বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীসহ সারাদেশে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ। এরই মধ্যে পুলিশ সদর দফতর থেকে সারাদেশের রেঞ্জ ডিআইজি, মেট্রোপলিটনের পুলিশ কমিশনার ও জেলার এসপিদের সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সাথে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাদের শঙ্কা দেশে নাশকতা সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালাতে পারে দলটি।
রাজধানীসহ দেশের যেকোনো শহরে নাশকা করতে পারে একটি চক্র। শনিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভায় আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী প্রস্তাবও অনুমোদন পায়। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে টানা কর্মসূচি পালন করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ ছাত্র-জনতা। এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল।
সূত্র নিশ্চিত করেছে, সম্প্রতি দেশ ত্যাগ করা সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এবং গ্রেফতারকৃত নারায়ণগঞ্জের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ফেসবুক পোস্টে লেখেন, বিচারিক প্রক্রিয়ায় চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ হওয়াই অধিকতর গ্রহণযোগ্য ও স্থায়ী বন্দোবস্ত এবং তা করার জন্য ছাত্র-জনতার দাবি অনুযায়ী আইসিটি আইনে যাবতীয় সংশোধন করা হয়েছে। তিনি আরো লেখেন, প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নিষিদ্ধ হওয়ার পর গণহত্যাকারীরা সারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে। সবাইকে সতর্ক ও সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ঢাকা এরিয়ার মধ্যে নিষিদ্ধ সংগঠন কোনো ধরনের কার্যক্রম করতে পারবে না। এ জন্য এসপিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদি কেউ করার চেষ্টা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নিষিদ্ধ সংগঠনের কোনো কার্যক্রম ঢাকায় চলবে না। বিগত সময় পুলিশকে জনতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি ঢাকা রেঞ্জের কোনো পুলিশ যদি অনৈতিক বা অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, সংঘবদ্ধ হয়ে আইন-শৃঙ্খলা বিনষ্ট এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টার অভিযোগে ঢাকা মহানগর পুলিশ প্রতিদিনই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ চব্বিশের গণহত্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তিনি জানান, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সর্বদা সজাগ রয়েছে এবং আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় রাজধানীতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জনগণের নিরাপত্তা বিঘিœত করার চেষ্টা করলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্মকমিশনার নাসিরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পর তারা দেশবিরোধী গোপন তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। যারা সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাতে পারে বা নাশকতামূলক ঘটনা ঘটাতে পারে তাদের তালিকা আমাদের হাতে আছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী তালিকা ধরে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। গ্রেফতার কার্যক্রম আরো জোরদার করবো। যেখানেই নাশকতামূলক কর্মকা- হবে সেখানেই আইনের কঠোর প্রয়োগ কররো। নাশকতার পরিকল্পনায় আওয়ামী নেতা-কর্মীরা অনলাইন যোগাযোগ বাড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাইবার স্পেসে আমরা নজরদারি বাড়িয়েছি।
নাসিরুল ইসলাম বলেন, অপতৎপরতা চালিয়ে কেউ পার পাবে না। আমরা সবাইকেই আইনের আওতায় আনবো। ইতোমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগ ও এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঝটিকা মিছিল করেছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা তাদের চিহ্নিত করেছি। সে অনুযায়ী বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। যে কয়টি ঝটিকা মিছিল হয়েছে, সেগুলোর সবক’টি থেকে দুই-একজন করে গ্রেফতার হয়েছে। ঝটিকা মিছিলে নেতৃত্ব দেয়া ও অনলাইনে তৎপরতা চালানোর কারণে আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আলম মুরাদ, সাবেক এমপি শামীমা আক্তার খানম ওরফে শামীমা শাহরিয়ার, সেলিনা ইসলাম, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী প্রেস সচিব মু. আশরাফ সিদ্দিকী ওরফে বিটু এবং কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস ছোবহান ভূইয়া হাসানসহ অনেককেই এরই মধ্যে গ্রেফতার করেছি।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টাকারীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে। এ ধরনের কর্মকা-ে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতেও যদি কেউ দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করে, অবশ্যই পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আইন-শৃঙ্খলাবিরোধী অপতৎপরতা রোধে নিয়মিতভাবে নজরদারি এবং গ্রেফতার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অপতৎপরতা রোধে সাইবার পেট্রোলিং করা হচ্ছে।