অভ্যুত্থান নস্যাৎ করতে অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে চক্রান্ত করছে – মির্জা ফখরুল


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪, ৯:১১ পূর্বাহ্ণ /
অভ্যুত্থান নস্যাৎ করতে অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে চক্রান্ত করছে – মির্জা ফখরুল

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান নস্যাৎ করে দেয়ার জন্যে অত্যন্ত পরিকল্পিভাবে একটা চক্র কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই চক্র কারা? কারা চক্রান্ত করছে? কারা কাজ করছে? সেটা আপনারা জানেন। পতিত ফ্যাসিবাদ হাসিনা ভারতবর্ষে আশ্রয় নিয়েছেন এবং সেখান থেকে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে এই বাংলাদেশ সম্পর্কে, বাংলাদেশের মানুষের সম্পর্কে। এই অপপ্রচার কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষ এটাকে অবশ্যই প্রতিবাদ করছে, এই ধরণের অপপ্রচারে তারা কান দেবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস পালনে বিএনপির ঘোষিত দুইদিনের কর্মসূচির প্রস্তুতি পর্যালোচনা করতে গতকাল বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের নিয়ে সমন্বয় সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।

শিল্পখাতে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চলছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, শিল্পক্ষেত্রে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমি অনুরোধ জানাব, যারা দেশপ্রেমিক মানুষ আছেন তারা সকলে একযোগে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ধরণের প্রবণতাকে নস্যাৎ করে দেবেন, প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। যেন কোনো ব্যক্তি কোনোভাবেই বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্যকে বিনষ্ট করতে না পারে। আমরা সকলকে অনুরোধ করব, এই শিল্প-কল-কারখানাগুলো চালু রাখার ক্ষেত্রে বিএনপির নেতা-কর্মীরা যে যেখানে আছি আমরা যেন সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে পারি।

তিনি বলেন, একটা অভ্যুত্থান যখন হয়, একটা বিপ্লব যখন হয়, কুসমাস্তীর্ণ নয়। এইযে সমস্যাগুলো আছে সেগুলোকে পেরিয়ে কাজ করতে হয়। একটু ধৈর্য্য তো আমাদেরকে ধরতেই হবে এবং মানুষকে সহযোগিতা করতে হবে। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে ঐক্যকে অটুট রাখা, নিজেরা ধৈর্য্যশীল হওয়া। একেবারেই এই ধরনের কর্মকান্ড যাতে কেউ করতে না পারে তার জন্য প্রতিরোধ সৃষ্টি করা।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষিত রূপরেখার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য রেখেছেন এবং তিনি কিছু সংস্কারের কথা বলেছেন। সেখানে সংস্কারে যারা দায়িত্বে তাদের নামও উল্লেখ করেছেন। তিনি মোটামুটিভাবে তার এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভিশন মোটা দাগে তুলে ধরেছেন। এখানে আমি মনে করি যে, সংস্কারের কথা আমরা সবাই বলেছি, সংস্কার প্রয়োজন।

গণতান্ত্রিক অধিকার একেবারে ধ্বংস করে ফেলেছিলো। সেক্ষেত্রে অতিদ্রুত যেন এই সংস্কারের কাজগুলো শেষ করা হয়, মূল যে বিষয়টা গণতন্ত্রের জন্যে, জনগণের প্রতিনিধিদের শাসন, জনগণের পরিচালনায় তাদের নির্বাচিত পার্লামেন্ট দিয়ে দেশ চলবে। সেই বিষয়টা যেন অবশ্যই খুব দ্রুততার সঙ্গে সমাপ্ত হয়, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা থাকবে।

তিনি বলেন, আমরা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাফল্য কামনা করি। আমরা মনে করি যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করছেন। এই কাজ করার জন্য তাদেরকে সময়-সুযোগ সবই দেয়ার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আশা করি, তারা যথা শিগগিরই সম্ভব স্বল্প সময়ের মধ্যে এই কাজগুলো (সংস্কার) শেষ করে নির্বাচনের দিকে যাবেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এসেছে। আমরা আশা করব, তারা জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। একটি কথা স্পষ্টভাবে বলা প্রয়োজন, গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। গণতন্ত্র হচ্ছে একমাত্র ব্যবস্থা যা জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে। সেজন্যই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠাগুলোকে তৈরি করা হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু সেই কাজটাতে জনগণের সম্পৃক্ততা থাকতে হবে। জনগণ কি চায়, জনগণ কিভাবে জিনিসটা দেখতে চায় সেই বিষয়টা থাকতে হবে।

প্রশাসনে অস্থিরতার বিষয়ে সকলকে ধৈর্য্য ধরার আহবান জানিয়ে বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, এই রকম বিপ্লবের পরে এই ধরনের সমস্যা থাকতেই পারে। এটা তো সম্পূর্ণ নতুন সরকার। প্রশাসনে এতোদিন ধরে আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ রাজনীতিকরণ করতে গিয়ে সব জায়গায় বেশিরভাগ লোকই তাদের মতালম্বীদের প্রমোশন দিয়েছে, পদায়ন করেছে, তাদেরকে দিয়ে কাজ করিয়েছে। ফলে এটা একটু সময় লাগবেই। পুরোপুরিভাবে নতুন করে তো এই মুহুর্তে রিক্রুট করে এতো অফিসার নিয়োগ করা সম্ভব না। যা আছে তাদেরকে দিয়ে করতে হবে। সেজন্য আমাদেরকে একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে। আমার বিশ্বাস যে, অতি অল্প সময়ের মধ্যে সব কিছু সুষ্ঠু হয়ে যাবে।

গণতন্ত্র দিবসের কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস। এজন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়ার জন্যে এই দিবসটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে আমরা পালন করতে চাই। দুই দিনের কর্মসূচি আমরা নিয়েছি। ১৪ সেপ্টেম্ব ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিকাল সাড়ে তিনটায় সমাবেশ হবে। বিগত ১৪/১৫ বছরে যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন তাদেরকে নিয়ে এই সমাবেশটি হবে। ১৫ সেপ্টেম্বর বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ হবে। আমরা যে একটা ট্রানজিশনাল পিরিয়ডের মধ্যে আছি, এখন গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে আরও ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আমরা এই সমাবেশটি গুরুত্বের সাথে করতে চাই। ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরের মহানগরে র‌্যালী অনুষ্ঠিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মীর সরাফত আলী সপু, সাইয়্যদুল আলম বাবলু, শওকত হোসেন সরকার, ঢাকা জেলার খন্দকার আবু আশফাক, মানিকগঞ্জের আফরোজা খান রীতা, এম এ জিন্নাহ, গাজীপুরের ফজলুল হক মিলন, রিয়াজুল হান্নান, নরসিংদীর খায়রুল কবির খোকন, মুন্সিগঞ্জের কামরুজ্জামান রতন প্রমুখ।

এছাড়া ঢাকা মহানগরের আমিনুল হক, তানভীর আহমেদ রবিন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, যুবদলের এম মোনায়েম মুন্না, নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, মৎস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, জাসাসের হেলাল খান, জাকির হোসেন রোকন প্রমুখ নেতারা ছিলেন।