ছবি - সংগৃহীত
জাতীয় রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে আগামী দু’অর্থবছরে যথাক্রমে ছয় লাখ ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ও ছয় লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এনবিআর থেকে আসবে পাঁচ লাখ ৫৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ১৫ দশমিক দুই শতাংশ বেশি।
পরিকল্পনার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অন্যান্য উৎস থেকে আরো ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আসবে, যা আগের বছরের চেয়ে সাড়ে পাঁচ শতাংশ বেশি। ২০২৬-২৭ অর্থবছরে এনবিআর থেকে ছয় লাখ ৩১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আদায় করা হবে। যা আগের বছরের চেয়ে ১৪ দশমিক এক শতাংশ বেশি। একই সময় অন্যান্য উৎস থেকে ছয় লাখ চার হাজার কোটি টাকা আসবে, যা আগের বছরের তুলনায় পাঁচ দশমিক তিন শতাংশ বেশি।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে এবং ৬১ হাজার কোটি টাকা অন্যান্য উৎস থেকে আদায় করার কথা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক নথিতে বলা হয়েছে, মধ্যমেয়াদে (২০২৬-২৭ অর্থবছর) রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। চলতি বছরসহ তিন বছরে রাজস্ব প্রায় ১৩ শতাংশ বেড়ে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ছয় লাখ ৯৫ হাজার টাকায় পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এনবিআর কর ২০২৪ অর্থবছরে ২৮ দশমিক দুই শতাংশ বাড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে, যা ২০২৫ অর্থবছরে ১৭ দশমিক এক শতাংশ, ২০২৬ অর্থবছরে ১৫ দশমিক দুই শতাংশ এবং অবশেষে ২০২৭ অর্থবছরে ১৪ দশমিক এক শতাংশ বাড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে। নথি অনুযায়ী, রাজস্ব আদায় বাড়ানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধরে রাখতে কর-জিডিপি অনুপাত গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। সরকার কর নীতি ও প্রশাসনকে মাঝারি মেয়াদে কার্যকর ও সহজ করার জন্য যথাযথ পরিবর্তন ও সংস্কার আনার পরিকল্পনা করছে।
কর নিবন্ধন, রিটার্ন দাখিল ও কর প্রদানে জিটালাইজেশন ও অটোমেশনের সুযোগ সম্প্রসারণের মাধ্যমে কর প্রশাসনকে করদাতাবান্ধব ও স্বচ্ছ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন। বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে কর ছাড় দেয়া হচ্ছে তা যাচাই-বাছাই করে যৌক্তিক করা হবে। শুল্ক ও আয়কর সম্পর্কিত আইনগুলো আপডেট করা হয়েছে এবং করদাতা ও ব্যবসাবান্ধব করার জন্য এই আইনগুলোতে আরো সংশোধনী আনা হচ্ছে।
বর্তমানে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল (এমএলটিআরএস) প্রণয়ন করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, যা আগামী পাঁচ বছরে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পথ তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কর ব্যবস্থায় সংস্কারের উদ্যোগের পাশাপাশি, সরকার এনটিআর উৎস থেকে রাজস্ব সংগ্রহের সম্ভাবনা অনুসন্ধানের দিকেও মনোযোগ দিয়েছে। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে তাদের লাভের অংশ সরকারকে দেয়, সেজন্য নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
নথিতে বলা হয়, কর বহির্ভূত রাজস্ব খাতে ফি/হার হালনাগাদ করা, সম্ভাব্য উৎস চিহ্নিত করা এবং এসব উৎস থেকে রাজস্ব আদায়ে মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোকে সংবেদনশীল ও উৎসাহিত করা হচ্ছে। সরকারি সংস্থা প্রদত্ত সরকারি সেবার ফি/হার-সংক্রান্ত ডাটাবেজ এরই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন সেবার ফি বা চার্জ হালনাগাদ করার পাশাপাশি ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম চালু করা হয়েছে। ফলে জনগণ তাদের দোরগোড়ায় বসেই অসংখ্য সেবা গ্রহণ করতে পারবেন, যা মধ্যমেয়াদে এনটিআর সংগ্রহকে উন্নত করবে।
অন্যদিকে ঝামেলাবিহীন আয়কর রিটার্ন দাখিলে উৎসাহিত করতে ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে অবস্থিত আয়কর সার্কেলের আওতাধীন সরকারি চাকরিজীবীদের অনলাইনে আয়কর রিটার্ন (ই-রিটার্ন) দাখিল বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সব তফসিলি ব্যাংক, সব মোবাইল টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, বাটা সু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড, নেসলে বাংলাদেশ পিএলসির মতো কিছু বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
অনলাইনের মাধ্যমে আয়কর রিটার্ন দাখিল ও পরিশোধ প্রক্রিয়া সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে করদাতাদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের ব্যবস্থা উন্মুক্ত করা হয়েছে। স্বতন্ত্র করদাতারা সহজেই তাদের রিটার্ন প্রস্তুত করতে পারেন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট www.etaxnbr.gov.bd ব্যবহার করে অনলাইনে দাখিল করতে পারেন।
এ পদ্ধতি থেকে করদাতারা ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কার্ড পেমেন্ট (ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড) ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কর পরিশোধ ও দাখিল করা রিটার্নের কপি, রশিদ, আয়কর সনদ, টিআইএন সনদের কপি ডাউনলোড ও প্রিন্ট করার সুবিধা পেতে পারেন। এছাড়া যে কেউ পূর্ববর্তী বছরের জন্য দাখিল করা ই-রিটার্ন ডাউনলোড ও প্রিন্ট করতে পারবেন।
ই-রিটার্ন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া এরই মধ্যে করদাতাবান্ধব করা হয়েছে। ই-রিটার্নে সফল নিবন্ধনের জন্য সম্মানিত করদাতার নিজস্ব জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধিত বায়োমেট্রিক সিম প্রয়োজন।
সূত্র : বিবিসি