যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় অগ্রগতি হলে আদতে ‘ইউক্রেনের ভূখণ্ড-’ হিসেবে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত ক্রিমিয়ার রুশ দখলদারিকে মেনে নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার এ ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রসচিব মার্কো রুবিও। তিনি বলেন, ‘আলোচনার মাধ্যমে ক্রিমিয়ার উপর রাশিয়ার দাবির বিষয়টির সমাধান হতে পারে।’
কিন্তু সেই সঙ্গেই রুবিওর হুঁশিয়ারি, যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত আলোচনায় অগ্রগতি না হলে ওয়াশিংটন পুরো প্রক্রিয়া থেকে হাত গুটিয়ে নিতে পারে। প্যারিসে ইউক্রেন এবং ইউরোপের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পরে রুবিও বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি আদৌ সম্ভব কি না, আমাদের খুব দ্রুত সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা কয়েক দিন বা সপ্তাহখানেক দেখব, যদি শান্তিচুক্তিতে কোনও অগ্রগতি না হয়, তবে আর আমরা এর মধ্যে থাকব না। অন্যান্য বিষয়ে মনোযোগ দেব।’ সেই সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রসচিবের মন্তব্য, ‘আমরা চাই যুদ্ধটা শেষ হোক। কিন্তু এটা আমাদের যুদ্ধ না।’ ২০১৪ সালে ঝটিকা অভিযান চালিয়ে সামান্য সংঘর্ষের পরে দক্ষিণ ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ মুক্ত করেছিল রুশ সেনা। পরে গণভোট করিয়ে ওই অংশকে আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ ভূখ-ের সঙ্গে যুক্ত করেছিল ভøাদিমির পুতিনের সরকার। সামরিক দৃষ্টিতে ক্রিমিয়ার অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। সেখানকার কৃষ্ণসাগর উপকূলের সেবাস্তিপোল বন্দর শীতের সময়ও সচল থাকে। মূল রুশ ভূখ-ের কোনও বন্দরে সে সুবিধা নেই। সমুদ্র ভেসে আসা বরফের চাঁইয়ের কারণে বছরভর সেগুলি সচল রাখা সম্ভব নয়। সেই সামরিক অবস্থানগত গুরুত্বের কারণে এ বারের যুদ্ধের শুরু থেকেই ইউক্রেনের বাহিনী বারে বারে নিশানা করেছে ক্রিমিয়াকে। এ বার ট্রাম্পের ‘সৌজন্যে’ বৈধতা পেতে চলেছে ক্রিমিয়ার উপের রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ।
এদিকে, ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে অ্যাক্সিওস পোর্টাল জানিয়েছে, ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার ওয়াশিংটনের হুমকির জন্য রাশিয়া নয়, ইউক্রেনের সরকারই দায়ী। ‘দুই ইউরোপীয় কূটনীতিক নিশ্চিত করেছেন যে, মার্কিন পররাষ্ট্রসচিব রুবিও বলেছেন যে ট্রাম্প তার ধৈর্য হারাচ্ছেন এবং শীঘ্রই কোনও চুক্তিতে পৌঁছানো না হলে প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে পারেন,’ পোর্টালটি লিখেছে, ‘তিনজন ইউরোপীয় কূটনীতিক মনে করেন যে রুবিওর মন্তব্য মূলত ইউক্রেনীয়দের লক্ষ্য করে ছিল।’ ‘ইউক্রেন সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র আরও বলেছে যে মনে হচ্ছে রুবিওর মন্তব্য ইউক্রেনকে চাপ দেয়ার লক্ষ্যে ছিল। সূত্রটি আরও উদ্বিগ্ন ছিল যে ট্রাম্প আলোচনা থেকে সরে গেলে ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিত হতে পারে,’ পোর্টালটি উল্লেখ করেছে।
ইউরোপীয় কূটনীতিকরা উল্লেখ করেছেন যে প্যারিসে আলোচনার সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ‘রাশিয়ার উপর চাপ বৃদ্ধির’ কথা উল্লেখ করেননি। ‘ধারণা করা হয়েছিল যে রুবিও এবং উইটকফ ট্রাম্পের কাছ থেকে অনেক চাপের মধ্যে আছেন এবং তারা এটি অন্যান্য খেলোয়াড়দের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন,’ একজন ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেছেন। অ্যাক্সিওসের মতে, রুবিও বলেছেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে ‘তিনি এতে প্রচুর সময় এবং শক্তি ব্যয় করেছেন, এবং বর্তমানে বিশ্বে এমন অনেক কিছু ঘটছে যার উপর আমাদের মনোযোগ দেয়া দরকার।’
‘আমাদের কয়েক দিনের মধ্যে খুঁজে বের করতে হবে …, স্বল্পমেয়াদে এটি সম্ভব কিনা। যদি তা না হয়, তাহলে আমি মনে করি আমরা কেবল অন্য কাজে এগিয়ে যাব,’ শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক আরও যোগ করেন। রুবিও প্যারিসে সাংবাদিকদের বলেন যে, যদি তাৎক্ষণিকভাবে কোনও অগ্রগতি না হয় তবে ট্রাম্প ইউক্রেন সংকট নিরসনের তার প্রচেষ্টা ত্যাগ করতে পারেন। ‘আমরা সপ্তাহ বা মাস ধরে এ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব না,’ তিনি ব্যাখ্যা করেন। সূত্র : রয়টার্স, তাস।
আপনার মতামত লিখুন :