আওয়ামীলীগ সুকৌশলে আন্দোলনে ইন্ধন জোগাচ্ছে


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : মে ২৮, ২০২৫, ৮:২০ পূর্বাহ্ণ /
আওয়ামীলীগ সুকৌশলে আন্দোলনে ইন্ধন জোগাচ্ছে
  • ‘‘অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করাই আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য। এই সরকারের বিরুদ্ধে এমন একটি জন-অসন্তোষ গড়ে তোলা হবে যাতে সরকার নিজেই দায়িত্ব ছেড়ে দেয়।’’

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের নজিরবিহীন পতন ঘটে। এরমধ্য দিয়ে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে দেশের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ঢাকার সচিবালয় এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ এর আশপাশে আন্দোলন করে আসছে। এখনো সচিবালয় অঙ্গনে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

সচিবালয়ে সব সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘ঐক্য ফোরাম’ নামক সংগঠনের ব্যানারে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দাবি আদায়ে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য ওইসব আন্দোলনে ইন্ধন জোগানো এবং লোকবল জোগান দেয়ার কাজটি করছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা দল আওয়ামী লীগের অপরিচিত মুখ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবলীগের এক সহসম্পাদক আলাপকালে জানান, আওয়ামী লীগের টার্গেট এখন ক্ষমতা ফিরে পাওয়া নয়। আগের টার্গেট পরিবর্তন করে নতুন টার্গেট নির্ধারণ করে কাজ চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করাই মূল লক্ষ্য এবং এই সরকারের বিরুদ্ধে এমন একটি জন-অসন্তোষ গড়ে তোলা যাতে সরকার নিজেই দায়িত্ব ছেড়ে দেয়।

পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সরকারি-বেসরকারি সব খাতেই ধাপে ধাপে পদে পদে অন্তর্বর্তী সরকারকে অসহযোগিতা করা এবং সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন ও শ্রমিক অসন্তোষের মাধ্যমে দেশে এমন অচলাবস্থা তৈরি করা যাতে অন্তর্বর্তী সরকার সঠিক কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারে। এ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরে এমন পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি করা যাতে অন্তর্বর্তী সরকার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে অন্য কোনো শক্তির কাছে ক্ষমতায় ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নেয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত কিছুদিন ধরে বেশ কয়েকটি আন্দোলন রাজধানীতে মাঠে গড়িয়েছে। ওই আন্দোলন ও ইস্যুতে ঘি ঢেলেছে আওয়ামী লীগের সাইবার যোদ্ধারা। পাশাপাশি তৃণমূল থেকে গা ঢাকা দেয়া অপেক্ষাকৃত কমপরিচিত ও অপরিচিত যেসব আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা ঢাকায় অবস্থান করছেন তারাই মূলত চলমান আন্দোলনে যোগ দিয়ে আন্দোলনের বহর ভারী করছেন এবং পেছনের সারিতে থেকে আন্দোলনে ইন্ধন জোগাচ্ছেন। এ ছাড়াও সচিবালয়ে সব সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘ঐক্য ফোরাম’ নামক সংগঠনের ব্যানারে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছেন, তাদের অধিকাংশই নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের সমর্থিত ও সুবিধাভোগী।

যদিও মূল নেতৃত্ব দিচ্ছেন গণ-অভ্যুত্থানের স্টেক হোল্ডার সমর্থিত দলগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি মো: বাদিউল কবীর বলেন, ‘সরকারি কর্মচারী অধ্যাদেশ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে মিছিল নিয়ে সচিবালয় চত্বরের বাদামতলায় সমবেত হবো।’ এ সময় তিনি সচিবালয়ের বাইরে অন্যান্য সরকারি দফতরেও একই দাবিতে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান।

এর আগেও হঠাৎ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বাতিলসহ ৬ দফা দাবি নিয়ে মাঠে নেমে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ভয়াবহ অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। এর পেছনে ছাত্রলীগের অপেক্ষাকৃত অপরিচিত নেতাকর্মীরা জড়িত ছিলেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসে। তা ছাড়া রেলের কর্মচারীদের আন্দোলন, বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের আন্দোলন, বেসরকারি ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকদের আন্দোলন, আনসার বিদ্রোহ, পোশাক খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের ছক কষলেও তা ব্যর্থ হয়।

সূত্র আরো বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার যখন জুলাই গণহত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করার অংশ হিসেবে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, তখনই দেশে নতুন করে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রতিনিয়ত হাজির হচ্ছেন একেক গ্রুপ। গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে এটা স্পষ্ট যে, এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারা এখন শেখ হাসিনার বিচার বন্ধ করার জন্য সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করার জন্য উসকে দিচ্ছে। আর এটা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে দেশের অভ্যন্তরে আত্মগোপনে থাকা ছাত্রলীগ-যুবলীগের অপেক্ষাকৃত অপরিচিত মুখগুলো।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করছেন- এমন গুঞ্জন ডালপালা মেলেছিল। এরপরই বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ কয়েকটি দল ও সচিবালয়ের আমলাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। সচিবালয় সূত্র বলছে, প্রথম ধাপে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ সামাল দেয়া গেলেও বড় দলগুলোর নির্বাচনী চাপ এখনো কাটেনি। সংস্কার না করেই একটি দল দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এখনো অব্যাহত চাপ দিয়ে যাচ্ছে। ওই দলটির পেছনেও বিদেশী শক্তির ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ওই বিদেশী শক্তির চাওয়া হলো- দেশে এমন একটি অচলাবস্থা তৈরি করা যাতে অন্তর্বর্তী সরকার নিজ থেকেই দায়িত্ব ছেড়ে দেয়। আর অন্য কোনো তৃতীয় শক্তির হাতে ক্ষমতা যাওয়া মাত্রই কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ আবার তাদের স্বনামেই এ দেশে ফিরে এসে নিয়মিত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে অচল করে দেয়ার পরিকল্পনার মিশন বাস্তবায়নে দেশের অভ্যন্তরে চলমান আন্দোলনগুলোতে বড় ধরনের সমাগমে কৌশলে আওয়ামী লীগ তাদের তৃণমূল থেকে লোকবল সাপ্লাই দেয়ার কাজটি করছে।