মাঠের পর মাঠ পানি থৈ থৈ করছে। দেখে মনে হচ্ছে সমুদ্র। এ ব্যাপারে তিনি সরকারের উপর মহলেরও সহযোগিতা চেয়েছেন।

স্থানীয় মেম্বার মাসুম রেজা লিপু গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, পাটা ও ঘেরের কারণে জলাবদ্ধতা কমছেনা। জলেশ্বরের বিলে পানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত এর প্রতিকার না হলে শ’শ’ কৃষক এবার পথে বসে যাবেন। একটি ধানও উঠবেনা। তিনি দ্রুত এ ব্যাপারে কার্যকরী ব্যবসস্থা নেয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মহলের সাথে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন।